|
|
|
|
এসেছে টাকা |
ডাকছে তেলকুপির দেউল, পাকবিড়রাও |
প্রশান্ত পাল • পুরুলিয়া |
পুরুলিয়া বলতেই ভ্রমণপ্রেমীরা হয় বোঝেন অযোধ্যা পাহাড়, নয় গড় পঞ্চকোট। এই চেনা পথে ঘুরে মরার বাইরে এ বার পর্যটন মানচিত্রে মাথা তুলছে ইতিহাস বিজড়িত পাকবিড়রা আর তেলকুপি।
প্রথমে রেলমন্ত্রী এবং পরে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত বার পুরুলিয়ায় এসেছেন, বারবার পুরুলিয়াকে ঘিরে পর্যটনের কথা বলে গিয়েছেন। জেলার দর্শনীয় জায়গাগুলি একে একে সাজানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এর আগেই জয়চণ্ডী ও অযোধ্যা পাহাড়ে পর্যটন বিকাশের জন্য প্রায় সওয়া দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। এ বার জৈন তীর্থক্ষেত্র পাকবিড়রা এবং পাঞ্চেত জলাধার লাগোয়া তেলকুপির জন্যও ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
পঞ্চাশের দশকের শেষে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় পাঞ্চেত জলাধার তৈরির সময়েই দামোদরের জলের নীচে চলে গিয়েছিল তেলকুপির বিস্তীর্ণ এলাকা। ডুবে যায় বহু দেউল, যা মূলত মিশ্র জৈন ও হিন্দু সংস্কৃতির। এখনও জলের উপর দু’টি দেউলের মাথা দেখতে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক ও মন্দির গবেষক জে ডি বেগলার ১৮৭২-৭৩ সালে এসে ২২টি দেউল দেখেন। তাঁর তোলা ছবিই তেলকুপির প্রথম ছবি। তলিয়ে যাওয়ার আগে তার অনেকটা অক্ষত ছিল। বেগলারের কথায়, “ছোট্ট জায়গায় সম্ভবত সূক্ষ্মতম এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মন্দির রয়েছে এখানে।” |
|
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে নতুন আকর্ষণ। পুরুলিয়ার তেলকুপিতে
পাঞ্চেত জলাধারে অর্ধমগ্ন জৈন মন্দির। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
পুরুলিয়ার মন্দির গবেষক সুভাষ রায়ের মতে, তেলকূপি আগে বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। নাম ছিল তৈলকম্প বন্দর। নগরীর রাজা ছিলেন একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে পালবংশীয় রাম পালের সমকালীন সামন্ত রাজা রুদ্রশেখর। জৈন ব্যবসায়ীরা তাম্র আকরিক রফতানির জন্য এই বন্দর ব্যবহার করতেন। পরে পাঞ্চেত ও কাশীপুরের রাজাদের শিকারভূমের (যার বেশির ভাগটাই বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলায়) অন্তর্গত হয় তেলকুপি। শুধু শরীরে জড়ানো ইতিহাস নয়। গোটা এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ। শুধু প্রচারের অভাবে দীর্ঘদিন পর্যটকদের চোখের আড়ালেই রয়ে গিয়েছে।
পাকবিড়রাকে আবার বলা হয় ‘পুরুলিয়ার জাদুঘর’। জৈন আমলের অনুপম শিল্পশৈলীর একাধিক মন্দির রয়েছে এখানে। সেগুলি নবম ও দশম শতাব্দীর বলেই গবেষকরা মনে করেন। ১৮৭২ সালে জে ডি বেগলার এখানে এসেও কম-বেশি ১৯টি মন্দির দেখেছিলেন। সুভাষবাবুর মতে, পাকবিড়রায় এখনও ২৪ তীর্থঙ্করের মূর্তি রয়েছে। তা থেকে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, সেখানে আগে ২৪টি দেউল ছিল। ছিল অসংখ্য মূর্তিও। ধ্বংস হতে-হতে এখন তার সামান্য অবশিষ্ট রয়েছে। এখনও উদ্যোগী হলে সেই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি রক্ষা করা যাবে। না হলে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। জেলার বাসিন্দা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “এত দিন এই পর্যটন ক্ষেত্রগুলির উপরে কেউ আলো ফেলেননি। এখন ধাপে-ধাপে কাজ এগোচ্ছে।”
কী ভাবে বেড়িয়ে আসা যায় তেলকূপি বা পাকবিড়রায়?
রঘুনাথপুর থানা এলাকার তেলকূপিতে যেতে আদ্রা বা জয়চণ্ডীপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু থাকতে হবে ২০ কিলোমিটার দূরে রঘুনাথপুর শহরেই। পাকবিড়রায় যেতে আদ্রা বা পুরুলিয়া স্টেশনে নেমে গাড়ি নিতে হবে। বাসে পুঞ্চা গিয়েও গাড়ি নেওয়া যেতে পারে। কাছাকাছি থাকার জায়গা বলতে রয়েছে মানবাজারে দু’একটি লজ। বড় হোটেল বলতে ৫৫ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া শহরে। রঘুনাপুরও প্রায় একই দূরত্বে।
যাঁরা সপ্তাহান্তে টুক করে ঘুরে আসার জায়গা খোঁজেন, তাঁরা হাওড়া স্টেশন থেকে রাত ১১টার চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে চেপে বসতে পারেন। পরের দিন ভোরে আদ্রা পৌঁছে গাড়ি বা অটো ধরে রঘুনাথপুর। সেখানে কোনও হোটেলে সাফসুতরো হয়ে প্রাতরাশ সেরে সোজা তেলকুপি। দুপুরে রঘুনাথপুরে ফিরে মধ্যাহ্নভোজ সেরে চলে যান পাকবিড়রা। রাতে আদ্রায় এসে ফিরতি চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ধরলেই হল।
যদি সে দিনই ফিরতে ইচ্ছে না করে? যদি ফিরে ফিরে ডাকে নীল জলে মাথা তোলা ভুতুড়ে দেউল?
থেকে যাওয়াই যায়, যদ্দিন খুশি... |
|
|
|
|
|