দলের অন্দরে যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পুরোদমে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারের পঞ্চায়েত ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে দলীয় নেতাদের মাধ্যমে মমতা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত মিটলেই লোকসভা ভোট। পঞ্চায়েত ভোটেরই প্রতিফলন হবে লোকসভা ভোটে। সেই কারণেই, সমস্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াইতে নামতে হবে।
দলে কোনওরকম অন্তর্দ্বন্দ্ব রাখা চলবে না বলে মমতা নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূল অন্দরের খবর, যে সমস্ত জেলায় অন্তর্দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছে, সেখানকার নেতাদের দলের শীর্ষ নেতারা বলে দিয়েছেন, “মনোমালিন্য আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখুন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইতে নামুন।”
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার ও সাংগঠনিক কাজের জন্য তৃণমূল নেত্রী ইতিমধ্যেই জেলাওয়ারি বিশেষ কমিটি গড়ে দিয়েছেন। সেই কমিটিগুলির সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই বিভিন্ন নেতা বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন। বস্তুত, নেত্রীর নির্দেশ মেনেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বিভিন্ন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন। পার্থবাবু জানিয়েছেন, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীও তাঁদের দায়িত্বে থাকা জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন।
হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন মিটলেই মমতা পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নেমে পড়তে চান। প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে, ১৭টি জেলায় অন্তত ২টি করে তিনি জনসভা করবেন। কিন্তু বুধবার মুকুলবাবু বলেন, “কোথায়, কবে, ক’টা সভা করবেন তার সিদ্ধান্ত মমতাদি নিজেই নেবেন। তবে দলের তরফে আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছি, তাঁর পক্ষে যতটা সম্ভব জেলা সফরে সময় দেওয়ার জন্য।” সারদা-কাণ্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল-সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা যে প্রচার শুরু করেছে তার মোকাবিলা করতে দলনেত্রী নিজেই সেনাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, মানুষের কাছে গিয়ে বাংলার উন্নয়নে, বিশেষত গ্রামের মানুষের জন্য তাঁর সরকার কী কী কাজ করেছে মমতা নিজে তা বলতে চান।
উন্নয়নই যে তাঁদের মূল হাতিয়ার তা এ দিন বিধানসভায় তাঁর কক্ষে হুগলির তৃণমূলের ১৬ জন বিধায়ক এবং দুই সাংসদকে নিয়ে বৈঠকে জানিয়েছেন পার্থবাবু। বৈঠকের পরে পার্থবাবু বলেন, “আমরা মানুষের কাছে দলের যেমন ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতে চাই, তেমনই দলের স্থানীয় নেতাদের বলেছি, যেখানে এত দিন বামফ্রন্ট বা সিপিএম পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছে সেখানে কী কাজ হয়েছে তার খতিয়ান মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আবার যেখানে আমরা পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছি, সেখানে কী কাজ করেছি আর কী করতে পারিনি এবং কেন পারিনি তা মানুষকে জানাতে বলেছি।”
আসলে পার্থবাবুরা পঞ্চায়েত ভোটে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চান। এই প্রসঙ্গে মুকুলবাবু জানিয়েছেন, রাজ্যে মোট ভোটারের ৮০%ই গ্রামের মানুষ। লোকসভা ভোটের ফল অনেকটাই
গ্রামের মানুষের সমর্থনের উপরই নির্ভর করবে। সেই কারণে তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাঁকুড়ার বিধায়কদের নিয়ে এ দিন বৈঠক করেছেন মুকুলবাবু।
ইতিমধ্যে নদিয়ার নেতাদের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছেন।
বৈঠকের পাশাপাশি বিরোধীদের প্রচারের পাল্টা প্রচারের জন্য পার্থবাবুরা পুস্তিকা প্রকাশের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতার তালিকা দিয়ে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস ‘একটি দিশাহীন যাত্রা’ বলে পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। পার্থবাবু এ দিন জানান, কংগ্রেসের ৪০ পৃষ্ঠার পুস্তিকার জবাব দিতে দু-একদিনের মধ্যেই তৃণমূলের পুস্তিকা প্রকাশ করা হবে। |