|
|
|
|
তদন্ত রাজ্যের |
পরপর হুমকি চিঠি মীরাকে, বাড়ছে নিরাপত্তা
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
তাঁর উপরে হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।
সম্প্রতি এমন তিনটি হুমকি-চিঠি পেয়েছেন মীরাদেবী। সেখানে তিনি এবং তাঁর একমাত্র পুত্রের উদ্দেশে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় তিনি যে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, মহাকরণকে পাঠানো চিঠিতে সে কথা জানিয়েছেন মীরাদেবী। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা সেই চিঠিতে এই আশঙ্কার কথা জানানোর পাশাপাশি ওই তিনটি হুমকি-চিঠির প্রতিলিপিও পাঠিয়েছেন তিনি। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকেও বিষয়টি জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। রাজভবনের খবর, হুমকি চিঠির কথা জেনে রাজ্যপাল উদ্বিগ্ন। তিনি সরকারের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলবেন বলে মীরাদেবীকে জানান।
গোটা বিষয়টি নিয়ে অবশ্য সরকার-কমিশন দু’পক্ষই মুখ খুলতে নারাজ। এই নিয়ে শুক্রবার মীরাদেবীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রসচিবকে লেখা চিঠি নিয়ে আমি বাইরে কিছু বলব না।” স্বরাষ্ট্রসচিব কোনও মন্তব্য করতেই অস্বীকার করেন। তবে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিঠিগুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বাসুদেববাবু। মীরাদেবীর নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পঞ্চায়েত ভোটে ভোটার ও প্রার্থীদের উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েনের জন্যই সম্প্রতি রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে গিয়েছেন মীরাদেবী। এখন তাঁর নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এ দিনই মহাকরণে পৌঁছেছে মীরাদেবীর চিঠি। আর তার পরেই তৎপরতা শুরু হয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর ও রাজ্য পুলিশে। প্রাথমিক ভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি কারা দিল ওই হুমকি চিঠি, তাই নিয়েও খোঁজখবর শুরু হয়েছে। প্রশাসনের মতে, রাজ্যের কোনও সাংবিধানিক পদাধিকারীকে এ ভাবে হুমকি চিঠি পাঠানোর ঘটনা নজিরবিহীন। অতীতে কোনও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির আগে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে চিঠি লিখতে হয়েছে কি না, তা-ও মনে করতে পারলেন না মহাকরণের কর্তারা। তাই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা।
কমিশন সূত্রের খবর, মীরাদেবীর উপর হামলা চালানো হবে এই হুমকি দিয়ে পরপর তিনটি চিঠি এসেছে তাদের দফতরে। বিভিন্ন ঠিকানা থেকে পাঠানো চিঠিগুলির বয়ান মোটামুটি ভাবে এক। চিঠিগুলিতে লেখা হয়েছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সিপিএম এবং কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছেন। সিপিএমের হয়ে ‘দালালি’ করছেন। এ ভাবে চললে যে ফল ভাল হবে না, তা-ও বলা হয়েছে চিঠিতে। একই সঙ্গে হুমকি দেওয়া হয়েছে, মীরাদেবী যে ভাবে ভোট পরিচালনার কথা বলছেন, সে জন্য তাঁকে মজা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। চিঠিতে মীরাদেবীর একমাত্র পুত্রের কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁর পুত্র সিপিএমের সঙ্গে নানা কারবারে যুক্ত বলে চিঠির বক্তব্য। তাই তাঁকেও নিশানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে চিঠিতে। প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য জানান, কমিশনারের পুত্র তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে কর্মরত।
কমিশনের এক কর্তা জানান, অত্যন্ত অবমাননাকর এই ধরনের চিঠিগুলিকে প্রথমে আমলই দিতে রাজি চাননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে পরপর তিনটি প্রায় একই ধরনের চিঠি পেয়ে বিষয়টি আর উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি। পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করার ব্যাপারে প্রথম থেকেই ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার উপরে জোর দিয়েছেন মীরাদেবী। কমিশনের বক্তব্য, সে জন্য তিনি কমপক্ষে তিন দফায় এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করার কথা বলেছেন বারবার। রাজ্যের সঙ্গে কমিশনের টালবাহানায় জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এই ঘটনায় শাসকদলের তরফে কয়েক জন নেতা তাঁর বিরুদ্ধে প্রচার করেছেন যে, তিনি
ঠিক সময়ে ভোট করাতে চাইছেন না। ক্রমাগত মাঠে-ময়দানের এই আক্রমণাত্মক বক্তৃতা শোনার পরে এবং তার পরে হুমকি চিঠি পেয়ে মীরাদেবী আর বিষয়টিকে লঘু করে দেখতে চাইছেন না বলেই কমিশন সূত্রের খবর।
মহাকরণের এক কর্তার বক্তব্য, চিঠিগুলি পড়ে মনে হয়েছে বেনামে লেখা। কারণ, একটি চিঠির প্রেরকের নাম ও ঠিকানা দেখে সেইমতো
খোঁজ করতে গিয়ে যায় সে সব ভুয়ো। বাকি দু’টি চিঠির প্রেরককেও খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। মীরাদেবীর নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে তাঁর গাড়িতে অশোকস্তম্ভ লাগানো নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। শেক্সপিয়ার সরণি থানায় এই নিয়ে একটি মামলাও হয়। সেই অশোকস্তম্ভ অবশ্য খুলে নেওয়া হয়েছে। তবে মামলা চলছে।
সূত্রের খবর, মীরা পাণ্ডে মহাকরণকে জানিয়ে দিয়েছেন, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের পরিস্থিতি এক নয়। ফলে ভোট পরিচালনায় কোনও শিথিলতা দেখানো যাবে না। রাজ্যকে তিনি আরও জানিয়েছেন, কোনও একটি স্থানে ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে ভোটে প্রার্থী হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সেই কেন্দ্রের ভোটই স্থগিত করে দেবেন। কারণ, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্যই কাজ করছেন। মীরাদেবীর এই কঠোর অবস্থান যাঁদের পছন্দ হচ্ছে না, তাঁরাই এমন হুমকি চিঠি পাঠাচ্ছেন বলে সরকারি
কর্তাদের মত।
|
পুরনো খবর: রাজ্যের প্রস্তাব খারিজ মীরার |
|
|
|
|
|