দু’বছরে কোনও সরকারের বিচার হয় না। তবু মানুষের অনুপ্রেরণা এবং নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনে তাঁর সরকার অফুরন্ত উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে এবং তার ফলও ফলছে। মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বামফ্রন্ট সরকার তাদের প্রথম দু’বছরে কী কী করেছিল আর তৃণমূলের সরকার দু’বছরে কী করেছে, মিলিয়ে দেখলেই ফারাকটা বোঝা যাবে। বললেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু।
মমতা সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে কৃতিত্ব এবং ব্যর্থতা নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা বজায় থাকল পুরো দমে!
‘মা-মাটি-মানুষ’কে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর ফেসবুক-বার্তায় লিখেছেন: ‘নতুন একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য দু’বছর খুব বড় সময় নয়। দীর্ঘ ৩৪ বছরের জমানার ছায়া, দু’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণের বোঝা এবং সম্পূর্ণ পক্ষপাতগ্রস্ত ও মনোবলহীন প্রশাসন যন্ত্র এই সরকারের মাথার উপরে ছিল। তবুও আপনাদের অনুপ্রেরণা ও নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন আমাদের অফুরন্ত উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করেছে।’ মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে উল্লেখ করেছেন জঙ্গলমহল ও দার্জিলিঙের কথা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘এখন জঙ্গলমহল আর দার্জিলিং দু’টোই হাসছে’। |
সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্ক সার্কাস থেকে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত তৃণমূল
যুবার পদযাত্রা। নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র |
বিমানবাবু অবশ্য সাফল্যে হাসির কোনও কারণ দেখছেন না। মালদহে এ দিনই এক কর্মিসভায় বিমানবাবু বলেছেন, “তৃণমূল সরকারের কাজের ফিরিস্তি খবরের কাগজে বের হচ্ছে। দু’বছরের কাজ নিয়ে বামফ্রন্ট ও তৃণমূল সরকারের মধ্যে তুলনা করলে আসমান-জমিন ফারাক ধরা পড়বে! আমরা সরকারে এসে এক বছরের মধ্যে কৃষক, শ্রমিক ও সরকারি কর্মীদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। শিক্ষায় নৈরাজ্য বন্ধ করেছি। কিন্তু তৃণমূল সরকার এক বছরে গণতন্ত্রের টুটি টিপে ধরেছে! শিক্ষায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।”
সরকারের সাফল্যের কাহিনি নিয়ে শনিবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী। তার জবাবও দিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আরও সুর চড়িয়ে তিনি এ দিন দাবি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে মানুষ আশান্বিত। তাই হতাশ হয়ে কংগ্রেস এবং সিপিএম ‘মামা-ভাগ্নের মতো’ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে! সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ দিন কলকাতায় পার্ক সার্কাস থেকে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত একটি মিছিলও করেছে তৃণমূল ‘যুবা’। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর পাশাপাশিই মিছিলে ছিলেন ‘যুবা’র সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শ্যামলবাবু অবশ্য এ দিনও পার্থবাবুদের সাফল্যের খতিয়ান নিয়ে প্রশ্ন অব্যাহত রেখেছেন। মালদহে তিনি বলেছেন, “দু’বছরে তৃণমূল সরকার কী করেছে, সেই তালিকা বার হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩ লক্ষ ১৪ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অথচ প্রথম বছর বলা হয়েছিল ৩ লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। তা হলে বলতে হচ্ছে, দ্বিতীয় বছরে মাত্র ১৪ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হল!” তাঁর আরও প্রশ্ন, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বলা হচ্ছে। কোথায় কত কর্মসংস্থান হয়েছে, তার হিসেব কেন দেওয়া হচ্ছে না? সিপিএম নেতার বক্তব্য উড়িয়ে তৃণমূল ভবনে পার্থবাবু দাবি করেছেন, রাজ্যে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার ২৬১টি লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। শিল্পক্ষেত্রে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার কর্মসংস্থানই হয়েছে।
|