সরকারি ভাবে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। বারাসত-ব্যারাকপুর মহকুমায় ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে বলে দাবি করলেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। দুই মহকুমার চাষিরাও বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে চাষে তাঁরা উপকৃত হয়েছেন।
বারাসত-ব্যারাকপুর মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মরসুমে দু’টি মহকুমায় ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে দু’হাজার হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ৭০০ হেক্টর জমিতে কৃষি দফতর নিজেদের উদ্যোগে চাষ করিয়েছেন। গত বছর দুই মহকুমায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ওই পদ্ধতিতে চাষ হয়েছিল। মহকুমার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) শান্তিরঞ্জন সরকার বলেন, “শ্রী পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষে দেখা যাচ্ছে বিঘাপ্রতি জমিতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ছ’কুইন্টাল করে বেশি ধান পাচ্ছেন চাষিরা। তাই তাঁরা উৎসাহিত হচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। জল-সার-বীজও প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম লাগে। এই পদ্ধতির প্রসার ঘটানোর জন্য আমরা চাষিদের সব রকম সাহায্য করছি।”
|
‘শ্রী’ পদ্ধতি কী?
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক কথায় নিবিড় চাষ পদ্ধতি (সিস্টেম অব রাইস ইনটেনসিফিকেশন বা শ্রী)। এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির ১৫ দিনের মধ্যে দু’টি পাতাযুক্ত ছোট চারা তুলে চাষের জমিতে সমদূরত্বে বসাতে হয়। জমিতে জল ধরে রাখতে হয় না। রাসায়নিক সার বেশি লাগে না। দেখতে হয় চারার শিকড়ে যেন আঘাত না লাগে। আগাছা নিয়ন্ত্রণে যত্ন নিতে হয়। রোগপোকার উপদ্রব কম হয়। ঝড়ে গাছ সহজে হেলে পড়ে না।
২০০৬ সালে রাজ্যে সরকারি ভাবে প্রথম ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে ধান চাষ শুরু হয় দেগঙ্গার দৈবঙ্গপোল গ্রামে। সেখানকার চাষি সনাতন বিশ্বাস দেড় বিঘা জমিতে ওই পদ্ধতিতে ধান চাষ করেছিলেন। তাঁর সাফল্যে উৎসাহিত হন অন্য চাষিরাও। ক্রমে এই পদ্ধতিতে চাষ জনপ্রিয় হয় এই ব্লকে। দৈবঙ্গপোল গ্রামটি সোহাই শ্বেতপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। চলতি মরসুমে এই পঞ্চায়েত এলাকার ২০০ হেক্টর জমিতে ওই পদ্ধতিতে বোরো চাষ হয়েছে। আহমেদ আলি নামে এক চাষি বলেন, “আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করতাম। এখন শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ করে বেশি উপার্জন করতে পারছি।” হাদিপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মহিদ চার বিঘা জমিতে এ বার ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি জমি থেকে তিনি ১৩ কুইন্টাল করে ধান পেয়েছেন। যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বিঘাপ্রতি প্রায় ছ’কুইন্টাল করে বেশি বলে তিনি জানিয়েছেন। বাড়তি ফলন মেলায় এ বার উপার্জনও বাড়বে বলে তাঁরা মনে করছেন। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ধান কাটা। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে চাষিরা হাদিপুরে গিয়ে ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে চাষ দেখে এসেছেন। দৈবঙ্গপোল গ্রামে ঘুরে গিয়েছে কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দলও। ব্যারাকপুর-১ ব্লকের চাষি গৌতম ঘোষও জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতিতে চাষ করে তিনি বেশি ফলন পেয়েছেন। একই বক্তব্য নৈহাটির সওকত আলি ট্যাংরারও।
|