সুন্দরবনে ছাত্রীদের সাইকেল বিলি নিয়ে অনিয়মের তদন্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিআইডি ক্লিনচিট দিল বাম জমানার সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে। সম্প্রতি সিআইডির পক্ষ থেকে মহাকরণে রিপোর্ট পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুন্দরবনে সাইকেল বিলি নিয়ে তেমন কোনও ‘দুর্নীতি’ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং সুন্দরবন এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্রীরা সাইকেলগুলি যথাযথ ভাবে পেয়েছে বলেই সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্যের গোয়েন্দা দফতর।
অর্থ দফতরের বিশেষ অডিটে অনিয়ম হয়েছে বলে যে তদন্ত শুরু করা হয়েছিল, তা বন্ধ করে দিতে চায় তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। কিন্তু রিপোর্ট পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিআইডি-কে মামলা রুজু করার ব্যাপারে যেমন কোনও সবুজ সঙ্কেত দেননি, তেমনই মামলা গুটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, “আমরা যা পেয়েছি, তা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের উপর পুরোটা নির্ভর করছে। যদি মহাকরণ মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে সিআইডি তা শুরু করবে। তবে এখনও সে নির্দেশ আসেনি।” কিন্তু ক্লিনচিট দেওয়ার পরেও সে ক্ষেত্রে কীসের ভিত্তিতে মামলা করবে সিআইডি? রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের কর্তাদের কাছে তার কোনও স্পষ্ট জবাব নেই।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বামফ্রন্ট সরকার জঙ্গলমহল এবং সুন্দরবনে নবম শ্রেণির সমস্ত ছাত্রীদের সাইকেল বিলি করেছিল। সুন্দরবনের সমস্ত স্কুলে নবম শ্রেণির ১৯ হাজার ৯৫০ জন ছাত্রীকে সাইকেল বিলি করেছিল সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর। খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রায় ২০ হাজার সাইকেল কেনার জন্য কোনও দরপত্র চাওয়া হয়নি। সরাসরি একটি সংস্থার কাছ থেকে এই সাইকেল কেনা হয়েছিল। অভিযোগ, দরপত্র ছাড়াই এ ভাবে সাইকেল কেনায় বড় অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ভুয়ো উপভোক্তা দেখিয়ে সাইকেল বিলি হয়েছে।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর অর্থ দফতরকে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে বলে বিশেষ অডিট করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থ দফতরের দাবি, তাদের অডিটে আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি সামনে এসেছে। বিশেষ অডিট রিপোর্টে বলা হয়, কোনও রকম দরপত্র ছাড়াই প্রায় ২০ হাজার সাইকেল বিলি করে বেনিয়ম করেছে দফতর। প্রতিটি সাইকেল ২২৫০ টাকা দরে একটি সংস্থার কাছ থেকে কেনা হয়েছিল। অডিটে বলা হয়, দরপত্র চাওয়া হলে এর চেয়েও কম দরে সাইকেল পাওয়া যেত। তা ছাড়া, সাইকেল-প্রাপকরা সকলেই নবম শ্রেণির ছাত্রী কি না, তার বিশদ তদন্তের জন্য মত দেয় অর্থ দফতরের বিশেষ অডিট বিভাগ।
অর্থ দফতরের রিপোর্টটি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি সুন্দরবনে সাইকেল বিলি নিয়ে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই তদন্ত শেষে কোনও অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।
সিআইডি-র এডিজি শিবাজি ঘোষ মহাকরণে পাঠানো রিপোর্টে বলেছেন, সুন্দরবনে ১৯ হাজার ৯৫০টি সাইকেল বিলি হয়েছে। টেন্ডার ছাড়াই তা কেনা হয়েছিল। প্রতিটি সাইকেল কিনতে খরচ হয়েছে ২২৫০ টাকা। যে ধরনের সাইকেল দেওয়া হয়েছে, বাজারে ওই ধরনের সাইকেলের দাম একই। যে সব স্কুলে সাইকেল দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একটি মাত্র স্কুল সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়। কিন্তু সেই স্কুলেও নবম শ্রেণির ছাত্রীরাই সাইকেল পেয়েছে। ফলে উপভোক্তাদের মধ্যেই যে সাইকেলগুলি বিলি হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা নেই। ফলে সাইকেল বিলি নিয়ে আপাত ভাবে দুর্নীতির তেমন কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। এডিজি তাঁর রিপোর্টের সঙ্গে তদন্তকারী দলের বিস্তারিত খোঁজখবর ও তল্লাশি সংক্রান্ত রিপোর্টটিও জুড়ে দিয়েছেন। রিপোর্ট জমা পড়ার পর এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কোনও নির্দেশ দেননি।
যাঁর আমলে এই অনিয়মের অভিযোগ, সেই প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জঙ্গলমহলে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সাইকেল কেনা হয়েছিল। সময়ের অভাব থাকায় সেই দামেই সুন্দরবনের জন্য সাইকেল কেনা হয়েছিল। এর মধ্যে কোনও দুর্নীতি নেই। ওদের নেই কাজ তো খই ভাজ অবস্থা!
তদন্তে সময় নষ্ট না করে যদি সুন্দরবনের ছাত্রীদের সাইকেল বিলির প্রকল্পটি চালু রাখত, তা হলে কাজ হত। মাঝে দু’বছর কেটে গেল, সুন্দরবনের ছাত্রীরা সাইকেল পেল না।” |