পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য সরকারের দু’বছরের সাফল্য প্রচারে জেলায় জেলায় চলছে মেলা আর গানবাজনা, আর তার বেশির ভাগটাই হচ্ছে কেন্দ্রের টাকায়। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে সাম্প্রতিক কয়েকটি সভায় তোপ দেগে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর আগে মেলা-উৎসব করে, পাড়ার ক্লাবগুলিকে অর্থ বিলিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে তৃণমূল সরকার। সেই টাকার সংস্থান করা হয়েছে সরকারের বিভিন্ন দফতরের বাজেট বরাদ্দ থেকে। মহাকরণ সূত্রের খবর, এ বার রাজ্য সরকারের সাফল্য প্রচারেও খরচ করা হচ্ছে অন্য খাতে দেওয়া কেন্দ্রের টাকা। রাজ্য সরকারের এই কাজের সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। তারা বলেছে, এটা দ্বিচারিতা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা ও বৈষম্য করছে বলে বার বার অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ অন্য খাতে তাদের দেওয়া টাকা দিয়েই নিজেদের প্রচারের ঢাক পেটানো হচ্ছে।”
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে সোমবার, ২০ মে দু’বছর পূর্ণ করছে তৃণমূল সরকার। দু’বছরের সাফল্য প্রচারে কলকাতা-সহ সব জেলায় প্রদর্শনী চলছে ৫ মে থেকে। সঙ্গে থাকছে গানবাজনাও। কোনও কোনও জেলায় আবার মেলাও বসিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন সরকারি দফতর। ২১ মে পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন।
কিন্তু এ ঢাক পেটানোর টাকা আসছে কোথা থেকে? বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, দফতরের পরিকল্পনা-বহির্ভূত বাজেট থেকে কিছু অর্থ সংস্থান করা হয়েছে। তবে সেটা সামান্যই, বেশির ভাগটাই কেন্দ্রের টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সঙ্গে মানুষের কাছে সেগুলির প্রচার ও জনসচেতনতা বাড়াতে আইইসি (ইনফর্মেশন, এডুকেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন) নামে একটি খাতেও টাকা দেয় দিল্লি। বিশ্বব্যাঙ্কের পরামর্শ মেনে এই খাতে প্রতি রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকে কেন্দ্র। প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে সেই টাকাই খরচ করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের সাফল্য প্রচারে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য তা কার্যত স্বীকার করে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, “রাজ্যের রাজস্বের ৪০ শতাংশেরও বেশি কেন্দ্র তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা যখন কিছু প্রচার করে, সেটা কার টাকায় করে, রাজ্য থেকে আদায় করা টাকাতেই তো? তখন কি তারা রাজ্যের নাম করে?”
প্রাথমিক ভাবে বলা হয়েছিল, সরকারের ৪০টি দফতর প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। এ জন্য দফতর পিছু খরচ ধরা হয় ১০ লক্ষ, মোট ৪ কোটি টাকা। কিন্তু এই টাকায় যে মেলার বাঁশও বাঁধা যায় না, মাঠে নেমে তা বুঝতে পারে দফতরগুলি। ফলে এখন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন গুণ, অর্থাৎ দফতর প্রতি ৩০ লক্ষ, মোট ১২ কোটি টাকা। মহাকরণ সূত্রের খবর, এই বাড়তি খরচের প্রায় পুরোটাই নেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের নানা প্রকল্পের ‘আইইসি’ খাত থেকে।
কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, “রাজ্যে চলা অধিকাংশ প্রকল্পই কেন্দ্রীয় প্রকল্প। তার প্রচার করতে হলে কেন্দ্রের অবদানের কথাও বলা উচিত। কিন্তু এই সরকার অসত্য বলাকেই অভ্যাস করে নিয়েছে।” প্রদীপবাবু বলেন, “যে-রাজ্যের আর্থিক অবস্থা বেহাল বলে মুখ্যমন্ত্রীই দাবি করছেন, তাদের এই বাহুল্য মানায় না।” পার্থবাবুর পাল্টা মন্তব্য, “কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে তিক্ততা বাড়ানোর মূলে রয়েছে প্রদীপ ভট্টাচার্যের দল।
রাজ্যের প্রচুর প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে।”
সরকারের বর্ষপূর্তি নিয়ে আরও একটি সমস্যায় পড়েছে প্রশাসন। মেলা ও প্রদর্শনীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরকারি দফতরের বিভিন্ন স্তরের অফিসার ও কর্মীরা। ফলে দু’সপ্তাহ ধরে দফতরের কাজকর্ম কার্যত লাটে উঠেছে।
|