কোন দলের হাত ধরে কী ভাবে সুবিধা পাওয়া যাবে, সেই নির্বাচনী অঙ্ক ছেড়ে বামপন্থীদের ‘পরিশুদ্ধ’ হওয়ার দিকে মনোযোগী হতে পরামর্শ দিলেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা অশোক মিত্র। তাঁর মতে, দেশের প্রধান শাসক ও বিরোধী দল সমান দুর্নীতিগ্রস্ত। আঞ্চলিক দলগুলিও একই দোষে দুষ্ট। ক্ষমতায় গিয়ে বামপন্থীদের মধ্যে আদর্শচ্যুতি ঘটলেও এই পরিস্থিতিতে তাদের সামনে ‘বিকল্প’ হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে বলে অশোকবাবু মনে করছেন। তবে সেই লক্ষ্যে নিজেদের ত্রুটি সংশোধনে মন দিতে হবে এবং অন্যান্য দলের হাত ধরার ভাবনায় মগ্ন হয়ে থাকলে চলবে না।
আগামী লোকসভা নির্বাচনের পরে সরকার গড়ার প্রশ্নে ফের প্রয়োজনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সম্ভাবনা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে যখন ভাবনাচিন্তা জারি রয়েছে,
সেই সময়েই অশোকবাবু প্রকাশ কারাটদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর প্রণব মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস-মনোনীত রাষ্ট্রপতি-প্রার্থী হিসাবে আলিমুদ্দিনের সমর্থন চাওয়ার পরে অশোকবাবুই মন্তব্য করেছিলেন, যে আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে বামেরা লড়াই করছে, তারই প্রতিভূর পাশে দাঁড়ানো ঠিক হবে না। প্রবীণ নেতার পরামর্শ উড়িয়ে বামেরা অবশ্য প্রণববাবুকেই ভোট দিয়েছিল। |
ইন্দুমতী সভাগৃহে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের অশোকবাবু তাঁর বার্তা পেশ করে রাখলেন বামেদের জন্য। যাদবপুরের ইন্দুমতী সভাগৃহে সৌরীন ভট্টাচার্য স্মৃতিরক্ষা কমিটির আয়োজনে যে বক্তৃতায় বুধবার অশোকবাবু ওই বার্তা দিয়েছেন, তার আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন মিহির বন্দ্যেপাধ্যায়, সর্বাণী ভট্টাচার্যের মতো আরএসপি নেতা-নেত্রীরা। বাম শরিক দল হিসাবে যারা কংগ্রেসের সঙ্গে বিশেষ সখ্যের পক্ষপাতী নয়।
বামপন্থীদের আদর্শচ্যুতির কথা ইতিপূর্বে অনেক বারই বলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোকবাবু। সেই সুরেই এ দিন দুর্নীতির প্রশ্নে বামপন্থীদের পুরো শংসাপত্র দিতে চাননি তিনি। বলেছেন, দেশের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ২০-২৫ বছর আগে হলে লোকে বামপন্থীদেরই বিকল্প মনে করত। কিন্তু তাঁর কথায়, “বামপন্থীদের প্রতি মানুষের সেই শ্রদ্ধা, সেই আস্থা গত ১৫ বছরে অনেকটাই খসে পড়েছে। বামপন্থী আন্দোলন তার ওজস হারিয়েছে। তার জন্য খানিকটা দায়ী বিশ্বায়ন। কিন্তু আর একটা কারণ, ক্ষমতায় গিয়ে আদর্শ বিচ্যুতি ঘটেছে। বামপন্থীরা যদি টাকার লোভে এ দিক-ও দিক করেন, তার পরিণাম যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে!” একই সঙ্গে ছিয়াশি বছরের অশোকবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, “কোনও একটি দলকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যারা ক্ষমতায় গিয়েছে, তারা সকলেই কোনও না কোনও ভাবে এই কাজ করেছে।”
এতদসত্ত্বেও অশোকবাবু মনে করছেন, বামপন্থীদের সামনে প্রকৃত বিকল্প হয়ে ওঠার সুযোগ এখনও আছে। ভবিষ্যতে থাকবে কি ন, তা অবশ্য তিনি হলফ করে বলতে পারছেন না। একটি অংশ আদর্শচ্যুত হয়ে পড়লেও বামপন্থী আন্দোলন যে হেতু এখনও মূলত আদর্শের উপরেই দাঁড়িয়ে, তাই তা নিয়ে আশাবাদও থাকছে বলে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মত। অশোকবাবুর কথায়, “পরিশুদ্ধ হয়ে, জনগণের মঙ্গল-চিন্তা নিয়ে বামপন্থীরা যদি তদগত চিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, তা হলে এখনও সুযোগ আছে। আর যদি কোন দলে ভিড়ি, তাতে আগামী নির্বাচনে কী সুবিধা পাই, এই সঙ্কীর্ণ গণিত-চিন্তাই যদি ভাবি, তা হলে রবীন্দ্রনাথ তুলে বলতে হবে ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার!”
|