ছাত্র-মৃত্যুতে তদন্ত কমিশনের
স্কুলে নিগ্রহমূলক শাস্তি দিলে ব্যবস্থা শিক্ষকের বিরুদ্ধে
স্কুলে শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের আইন আছে। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এ বার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনও শিক্ষক পড়ুয়াদের নিগ্রহমূলক শাস্তি দিলে তাঁর বিরুদ্ধেও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই ব্যবস্থা হতে পারে বদলি, হতে পারে পদের অবনমন অথবা সাসপেনশন। নিগ্রহমূলক শাস্তি রুখতে নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করা হচ্ছে বলে পর্ষদ সোমবার জানিয়েছে। পরিদর্শকদের সাহায্যে সেই নির্দেশিকা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই ধরনের নির্দেশ সংবলিত পোস্টার সাঁটতে হবে প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকাদের ঘরেও।
সামগ্রিক ভাবে স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে পর্ষদের এই উদ্যোগের পাশাপাশি বাসন্তীর নির্দেশখালি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র বাপি জোয়ারদারের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত করে কমিশনে রিপোর্ট পেশ করার জন্য এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে।
কয়েক দিন আগে স্কুল ছুটির পরে বাপি এক সহপাঠীর সঙ্গে মারপিট করছিল। চম্পারানি মণ্ডল নামে এক শিক্ষিকা তখন বাপির মাথা সজোরে দেওয়ালে ঠুকে দেন বলে অভিযোগ। বাড়ি ফিরে বাপি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে ভর্তি করানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শুক্রবার সেখানেই মারা যায় বাপি। চম্পাদেবী এখন হাজতে।
স্কুলে নিগ্রহমূলক শাস্তি রুখতে নির্দেশিকা জারির সিদ্ধান্ত জানানোর সময় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য অবশ্য এ দিন কোনও বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করেননি। তিনি শুধু বলেন, “সম্প্রতি শাস্তি দেওয়ার নামে স্কুলে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। শিশুরা মাঝেমধ্যে ব্যতিক্রমী আচরণ করে ঠিকই। কিন্তু বুঝিয়েসুজিয়ে, কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সেটা ঠিক করতে হবে।” প্রাথমিক ভাবে বোঝানোর দায়িত্ব অবশ্যই শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের। প্রয়োজনে পেশাদার কাউন্সেলরদের সাহায্যও নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন মানিকবাবু। তিনি জানান, শিক্ষার অধিকার আইন এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের আগের জারি করা নির্দেশিকার ভিত্তিতে এই মর্মেই নতুন একটি নির্দেশিকা তৈরি হচ্ছে।
কী থাকছে নির্দেশিকায়?
পর্ষদ-সভাপতি জানান, শারীরিক পীড়ন চলবে না, এটাই নির্দেশিকার মূল কথা। শাসন বা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কিন্তু শাসনের নামে কখনওই পড়ুয়ার গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। গায়ে হাত না-দিয়েও কী ভাবে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, সেই প্রসঙ্গে ক্লাস থেকে বার করে দেওয়ার চিরাচরিত ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন পর্ষদ-সভাপতি। তবে যাকে বার করে দেওয়া হচ্ছে, তার কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব নিতে হবে অন্য কোনও শিক্ষককে। প্রয়োজনে সামান্য বকাবকি করা গেলেও তা যেন কখনওই সীমা না-ছাড়ায়। মানিকবাবুর কথায়, “বকাবকির ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে, যাকে বকুনি দেওয়া হচ্ছে, সে যেন কোনও রকম হীনম্মন্যতায় না-ভোগে কিংবা অন্যদের থেকে নিজেকে যেন আলাদা বা বিচ্ছিন্ন না-ভাবে।” তার পরেই পর্ষদ-সভাপতি জানান, ছাত্র বা ছাত্রীকে নিগ্রহমূলক শাস্তি দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা শিক্ষিকার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।
শারীরিক শাস্তি নিষেধ করে আগে থেকেই তো নির্দেশিকা আছে। তা হলে নতুন নির্দেশিকা কেন?
পর্ষদ-প্রধানের জবাব, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে। তাই কার্যক্ষেত্রে সেই নিষেধ যাতে বলবৎ হয়, তার জন্য সব নির্দেশিকা মিলিয়েই নতুন ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.