|
|
|
|
রাজ্যের নাম বিহার |
ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মাসকাবারি বরাদ্দই নিয়ম
স্বপন সরকার • পটনা |
রাজ্যের যা পরিস্থিতি, তাতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া গতি নেই। অথচ মন্ত্রী থেকে বিধায়ক, এমনকী বিত্তবান মানুষদের মধ্যেও যে ভাবে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে চলাফেরার প্রবণতা বাড়ছে তাতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
ভিআইপি বা সম্পন্ন মানুষদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে ঘোরাফেরার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার একবার বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তাতেও যে পরিস্থিতি বদলায়নি তা বোঝা গিয়েছে এই খাতে সরকারি খরচের বহর দেখে। মন্ত্রী, বিধায়ক বা নানা স্তরের আধিকারিকদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগার থেকে ১৭০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে প্রতি বছর। এর সঙ্গে আছে সম্পন্ন মানুষের জন্য নিরাপত্তা। বিহারে এঁদের নিরাপত্তা দিতে রাজ্যের ৬০ হাজার পুলিশের মধ্যে ৫ হাজার কেবল যুক্ত আছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজে। তার খরচ ওই বিত্তবানরাই দেন।
রাজ্যে সংগঠিত অপরাধ, বিশেষ করে অপহরণের যা রমরমা, তাতে রাজ্যের ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া থাকতেই ভয় পান। পটনার একটি বড় মাপের হোটেল ব্যবসায়ীর সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষীকে ঘুরতে দেখে প্রশ্ন করাতে তিনি বলেছিলেন, “নিরাপত্তা কোথায়? নেতাদের সঙ্গে আমরাও তো টার্গেট।”
লালু-রাবড়ী জমানার পরবর্তী পরিস্থিতি তুলনায় অনেকটাই ভাল বলে মেনে নিয়েও বছর চল্লিশের এই ব্যবসায়ী কিন্তু সরকার নির্ধারিত নূন্যতম অঙ্কে ২৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে নিরাপত্তা রক্ষীর বেতনের জন্য ধরে রাখেন। এটা যে এই রাজ্যে ব্যবসা করার জন্য সরকারি ভাবে অতিরিক্ত খরচ তা মেনে নিয়েই তাঁর মন্তব্য, “বেঁচে থাকতে গেলে নিরাপত্তার তো প্রয়োজন। পরিস্থিতি যতই ভাল হোক, সরকার এখনও সাধারণ মানুষকে তেমন ভাবে নিরাপত্তা দিতে পারেনি।” বিহারে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মায় সাধারণ মানুষ অপহরণ, তোলা আদায়, খুনের মতো ঘটনা নিয়ে এখনও দিন কাটায়। পটনার এক বড় ঠিকাদারও মাসে সরকার নির্ধারিত টাকা দিয়ে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়েই ঘোরাফেরা করেন। উল্লেখ্য, গত বছর এক ঠিকা মাফিয়ার লোকজনের হাতে কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসের মধ্যেই খুন হতে হয়েছিল এক ঠিকাদারকে।
নিরাপত্তার এমন বহর দেখেই বোধহয় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এক অনুষ্ঠানে এসে বলেছিলেন, “নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে ঘোরা যেন ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হয়ে পড়েছে।” কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে মুখ্যমন্ত্রীর এই কথায় কেউ আশ্বস্ত তো হতে পারেননি, উল্টে নিরাপত্তা রক্ষী রাখার বহর যেন বেড়েই চলেছে। কেবল ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে সরকারি তহবিল থেকে এত টাকা বছরে খরচ হয়ে গেলেও হোলদোল নেই কোনও রাজনৈতিক দলেরই।
এতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার বাস্তব চিত্রটা কি স্পষ্ট হচ্ছে না? ডিজিপি অভয়ানন্দ বলেন, “এই নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।” এডিজি (সদর) রবীন্দ্র কুমার বলেন, “রাজ্য জুড়ে ৩০ জনের মতো বিত্তবান মানুষ নিরাপত্তা রক্ষী নিয়েছেন। এর জন্য সরকারকে তাঁদের টাকা দিতে হয়। নূন্যতম ২৫ হাজার টাকা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অঙ্কটা আরও বেশি।”
কাদের, কেমন নিরাপত্তা দেওয়া হয়? পুলিশের একটি হিসেব বলছে, আগে বিধায়ক পিছু একজন নিরাপত্তা রক্ষী থাকতেন। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বিজেপি-র বিধায়ক রাজকিশোর কেশরী পূর্ণিয়ায়, নিজের বাড়িতে খুন হওয়ার পরে আতঙ্ক যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই সব ভিআইপিদের। এরপর তাঁদের দাবি মেনে বিধায়ক পিছু তিনজন করে পুলিশ নিয়োগ করা হয় নিরাপত্তার জন্য। যুক্তি দেখানো হয়, একজন পুলিশ কর্মীর পক্ষে ভিআইপিকে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেওয়া সম্ভব না। দাবি ওঠে ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা রক্ষীর। সেই দাবি মেনে তিনটি শিফ্টে ভাগ করে দেওয়া হয় তিন জন কার্বাইন ধারী পুলিশকে। ফলে যা ছিল এক, তা বেড়ে দাঁড়ালো তিনে।
বিধায়কদের পরে আছেন মন্ত্রীদের মতো ভিআইপিরা। তাঁদের জন্য বরাদ্দ তিন জন সশস্ত্র কনস্টেবল ও একজন করে এএসআই বা এসআই পদমর্যাদার অফিসার। এরপরের তালিকায় আছেন জজ থেকে শুরু করে সাংবিধানিক কোনও কমিটির কর্তাদের নিরাপত্তাও। রাজ্যে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর জন্য জেড্ প্লাস নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। তার জন্য এক ব্যাটেলিয়ন পুলিশ সব সময় মোতায়েন রাখা আছে। এর সঙ্গে থাকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ এবং জেলা পুলিশের একটি দল।
কাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে বা হবে না তা ঠিক করাতে জেলাস্তরে সরকারের একটি কমিটি আছে। তাদের কাছে আবেদন জানাতে হয়। কমিটিতে আছেন জেলা জজ, পুলিশ সুপার-সহ কয়েকজন। এই কমিটির পর্যালোচনার পর নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে সুপারিশ পাঠায় পুলিশের সদর দফতরে। এখনও সারা রাজ্যে প্রায় ২০টি আবেদন পত্র ঝুলে রয়েছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “এই রাজ্যে নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে সরকারের কার্পণ্য নেই। রক্ষী দেওয়ার ব্যাপারে কোনও রাজনীতিও নেই।” |
|
|
|
|
|