ভয় পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারদা কাণ্ড এবং ধনেখালি কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করছেন বলে দাবি করলেন রেল প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।
সোমবার হুগলির পুড়শুড়ার এক জনসভায় অধীরবাবু মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে বলেন, “মমতা তাঁর আন্দোলনের দীর্ঘ জীবনে নেতাই থেকে নন্দীগ্রাম বিভিন্ন ঘটনায় সিবিআইয়ের উপরেই ভরসা করে এসেছেন, সেই মমতাই এখন সিবিআই তদন্ত চাইছেন না।” তার কারণ হিসেবে অধীরের দাবি, “সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত করলে কেঁচো খুঁজতে গিয়ে যদি সাপ বেড়িয়ে পড়ে, মমতার সেই আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগে-পরে কিছু দেখছেন না। শ’য়ে শ’য়ে আমানতকারী ওঁর মুখের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। তাঁদের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী পরোয়া করছেন না।”
সম্প্রতি ধনেখালি কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিন সেই প্রসঙ্গও তোলেন রেল প্রতিমন্ত্রী। মঞ্চে হাজির ছিলেন পুলিশি হেফাজতে মৃত ধনেখালির তৃণমূল কর্মী কাজি নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মনুজা বিবি। তাঁর সামনেই অধীরবাবু বলেন, “মমতা সিবিআই বিরোধিতায় এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছেন যে, রাজ্য সরকারের টাকা খরচ করে উনি সুপ্রিম কোর্টে চলে গেলেন যাতে সিবিআই তদন্ত আটকানো যায়।” |
পুড়শুড়ায় কংগ্রেস নেতৃত্ব। সোমবার। ছবি: মোহন দাস। |
সচেতন ভাবেই শাসক দলে মমতা-বিরোধিতা উস্কে দিতে চেয়েছেন অধীর। এ জন্য রাজ্যের মন্ত্রিসভায় মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম বা সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের কার কখন গুরুত্ব বাড়বে তা নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। সিঙ্গুরের জেলায় দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি মতো এখনও যে অনিচ্ছুকদের জমি মুখ্যমন্ত্রী ফিরিয়ে দিতে পারেননি, সে কথাও তুলতে ভোলেননি রেল প্রতিমন্ত্রী। অধীরের দাবি, “সাহায্য হিসেবে রাজ্যের নয়, কেন্দ্রের অন্নপূর্ণা-অন্ত্যোদয় যোজনার চাল সিঙ্গুরবাসীকে দেওয়া হচ্ছে।” সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং আব্দুল মান্নানও।
পুড়শুড়ার তৃণমূল নেতা অষ্ট বেরা এ দিনই দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। এই উপলক্ষেই সভা আয়োজন করা হয়েছিল। মান্নান মঞ্চ থেকেই অষ্টবাবুকে আরামবাগ মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। মান্নানের দাবি, এ দিন চার হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এ দিন সভা ছিল বিকেলে। আসার পথে নানা জায়গায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের তৃণমূলের লোকজন বাধা দেয় বলে অভিযোগ তোলেন মান্নান। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানেনি। নতুন দলে যোগ দিয়ে অষ্ট বলেন, “অনেক আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম দলে অনেক দুর্নীতি, অনিয়ম হচ্ছে। তাই দল ছাড়লাম।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জয়দেব জানার দাবি, “অষ্টবাবুর সঙ্গে ২০০১ সালেই দলের যোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এ দিন আমাদের চার হাজার কর্মী-সমর্থক কংগ্রেস যোগ দিয়েছেন বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা মিথ্যা।” |