সিএজি-কে নয়া উচ্চতায় তুলে বিদায় রাইয়ের
প্রতিষ্ঠানের বয়স ১৫৩ বছর। তাঁর আগে আরও ৩০ জন দেশের সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসেব পরীক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু আজ বিকেলে বিনোদ রাই যখন দিল্লির ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ বা সিএজি-র দফতর ছেড়ে শেষ বারের মতো বেরিয়ে গেলেন, দফতরের সকলেই একমত, সিএজি-র সংজ্ঞাটাই নতুন করে লিখে দিয়ে গেলেন তিনি।
শুরু হয়েছিল কমনওয়েল্থ গেমস দিয়ে। তার পরেই টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন। ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা তার আগে এ দেশে শোনা যায়নি। সেখানেই না থেমে কয়লা খনি বণ্টনে আরও বড় অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন বিনোদ রাই। সিএজি-র এক একটা রিপোর্ট সংসদে কার্যত বোমার মতো আছড়ে পড়েছে। দুর্নীতির আতঙ্কে একটা সময় থেকে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন মন্ত্রী-আমলারা। ‘নীতিপঙ্গুত্ব’-এ অভিযুক্ত হয়েছে ইউপিএ-সরকার।
পাল্টা আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে বিনোদ রাইকে। সিএজি-র অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রীরা। বলেছেন, আয়-ব্যয়ের হিসেব পরীক্ষা বাদ দিয়ে সরকারের নীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে সিএজি। অবসরের পরে বিনোদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু বিনোদ রাই নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বলেছেন, সিএজি-র যা কাজ, সেটাই করেছেন।
দফতর ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন বিনোদ রাই। ছবি: পি টি আই।
কাল নতুন সিএজি হিসেবে শশীকান্ত শর্মা শপথ নেবেন। এত দিন প্রতিরক্ষা সচিবের পদে ছিলেন তিনি। আজই বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, শশীকান্তকে সিএজি-র পদে বসানো মনমোহন-সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার আর একটা চেষ্টা। অরুণ জেটলির বক্তব্য, “প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল অর্থের কেনাবেচা হয়। এত দিন যিনি নিজেই এই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনিই এ বার তার ভুলত্রুটি ধরবেন কী করে?” জেটলির ইঙ্গিত ছিল, অগাস্টা-ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার কেলেঙ্কারি দিকে।
যে সরকার তাঁকে নিয়োগ করেছে, তাঁর রিপোর্টে সেই সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলব না এই প্রচলিত ধারণাটাই ভেঙে দিয়েছিলেন বিনোদ। খানিকটা মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার হয়ে টি এন শেষনের মতো। আবার বিনোদের নিন্দুকরা বলছেন, তিনি সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়োনোর চেষ্টা করেছেন। বিরাট অঙ্কের আনুমানিক ক্ষতি দেখিয়ে চটকদারি রিপোর্ট তৈরি করেছেন। তার পর ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। বিশেষ করে তাঁর টু-জি স্পেকট্রাম দুর্নীতির রিপোর্ট নিয়ে অভিযোগ হল, সে সময় সস্তায় মোবাইল পরিষেবা দেওয়াটাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল। আয় নিয়ে মাথা ঘামানো হয়নি। আজও কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বলেছেন, “তিনি দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাল্পনিক ক্ষতির অঙ্ক তুলে ধরায় ভারতের আর্থিক উন্নয়নের ছবিটাও ধাক্কা খেয়েছে।” বিনোদ রাই নিজে অবশ্য এর কোনওটাই মানতে নারাজ। তাঁর মতে, অনেক কিছুই সময়ের উপর নির্ভর করে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ে অসন্তোষ ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয় অণ্ণা হজারের অনশন-আন্দোলন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নামে। সমাজে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেই সময়েই সিএজি-র রিপোর্ট আসায় তার প্রভাবটাই অন্য রকম হয়। বিনোদ রাই যুক্তি দিচ্ছেন, সরকারের একটা বড় অংশ তাঁর রিপোর্টকে ইতিবাচক সমালোচনা হিসেবে নিতে পারেননি। সিএজি যে সরকারেরই অংশ, সেটা ভুলে গিয়ে সিএজি-কেও বিরোধী শিবিরে ফেলে দিয়েছেন। নিজের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনাও উড়িয়ে দিয়েছেন বিনোদ।
প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করায় ৬৫ বছরেও ছিপছিপে চেহারা। পোষা অ্যালসেশিয়ানের সঙ্গে দৌড়োদৌড়ি করেন। মাঝেমধ্যেই পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে চলে যান। আজই ছিল সিএজি পদে তাঁর শেষ দিন। বিকেল চারটেয় বিনোদ যখন দফতর ছেড়ে বেরোচ্ছেন, সাধারণ কর্মীরাও বাইরে এসে ভিড় জমিয়েছিলেন। রাই সাংবাদিকদের বলেন, “আপনাদের জন্যই এই প্রতিষ্ঠান স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পেরেছে। আশা আপনাদের সমর্থন বজায় থাকবে।” বিনোদ রাইয়ের জায়গায় শশীকান্ত শর্মাকে বসিয়ে ইউপিএ-সরকার সিএজি-কে লাগাম পরাতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠলেও, সিএজি-র কর্তারা মনে করছেন, বিনোদ রাই সিএজি-কে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, সেখান থেকে খুব সহজে কারও পক্ষে নেমে আসা সহজ নয়। আবার বিনোদ রাইয়ের উচ্চতায় পৌঁছনোও কঠিন। আর নিত্য আতসকাঁচের নীচেয় থেকে সেটাই পরীক্ষা হবে শশীকান্তের।

পুরনো খবর




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.