মোটর সাইকেলে করে এসে চার যুবক আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এক নাবালিকাকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেল। বাধা দিতে গিয়ে তাদের হাতে মার খেলেন বাবা। অপহরণকারীরা দিদিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে দেখে চিৎকার করে লোক ডাকতে গিয়েছিল ভাই। দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হয়ে এখন সে বারাসত জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার মরালডাঙা গ্রামে রবিবার রাতের ওই ঘটনায় দুষ্কৃতীদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার করা যায়নি ওই নাবালিকাকেও। ঘটনাস্থল থেকে একটি নাইনএমএম রিভলভার ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ওই নাবালিকাকে যারা অপহরণ করেছে তাদের শনাক্ত করা গিয়েছে। অপহরণের মামালা রুজু করে দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।” |
মরালডাঙা গ্রামে রাস্তার ধারে টিনের চালের বাড়ি জামির মণ্ডলের। বছর খানেক আগে কল্যাণীর কাটাবেলে এলাকা থেকে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে চলে আসেন। মেয়ে স্থানীয় তরঙ্গহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। লোডশেডিং চলছিল। রাত ৮টা নাগাদ দুটি মোটর সাইকেলে চারজন যুবক এসে জামিরের বাড়ির সামনে দাঁড়ায়।
জামিরের কথায়, “এক যুবক জানলার ফাঁক দিয়ে কয়েকবার মেয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করে। এর পরে একজন ঘরে ঢুকে মেয়ের হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গিয়ে বাইকে উঠে পড়ে।” মেয়েকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি ছুটে গিয়ে ওই যুবককে জাপটে ধরলে সে বাইক থেকে পড়ে যায়। শুরু হয় যুবকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। জামিরকে মারধরও করা হয়। ইতিমধ্যে একজনের পকেট থেকে রিভলভার পড়ে যায়। বাবাকে মার খেতে দেখে ১৩ বছরের হাবিব চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকতে যায়। সেই সময় যুবকদের একজন তাকে লক্ষ্য করে গুলি
চালালে তা হাবিবের বাঁ পায়ে লাগে। ছেলের গুলি লেগেছে দেখে সবাই সেদিকে ছুটে গেলে সেই সুযোগে যুবকেরা ওই নাবালিকাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রতিবেশীরা জানান, সন্ধে থেকে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কেউ ছিল না। তা ছাড়া ওদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় কেউ এগোতে সাহস করেনি। থানায় অভিযোগে জামির বলেছেন, “মেয়ের সঙ্গে বনগাঁর এক যুবকের বছর খানেক ধরে সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে মেয়েকে বহুবার নিষেধও করেছি। এ দিন সকালে মেয়েকে একপ্রস্থ বকাবকিও করি। চড়ও মারি। তারপরই মেয়ে ব্যাগে জামাকাপড় গোছাতে থাকে চলে যাবে বলে। ওকে বুঝিয়ে নিরস্ত করি।” একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, নাবালিকা মেয়ে তাঁর। তাকে ভুল বুঝিয়ে অপহরণ করা হয়েছে।
তদন্তে গিয়ে পুলিশ ঘর থেকে প্রেমিকের উদ্দেশে লেখা ওই নাবালিকার বেশ কয়েকটি চিঠিও উদ্ধার করেছে। চিঠির সূত্র ধরেই পুলিশ অনুমান, ওই নাবালিকার সম্মতিতেই তার প্রেমিক দলবল নিয়ে এসে তাকে অপহরণ করেছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
হাসপাতালে শুয়ে থাকা হাবিবের কথায়, “ওরা দিদিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। বাবা বাধা দিলে মারধর করে। ওদের হাতে পিস্তল ছিল। ভয় পেয়ে লোকজন ডাকতে গেলে ওরা গুলি করে। তার পর আর কিছু মনে নেই।” |