সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারির তদন্তে গঠিত কমিশন সর্বস্বান্ত পরিবারগুলিকে টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে কি না, সব স্তরেই এই প্রশ্ন উঠেছে। সেই সংশয়ের মধ্যেই গরিব আমানতকারীদের স্বস্তি দিতে শ্যামল সেন কমিশন একটি ‘স্কিম’ বা প্রকল্প তৈরি করতে চলেছে।
|
শ্যামল সেন |
সোমবার কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্কিমে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের। হতদরিদ্র ওই সব আমানতকারীর টাকা প্রাথমিক ভাবে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা ৫০০ কোটি টাকার তহবিল ব্যবহার করার সুপারিশ করবে কমিশন। সেই সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় যে-সব কর্মী কয়েক মাস কাজ করার পরে বেতন পাননি, তাঁদেরও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে কমিশন।
সারদায় টাকা রেখে যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের সাক্ষ্য নিতে গিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে কমিশনের সদস্যদের। কমিশনের এক সদস্যের কথায়, “কারও কারও কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।” তার পরেই কমিশন ওই ‘স্কিম’-এর কথা ভাবতে শুরু করে।
কমিশনের এক পদস্থ কর্তা জানান, গরিব আমানতকারী ও সারদার বেতনভুক্ত কর্মীদের অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গটি কমিশনের বিচার্য বিষয়ের মধ্যেই রাখা হয়েছে। স্কিমে সেই দিকটাই বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই এই ধরনের সুপারিশই প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। যদিও ওই স্কিম রূপায়ণের ব্যাপারে সরকারের অনুমতিই শেষ কথা বলে মনে করছে কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি শ্যামল সেন বলেন, “অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দেওয়ার আগে ওই স্কিমের বিষয়টি চূড়ান্ত করার কথা ভাবা হয়েছে।” তিনি জানান, মানুষের দুর্দশার কথা ভেবেই সরকারি বিজ্ঞপ্তির আগেই প্রায় চার হাজার আমানতকারীর আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে কমিশনে। সেই সব আবেদনের ভিত্তিতে এখন শুনানি পর্ব চলছে। তিনি বলেন, “এ দিন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের শুনানি হয়েছে। জুনের প্রথম দিকে ওই চার হাজার আবেদনকারীর শুনানি শেষ হলে এই স্কিম নিয়ে আলোচনা করা হবে।”
কমিশনের সচিব মিহির ভট্টাচার্য জানান, রাজ্যের অন্য দু’টি কেন্দ্রে এ দিন পর্যন্ত চার লক্ষ ৩৬ হাজার আমানতকারীর অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। ওই সব আবেদন দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করে কম্পিউটারে তোলা হচ্ছে। শ্যামলবাবু বলেন, “আবেদনকারীরা হয় পর্যটন ব্যবসায় অথবা সারদা রিয়েলটি অর্থাৎ জমি-বাড়ির ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এখন কম্পিউটারে এই দু’ধরনের বিনিয়োগকারীকে পৃথক করা হচ্ছে।”
সারদায় বিনিয়োগকারীদের কত টাকা পাওনা, কমিশন তার হিসেব এখনও করে উঠতে পারেনি। শ্যামলবাবু জানান, সারদার মোট দায় কত, তা ঠিক করতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের একটি প্যানেল তৈরি করা হবে। ওই সংস্থার কত সম্পত্তি আছে, তা জানতে চাওয়া হবে পুলিশের বিশেষ তদন্ত দলের কাছে।
কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক আবেদন খতিয়ে দেখার জন্য কমিশনকে কী ধরনের পরিকাঠামো দিয়েছে সরকার?
কমিশন সূত্রের খবর, এখন কমিশনে জনা পঁয়ত্রিশ কর্মী রয়েছেন। কাজ চালানোর জন্য আরও কর্মী দরকার। রাজ্য সরকার পাঁচ সদস্যের কমিশন গড়লেও এখনও দু’টি সদস্য-পদে নিয়োগই হয়নি। এই অবস্থার পরিবর্তন না-হলে দ্রুত এই কাজ করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন কমিশনের কর্তাদের একাংশ।
|
অভিযোগপত্র
(২০ মে পর্যন্ত)
|
• রাজারহাটে ৪,১৪,১৮০
• শিলিগুড়িতে ২১,৬৮৬
• কমিশনের দফতরে ৪,২০০
•
মোট ৪,৪০,০৬৬ |
(ডাক, মেলের হিসেব ধরা হয়নি) |
|