|
|
|
|
|
চ্যানেল চালাতে পারে না
রাজ্য সরকার, বলল কেন্দ্র
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
|
অস্তিত্বের সঙ্কটে থাকা তারা নিউজ ও তারা মিউজিক চ্যানেল অধিগ্রহণের পরিকল্পনায় এগোনোর আগেই ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার।
কোনও রাজ্য সরকার এ ভাবে কোনও টেলিভিশন চ্যানেল চালাতে বা অধিগ্রহণ করতে পারে না বলে আগেই স্পষ্ট মত ছিল টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই-এর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার কথা জেনে শুক্রবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকও জানিয়ে দিল, বর্তমান নীতি ও নিয়মে এমন কাজ সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, “দু’টি চ্যানেল অধিগ্রহণের লক্ষ্যে যে পদক্ষেপ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, তা বর্তমান লাইসেন্স নীতির পরিপন্থী। নিয়ম অনুযায়ী কোনও রাজ্য সরকার কোনও চ্যানেল শুরু করতে পারে না।” এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব উদয় কুমার বর্মারও বক্তব্য, “সম্প্রচারের বিষয়টি কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনও চ্যানেল শুরু করার ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ার কেন্দ্রেরই। কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বলেই কোনও রাজ্য আইন করে বা বিধানসভায় অর্ডিন্যান্স পাশ করিয়ে চ্যানেল শুরু করতে পারে না।” তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের আরও বক্তব্য, চ্যানেল অধিগ্রহণ বা মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও অনেক জটিলতা রয়েছে। এই ব্যাপারে কেন্দ্রের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের ছাড়পত্র প্রয়োজন।
তবে মন্ত্রকের তরফে এ-ও বলা হয়েছে, ওই চ্যানেল দু’টির কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য রাজ্য আর্থিক সহায়তা করতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতির প্রয়োজন নেই। কর্মচারীদের কল্যাণের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার এ দিনই পদক্ষেপ শুরু করেছে। তারা চ্যানেলের কর্মীদের ১৬ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরের মাসেও এ রকম অনুদান (এক্স গ্রাশিয়া) সরকার দেবে কি না, এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি অর্থ এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের বিবেচনাধীন। আইনটাও ওই দুই দফতরই তৈরি করবে। আমরা শুধু খসড়া তৈরি হলে তা খতিয়ে দেখব।” যদিও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, “এক্স গ্রাশিয়া দেওয়া যায় সরকারি কর্মচারীদের। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা এ ভাবে কোনও সংস্থার জন্য দেওয়া যায় কি?”
বস্তুত, সূর্যবাবুর আরও প্রশ্ন, “আমাদের কাছে বড় নীতিগত প্রশ্ন হল, ওই দু’টি চ্যানেল-সহ ১৩টি সংবাদমাধ্যমের মালিকানা সারদা গোষ্ঠীর হাতে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এসেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। লক্ষ কোটি মানুষের সঙ্গে যারা প্রতারণা করেছে, তাদের সাহায্য করার জন্য জনগণের করের টাকা ব্যবহার করা হবে?” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম আরও প্রশ্ন তুলেছেন, সুদীপ্ত সেন পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সারদা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন দু’টি পত্রিকা কী করে হাত বদল হল? সেলিমের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই কাগজ ও চ্যানেলগুলির মাধ্যমে সরকার প্রচার চালাতে চায়। সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআরটি করেছিলেন তারা টিভির কর্মীরাই। সেলিম জানান, অধিগ্রহণের শর্ত হিসেবে কর্মীদের সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে সরকার।
তারার দু’টি চ্যানেল চালানোর দায়িত্ব কেন রাজ্য নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছে, কেনই বা ওই গোষ্ঠীর ১৩টি সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দু’টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে, এই যাবতীয় প্রশ্নের স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা এখনও অমিল। রাজ্য মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্যই এই বিষয়ে বিশেষ অবহিত নন, তাঁরা মুখও খুলছেন না। তবে নীতিগত প্রশ্ন সরিয়ে রাখলেও আইনি যুক্তিতেই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত আটকে যাচ্ছে বলে প্রশাসনিক মহলের মত। ট্রাই ২০০৮ সালেই তাদের মত স্পষ্ট করে দেওয়ার পরেও পঞ্জাব, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য সরকারের তরফে চ্যানেল চালু করতে চেয়ে একাধিক আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু গত ডিসেম্বরে ট্রাই ফের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকার বা কোনও রাজনৈতিক দলকেও চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
রাজ্য সরকারের নিজস্ব চ্যানেল চালুর উদ্যোগ অবশ্য এ রাজ্যেও আগে হয়েছিল। বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলেছিলেন। কিন্তু বাম সরকার তা নিয়ে হইচই করেনি, কেন্দ্রের আপত্তির কথা জেনে আর এগোয়ওনি। তারও আগে রাজ্যের হাতে চ্যানেলের দাবিতে বামেরাই এক বার আন্দোলনে নেমেছিল। যদিও তার প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “তখনও প্রসার ভারতী চালু হয়নি। দূরদর্শনের একটাই চ্যানেল। তাকে ‘রাজীব দর্শন’ (প্রধানমন্ত্রী তখন রাজীব গাঁধী) বলা হত! দূরদর্শনের দ্বিতীয় চ্যানেল চালু হলে সেটা রাজ্যকে দেওয়ার দাবিতে ১৯৮৭-র এপ্রিলে আমরা কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের সামনে অবস্থানে বসেছিলাম। কেন্দ্র অবশ্য দাবি মানেনি।” সিপিএম নেতৃত্বের মতে, সেই দাবির সঙ্গে অন্য সংস্থার চ্যানেল অধিগ্রহণের সম্পর্ক ছিল না। তবু সেই অতীত সম্পর্কে খবর রাখলে মমতাকে এখন চ্যানেল চালানোর ঘোষণা করে বিব্রত হতে হত না বলে তাঁদের কটাক্ষ।
|
পুরনো খবর: তারা চ্যানেলের দায়িত্ব নেবে রাজ্য, মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে প্রশ্ন |
|
|
|
|
|