সারদা-কর্তার নিশানায় ম্যানেজার
স্নানঘরেও এসি বসিয়ে জাঁক দেখিয়েছে বুম্বা
যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পেয়েছিলেন!
আট মাস আগেও ওঁর টালির চালের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকত একটি অটোরিকশা। মালিকের থেকে ভাড়া
অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বা
নেওয়া সেই অটো চালিয়ে তিনি সংসার চালাতেন। রাতারাতি সেখানে মাথা তুলল সুদৃশ্য অট্টালিকা।
যার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত বিদেশি গাড়ি, গ্যারাজে আরও চার-চারটে। এক কালের অটোচালকই ওই বাড়ি-গাড়ির মালিক। তাঁর গাড়ি তখন চালায় মাস-মাইনের ড্রাইভার। তিনি বসেন পিছনের সিটে। ঠিক মালিকের মেজাজে।
তিনি সারদা গ্রুপের বারুইপুর অফিসের ডিভিশন্যাল ম্যানেজার অরিন্দম দাস। ওরফে বুম্বা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সারদা গোষ্ঠীর ৫১টি শাখার নিয়ন্ত্রক। রবিবার বারুইপুর কোর্টে দাঁড়িয়ে যাঁর দিকে আঙুল তুলেছেন খোদ সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। সুদীপ্তের দাবি: যাঁরা তাঁকে পথে বসিয়েছেন, বুম্বা তাঁদের অন্যতম। তিনি সংস্থার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পাশাপাশি বুম্বা বেশি দামে জমি কিনে লোকসান করিয়ে সংস্থা ডুবিয়েছেন বলেও অভিযোগ সারদা-কর্তার। বুম্বা আপাতত ফেরার।দিন-আনি-দিন-খাই পরিবারের যুবকটি যে ‘সারদা-ছোঁয়ায়’ রাতারাতি কোটি-কোটিপতি হয়ে উঠেছিলেন, পাড়া-পড়শির কথাতেও তা স্পষ্ট। তাঁরা জানাচ্ছেন, বছর দুয়েকের মধ্যে অটোচালক বুম্বার জীবনযাত্রার মান প্রায় আকাশে ঠেকেছিল। সারদায় চাকরি পাওয়ার মাস ছয়েক যেতে না-যেতে বারুইপুরের ফুলতলায় তাঁর একচালার টালির খুপরি পরিণত হয় মার্বেলে মোড়া ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়িতে। আগাগোড়া শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, এমনকী, বাথরুমও। নিত্যনতুন গাড়ি। সে কালের রাজা-বাদশাহের মতো বুম্বা দু’হাতে টাকা ওড়াতে থাকেন। সম্প্রতি ওই বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে ঐশ্বর্যের বহর দেখে চোখ ধাঁধিয়েছে পুলিশ অফিসারদেরও।
ভোজবাজির এ হেন কারিগরের বিরুদ্ধে সারদা-কর্তা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। পুলিশ-সূত্রের খবর: জেরায় সুদীপ্ত বলেছেন, ২০১১-য় বুম্বা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সূর্যপুরের সালেপুরে বিঘে চল্লিশেক জমি কিনেছিলেন সারদা গার্ডেনের নামে, তখন যার কাঠাপিছু বাজারদর ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু সুদীপ্তের দাবি, বুম্বা ও রাজ্যের তদানীন্তন শাসকদলের কয়েক জন নেতার চাপে পড়ে তিনি সেই জমি কাঠাপিছু তিন লাখ টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য হন। বাড়তি দামের পুরোটাই বুম্বা-চক্রের পকেটে গিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। এক তদন্তকারীর কথায়, “চল্লিশ বিঘে মানে আটশো কাঠা। সুদীপ্তবাবুর দাবি ঠিক হলে ওই ‘ডিল’-এ ফি কাঠায় আড়াই লাখ টাকা লাভ করেছিলেন বুম্বা ও সংশ্লিষ্ট নেতারা।”
সারদা-কর্ণধারের অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক কিনা, তা পুলিশ যাচাই করছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও অনুমান, এ ভাবে ফাঁপিয়ে তোলা দামে সারদা গোষ্ঠীকে দিয়ে চল্লিশ বিঘে কিনিয়ে বুম্বা-নেতা চক্রটি অন্তত বিশ কোটি রোজগার করেছিল। পুলিশের বক্তব্য: বারুইপুরে শাসকদলের ব্লকস্তরের এক নেতা জমি কেনা-বেচার দায়িত্বে ছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর: জমি হাতবদলের মাসখানেকের মধ্যে সেই নেতা-সহ সূর্যপুরের নবগ্রাম পঞ্চায়েতের কদমপুর-তেউরহাট-ঠাকুরদহ-গোয়ালবেড়িয়ার আরও কিছু নেতার টালির চালের বাড়ি পাকা দোতলা ভবনে রূপান্তরিত হয়। “অনেক বাড়িতে দামি মার্বেল বসেছে। কয়েক জন নতুন গাড়িও কিনে ফেলেছেন।” বলছেন সারদার এক এজেন্ট।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর: মাধ্যমিক পাশ বুম্বা আগে অটো চালানোর পাশাপাশি অন্য এক অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। ২০০৮-এ বারুইপুরের কুলপি রোডে সারদা গোষ্ঠী অফিস খুললে তিনি তাতে চাকরিতে লাগেন, এবং অল্প সময়ে পড়ে যান খোদ মালিকের নেক নজরে। কাজে চটপটে ছেলেটিকে এজেন্ট থেকে এক ধাক্কায় ‘ডিভিশনাল ম্যানেজার’ পদে বসিয়ে দেন সুদীপ্ত। সারদা-এজেন্টদের একাংশ জানাচ্ছেন, কিছু দিনের মধ্যে বুম্বা নিজেই ফুলতলা-সহ বারুইপুরের বিভিন্ন জায়গায় এজেন্ট নিয়োগ করতে শুরু করেন। বছরখানেকের মধ্যে কমবেশি বারো হাজার এজেন্টের হর্তা-কর্তা-বিধাতা হয়ে ওঠেন তিনি।
পুলিশ-সূত্রের জানা গিয়েছে, এজেন্টদের হিসেব মোতাবেক ফি মাসে আমানত হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বারুইপুরের অফিসে জমা পড়ত। অথচ শেষ আট মাসে বারুইপুর থেকে এক টাকাও সংস্থার ভাঁড়ারে আসেনি বলে তদন্তকারীদের কাছে সুদীপ্ত আক্ষেপ করেছেন। সারদা-কর্ণধারের দাবি, আমানতের কোটি কোটি টাকা বুম্বা আত্মসাৎ করেছেন।
এখন বুম্বার হাল-হকিকত কী?
তদন্তকারীরা জানান, সারদার অফিস বন্ধ হওয়ার কিছু দিন আগেই এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন বুম্বা। তাঁর বাড়িতে এখন রয়েছেন বৃদ্ধা মা। দু’টি ট্রাক-সহ পুলিশ বুম্বার ছ’টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। বাড়িতে মিলেছে বিভিন্ন সংস্থার নথিপত্র ও বেশ কিছু জমির দলিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.