|
|
|
|
হাইকোর্টের হস্তক্ষেপেই শাপমোচন |
মিলল চাবি, পাথরচাপা কপাল খুলছে ব্যাঙ্কের |
অরুণোদয় ভট্টাচার্য • কলকাতা
দেবাশিস দাশ • কলকাতা |
সামান্য একটু পুলিশি ধমক। আর তাতেই কেল্লা ফতে!
বছর তিনেক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের ভিতরে কী আছে, তা দেখার জন্য রাজ্যের সমবায় দফতরের কর্তাদের ব্যাঙ্কের চাবি খোলার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। অভিযোগ, তখন ব্যাঙ্কের চাবি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অজুহাত দেখিয়ে ব্যাঙ্কের দরজা খোলা হয়নি। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতেরই নির্দেশে তদন্তে নেমে পুলিশ সেই চাবির গোছা উদ্ধার করল মাত্র দেড় দিনে! আদালতের নির্দেশেই হাওড়া সিটি পুলিশ বৃহস্পতিবার ওই ব্যাঙ্কের ৫১টি চাবি তুলে দিল সমবায় দফতরের কর্তাদের হাতে।
বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও মুরারিপ্রসাদ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চের এই ভূমিকা ঐতিহ্যবাহী সমবায় ব্যাঙ্কটির পুনরুজ্জীবনের রাস্তা খুলে দিল বলে অধিকাংশ আইনজীবী মন্তব্য করেন। ৫১টি চাবি এ দিন বিচারপতির কাছে জমা দিয়ে রাজ্যের সমবায় দফতরের যুগ্ম রেজিস্ট্রার রামপদ দাস জানতে চান, এখন চাবি কোথায় থাকবে? ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, যুগ্ম রেজিস্ট্রারের হেফাজতেই থাকবে ওই চাবি।
কী ভাবে উদ্ধার হল চাবি?
পুলিশি সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার পুলিশ ওই ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারীরা ব্যাঙ্কের ম্যানেজার প্রশান্ত বসু, অন্যান্য কর্মী ও রক্ষীদের কড়া ভাষায় জানিয়ে দেয়, মানে মানে চাবি বার না-করলে সকলকে গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেওয়া হবে।
কাজ হয় তাতেই। পুলিশ জানায়, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার প্রথমে চাবির কথা স্বীকার না-করলেও পুলিশের কাছে ধমক খেয়ে পরে জানান, চাবি আছে অন্য লোকের কাছে। পুলিশ জানিয়ে দেয়, বুধবারের মধ্যে চাবি না-দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরের দিন বেলা ১১টায় ৫১টি চাবির গোছা পৌঁছে যায় পুলিশের কাছে। পুলিশ তা তুলে দেয় সমবায় দফতরের যুগ্ম রেজিস্ট্রার রামপদবাবুর হাতে।
আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা ও সমবায় দফতরের একাংশের দোষেই যে ব্যাঙ্কের এই অবস্থা, তা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের ইতিবাচক ভূমিকা এটা সম্ভব করল। আদালতের সৌজন্যেই সাধারণ মানুষ জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার পথ পেলেন। সেই সঙ্গে প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে প্রাচীন এই সমবায় ব্যাঙ্কটিও।
ব্যাঙ্কটির দুর্দশা কেন? আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের ২৬ অগস্ট ব্যাঙ্কটির অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ ৪৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেখানকার কাজকমের্র উপরে বিধিনিষেধ জারি করে। তার পর থেকে গ্রাহকেরা নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এককালীন এক হাজার টাকার বেশি তুলতে পারছিলেন না। ২০১০ সালের ১৭ জুন অস্থায়ী লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ায় ব্যাঙ্কটি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালের ৩ অগস্ট পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এই সমবায় ব্যাঙ্ক।
হাওড়ার সব থেকে পুরনো এই সমবায় ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের মাথায় হাত পড়ে। চরম সমস্যায় পড়েন ব্যাঙ্কের কর্মচারীরাও। ব্যাঙ্কের কয়েক জন কর্তার বিরুদ্ধে প্রায় ৮০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে ব্যাঙ্কটি খোলার দাবিতে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে কাস্টমার্স ফোরাম। সঙ্গী হয় রামকৃষ্ণপুর কো-অপারেটিভ লিমিটেডের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নও।
বিস্তর টানাপোড়েনের পরে দেখা দেয় চাবি-বিভ্রাট। চাবি উদ্ধার না-হলে যে গ্রাহক ও ব্যাঙ্কটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই থেকে যাবে, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। ডিভিশন বেঞ্চ তাই অবিলম্বে চাবি খুঁজে আনতে বলে।
এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থসচিব চঞ্চলমল বাচোয়াত। হাইকোর্ট তাঁকে এই ব্যাঙ্কের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাচোয়াত ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, এই বিষয়ে তিনি খুব একটা অভিজ্ঞ নন।
তবে নাবার্ডের চিফ জেনারেল ম্যানেজার এই বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তাঁকে দায়িত্ব দিলে সকলের মঙ্গল হবে। ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর পরামর্শ মেনে নেয়। বাচোয়াত জানান, মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি সোমবার হাইকোর্টকে এই বিষয়ে অগ্রগতির কথা জানাবেন। সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।
আদালতের হস্তক্ষেপে চাবি উদ্ধার এবং সেই সূত্রে ফের ব্যাঙ্ক খোলার পথ মেলায় এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় খুব খুশি। তিনি এ দিন বলেন, “আশা করছি, ব্যাঙ্ক ফের খুললেই দেরি না-করে গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে।” |
|
|
|
|
|