চাবি মিলেছিল আগেই। তালা খুলল দেড় মাস পরে!
আর তার সঙ্গেই তিন বছর পরে পাথরচাপা কপাল খুলল হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের। কলকাতা হাইকোর্টের নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার, প্রাক্তন জেলা জজ ও লিগ্যাল রিমেমব্রান্সার সুভাষ রায় সোমবার তিন বছর ধরে বন্ধ সমবায় ব্যাঙ্কটির তালা খুললেন। অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী ওই সমবায় ব্যাঙ্কের প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক ও কয়েকশো কর্মচারী। এ দিন দায়িত্ব গ্রহণের পরেই সুভাষবাবু জানিয়ে দেন, খুব শীঘ্রই কর্মচারীদের ব্যাঙ্কে যোগ দিতে বলা হবে এবং গ্রাহকদের গচ্ছিত টাকা ফেরত সংক্রান্ত কাজও শুরু হবে। সুভাষবাবুর সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি প্রদীপ রায়-সহ সমবায় ব্যাঙ্কের যুগ্ম রেজিস্ট্রার, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অফিসার ও ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক এবং রাজ্যের কৃষি ও বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ও।
এ দিকে, ঠিক লোকসভা উপনির্বাচনের দু’সপ্তাহ আগে এবং তৃণমূল সরকারের দু’বছর পূর্তির দিন ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চাবি খোলার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন ওই ব্যাঙ্কের সিপিএম-প্রভাবিত ‘এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘কাস্টমার্স ফোরাম’। |
তালা খোলা হচ্ছে রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন ব্যাঙ্কের কর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ্য ঘোষের অভিযোগ, “আদালত নতুন স্পেশাল অফিসারের নাম ঘোষণা করে গত ১৪ তারিখ ব্যাঙ্ক খোলার নির্দেশ দেয়। তখন না খুলে এ দিন ব্যাঙ্ক খোলার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” একই অভিযোগ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সদস্য দিলীপ সেনেরও। দিলীপবাবু বলেন, “এই ব্যাঙ্ক খোলার ব্যাপারে বাম সরকারও গ্রাকদের পাশে দাঁড়ায়নি, বর্তমান সরকারও নয়। এখন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
যদিও এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের কৃষি ও বিপণনমন্ত্রী অরূপবাবু এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কোনও রাজনৈতির ফায়দা লোটার জন্য এ দিন ব্যাঙ্কের চাবি খোলা হয়নি। সব সুবিধা-অসুবিধা দেখে ব্যাঙ্ক খোলার দিন ঠিক করেছেন স্পেশাল অফিসার নিজেই। এতে রাজ্য সরকারের কিছু করার নেই।” মন্ত্রীর দাবি, রাজ্যে মন্ত্রিসভা গঠনের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমবায় ব্যাঙ্কটি খোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের ২৬ অগস্ট ব্যাঙ্কটির অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৪৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় রির্জাভ ব্যাঙ্ক তাদের অস্থায়ী লাইসেন্স ফেরত নিয়ে ওই ব্যাঙ্কের কাজকর্মের উপরে বিধিনিষেধ জারি করে। এর পর থেকে গ্রাহকেরা এককালীন এক হাজার টাকার বেশি আর নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলতে পারছিলেন না। ২০১০ সালের ১৭ জুন ব্যাঙ্কটির লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ায় ব্যাঙ্কটি মুখ থুবড়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত গত ২০১০-এর ৩ অগস্ট পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় সমবায় ব্যাঙ্কটি।
হাওড়ার সব থেকে পুরোনো এই সমবায় ব্যাঙ্ক বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের মাথায় হাত পড়ে। চরম সমস্যায় পড়েন কর্মচারীরাও। ব্যাঙ্কের কয়েক জন কর্তার বিরুদ্ধে প্রায় ৮০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে ব্যাঙ্কটি খোলার দাবিতে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে কাস্টমার্স ফোরাম ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। সঙ্গী হয় এমপ্লয়িজ ইউনিয়নও। এর পরে গত দু’বছর ধরে নানা টানাপোড়েন চলে। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও মুরারিপ্রসাদ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ ব্যাঙ্ক খোলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু চাবি হারিয়ে যায়। শেষে আদালতের নির্দেশেই গত ৪ এপ্রিল হাওড়া সিটি পুলিশ রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের ৫১টি চাবি পুলিশ তুলে দেয় সমবায় দফতরের কর্তাদের হাতে। এর পরে আদালত প্রথমে প্রাক্তন বিচারপতি কে কে শ্রীবাস্তবকে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করেন। তাঁর অসুস্থতার কারণে গত ১৪ তারিখ আদালত সুভাষবাবুকে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করে ব্যাঙ্কটি খুলে কাজকর্ম শুরু করতে। |