পর্যবেক্ষকরাও এ বার নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রক্ষী চাইলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে।
শনিবার শিশির মঞ্চে প্রথম দফার ভোটের ২১০ জন পর্যবেক্ষককে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হয়েছিল। সেখানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেও উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রশিক্ষণের সময়ই বেশ কয়েক জন পর্যবক্ষেক তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। কমিশনের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য যাঁরা রক্ষী চাইবেন, তাঁদের তা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হবে। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলিতে পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তার জন্য রক্ষী দেওয়া হয়েছিল। এ কথা জানিয়ে কমিশন আশ্বস্ত করে পর্যবেক্ষকদের। একই সঙ্গে তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়, কোনও চাপের কাছে তাঁরা যেন নতিস্বীকার
না করেন।
কমিশন এ দিন পর্যবেক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছে, নিজেদের এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল করে বুঝে নিন। প্রয়োজনে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতেও যান। কমিশনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সাধারণত মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার দিন থেকেই পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয় না। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা বলেই আগে থাকতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে ফেলা হচ্ছে বলে কমিশনের বক্তব্য। কমিশনের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখার জন্য প্রত্যেক পর্যবেক্ষককে একটি করে সিম কার্ডও দেওয়া হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করা হলেও সামগ্রিক ভাবে পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে এখনও রাজ্যের কাছ থেকে চিঠি পায়নি রাজ্য। যদিও প্রথম পর্বের ৯ জেলায় মনোনয়নপত্র জমার কাজ ২৯ মে, অর্থাৎ আগামী বুধবার থেকে শুরু হওয়ার কথা বলে কমিশন সূত্রে খবর। সে ক্ষেত্রে ওই দিন থেকেই কমিশন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবে বলেও জানা গিয়েছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, বাহিনী পাওয়া নিয়ে এ দিন বিকেল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে অন্য কোনও রাজ্য থেকে কোনও চিঠি আসেনি। ফলে সোমবারের মধ্যে বাহিনীর ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে রাজ্য সরকার কী জানায়, সে দিকেই এখন তাকিয়ে আছেন সকলে। মহাকরণেরই একটি সূত্র বলছে, এত অল্প সময়ের মধ্যে বাইরের রাজ্য থেকে বাহিনী নিয়ে আসা কার্যত অসম্ভব।
এখন সোমবারেও যদি কমিশনকে বাহিনী নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে না পারে রাজ্য?
কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবীর মতে, আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য যদি অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীর ব্যবস্থা করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে কমিশন ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। কারণ, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার কাজ কমিশনকেই করতে হবে। আর সেই কাজ করতে কমিশন প্রথম থেকেই সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী বা কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে এসেছে।
রাজ্যের বক্তব্য জেনে নিয়ে সোমবার প্রথম দফার ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা কমিশনের। রাজ্যের ব্যবস্থায় কমিশন খুশি হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে জটিলতা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বাহিনীর ব্যবস্থা করতে না পারলে কমিশন কতখানি রাজ্যের সঙ্গে সমঝোতায় যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে এ দিনও সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভোটকে প্রহসনের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিজেই যেখানে নিরাপত্তা চাইছেন, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন, সেটা ভাল ভাবেই বোঝা যাচ্ছে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন, কমিশন তাদের কাছে যত পুলিশ চাইছে, তার ব্যবস্থা তারা করুক। আর কমিশনের কাছে আর্জি, তারা আমাদের জানাক কোথা থেকে কত পুলিশ আসছে।”
|