বীরভূম ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র স্মরজিৎ বসুর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার আরও একধাপ এগিয়ে মৃতের পরিবারের লোকজন দাবি করলেন, বোলপুরের সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের চাপেই পুলিশ তদন্তে গড়িমসি করছে। বৃহস্পতিবার কোচবিহার পাটাকুড়াতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে মৃতের বাবা চন্দ্রনাথ বসু ও মা ইতি বসুকে পাশে বসিয়ে পরিবারের তরফে ওই অভিযোগ তোলা হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও বসু পরিবারের তরফে চিঠি পাঠিয়ে ওই অভিযোগ জানানো হয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠকে স্মরজিতের কাকা বিশ্বজিৎ বসুর অভিযোগ, “সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোম ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক। তাঁর ইশারাতেই ভাইপোকে পরিকল্পিত ভাবে খুনের অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আমাদের আশঙ্কা।” বিশ্বজিৎবাবুর যুক্তি, “ঘটনায় সুনাম ক্ষুণ্ণ হলে আসন্ন ভর্তির মরসুমে অভিভাবকেরা ওই বেসরকারি কলেজে ছেলেদের ভর্তি করতে চাইবেন না। এতে ব্যবসা মার খাবে ভেবেই সিপিএম সাংসদ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।” এ দিন ফোনে নয়া দিল্লি থেকে রামচন্দ্রবাবু অবশ্য বলেন, “পুলিশ তো রাজ্য সরকারের হাতে। ক্ষমতায় এখন তৃণমূল। আমি কী করে পুলিশের উপরে প্রভাব খাটাবো! ওই ঘটনায় আমাকে দোষারোপ করাটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” তিনি আরও বলেন, “ওরা সন্তানহারা পরিবার। তাঁদের ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাঁদের প্রতি আমার সহানুভূতি রয়েছে। আমিও চাই, ওই ঘটনার দ্রুত সত্য উদ্ঘাটন হোক।”
বসু পরিবারের দাবি, গত ৬ মে স্মরজিৎকে খুন করা হয়েছে। সিউড়ি থানায় ১৩ মে মৃতের পাঁচ বন্ধুর নামে অভিযোগ হয়। কিন্তু অভিযুক্তদের পুলিশ এখনও ধরেনি। বীরভূমের এসপি দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া কিছুই করেননি।
বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগ, অভিযুক্তদের পাঁচ জনের ঠিকানা জানতে চাইলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তা জানাতে রাজি হননি। এমনকী ঘটনাটি নিয়ে আরটিআই করে কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চেয়ে চিঠি দিতে গেলেও তাঁরা তা নিতে অস্বীকার করেন। সিউড়ি থানাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার আগেই আইসি জানিয়ে দেন, ময়নাতদন্তে কিছু মেলেনি। অভিযোগ জানিয়ে লাভ নেই। এ দিন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না করা গেলেও সিউড়ি থানার আইসি দেবাশিস ঘোষ বলেন, “আমি কাউকে এ রকম কথা বলিনি। পুলিশ নিজের মতো করে ঘটনার তদন্ত করছে।”
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতেও মৃতের বাবা-মা দাবি করেছেন, ওই কলেজে আগেও বেশ কিছু ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে তা ধামাচাপা দিয়েছে। মৃতের পরিবারের দাবি, স্মরজিৎ পড়াশোনায় ভাল ছিল। ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরিও হয়ে গিয়েছিল। প্রতিহিংসার জেরেই সম্ভবত স্মরজিৎকে খুন করা হয়েছে।
|