|
|
|
|
শ্রী পদ্ধতিতে ধানচাষ শিল্পাঞ্চলেও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান চাষে জল লাগে প্রচুর। কিন্তু অপেক্ষাকৃত শুকনো এলাকায় কম জলে ধানচাষে ইতিমধ্যেই শ্রী পদ্ধতি প্রয়োগে সাফল্য মিলেছে। এ বার শিল্পাঞ্চলে এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু করল কৃষি দফতর। দুর্গাপুরের সহ কৃষি অধিকর্তা মিলন মণ্ডল বলেন, “এ বারই প্রথম দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে নতুন এই পদ্ধতিতে ধানচাষ শুরু হল। আশা করা যায়, এর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য চাষিরাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।”
মূলত, যে মাটিতে জলের পরিমাণ কম সেই এলাকায় বেশি ফলন পেতে শ্রী পদ্ধতি কার্যকরী। মাদাগাস্কারে ১৯৮৩ সালে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে চাষ শুরু করেন ফরাসি পাদ্রি হেনরি দে লাওলানি। তবে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় করে তুলে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে মুখ্য ভূমিকা নেন নিউইয়র্কের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড, এগ্রিকালচার অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’ নামক প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর নর্মান উপহফ। ১৯৯৭ সালে তাঁর উদ্যোগেই এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয় এশিয়ায়। ভুটান, ইরান, ইরাক প্রভৃতি দেশে এই পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ভারতে শ্রী পদ্ধতির প্রয়োগে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। কেরালাতে ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিতে ধান চাষ হচ্ছে। এখন এই রাজ্যেও সেই ধারা শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে কৃষি দফতর। |
|
-নিজস্ব চিত্র। |
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান চাষের ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতিতে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে মাত্র একটি চারা রোপণ করতে হয়। যার অর্থ, যেখানে বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ কেজি বীজ লাগে সেখানে এই পদ্ধতিতে বীজ লাগে এক কেজির কম। শ্রী পদ্ধতিতে জমিও অন্য ভাবে তৈরি করা হয়। এমনিতে জলে ডুবে থাকে ধানজমি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে জমির মাটি দেখা যায় উপর থেকে। সেই জমিতে দশ ইঞ্চি দূরত্বে এক একটি চারা পোঁতা হয়। আবার প্রতিটি লাইনের মাঝেও দূরত্ব দশ ইঞ্চি। সহ কৃষি অধিকর্তা মিলনবাবু বলেন, “যেখানে জলের পরিমাণ কম যেমন জেলার পশ্চিমাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে ধানচাষ করলে বেশি লাভ করতে পারবেন চাষিরা।” তাঁর দাবি, পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে এই পদ্ধতিতে ধান চাষে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত ফলনের সুযোগ রয়েছে। এমনিতে ধান চারার বয়স ২৮ দিনের না হলে তা তুলে জমিতে রোপণ করা যায় না। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ১২ থেকে ১৫ দিনের চারা বীজতলা থেকে তুলে নিয়ে জমিতে পোঁতা যায়।
কালনা মহকুমায় ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিতে ধান চাষ হচ্ছে। দিন দিন চাষিদের মধ্যে শ্রী পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দাবি কৃষি দফতরের। তবে কালনা মহকুমার মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি। তাই সেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষেই বেশি উৎসাহী চাষিরা। কিন্তু শিল্পাঞ্চলের মাটিতে জলের পরিমাণ কম। তাই সেখানে এই পদ্ধতিতে ধানচাষ করলে সহজেই ফারাক বুঝতে পারবেন চাষিরা, এমনটাই জানাচ্ছে কৃষি দফতর। কৃষি দফতরের সহযোগিতায় দুর্গাপুরের ফরিদপুর, মাধাইগঞ্জ, প্রতাপপুর প্রভৃতি এলাকায় শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ শুরু করেছেন বেশ কিছু চাষি। ফরিদপুরের চাষি ভোলা মাহাতো, রাধেশ্যাম মাহাতোরা বলেন, “কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে আমাদের এই বিশেষ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। আমরা রাজি হয়েছি। আমরা সফল হলে বাকিরাও শুরু করবেন।” সহ কৃষি অধিকর্তা মিলনবাবুর কথায়, “প্রথমে নতুন চাষ পদ্ধতি নিয়ে চাষিদের মধ্যে সংশয় থাকে। তবে শ্রী পদ্ধতিতে চাষের সুফল এক বার পেতে শুরু করলেই তা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।” |
|
|
|
|
|