প্রি-পেড ট্যাক্সি নিলেই যাত্রীদের থেকে পরিষেবা-কর বাবদ নেওয়া হত ১০ টাকা। ওই টাকা জমা পড়ত রাজ্যের কোষাগারে। এ বার রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘সার্ভিস ট্যাক্স’-এর ওই টাকা আর সরাসরি রাজ্য কোষাগারে জমা পড়বে না। সংশ্লিষ্ট জেলাতেই জমা থাকবে পুলিশ কমিশনার ও জেলাশাসকের হেফাজতে। সেই টাকা ট্যাক্সি-পরিষেবার উন্নতিতেই খরচ করা হবে।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সম্প্রতি কলকাতা, হাওড়া, বিধাননগর ও শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটকে এই নির্দেশ পাঠিয়ে জানিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি সরকার স্বীকৃত সমিতি গঠন করতে হবে। যে সমিতির নেতৃত্বে থাকবেন জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনার। তাঁদের কাজ হবে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে সার্ভিস ট্যাক্স বাবদ দৈনন্দিন আদায় হওয়া টাকা জমা রাখার ব্যবস্থা করা।
ওই নির্দেশিকায় অবশ্য এ-ও জানানো হয়েছে যে, প্রি-পেড ট্যাক্সি পরিচালনা ও পরিষেবা-কর আদায় করবে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের পুলিশ। কিন্তু ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার পরে ওই টাকা জেলাশাসক বা পুলিশ কমিশনার তুলতে পারবেন না। এ জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতরের আইনানুগ অনুমতি নিতে হবে। কোনও প্রকল্প তৈরি করে পরিবহণ দফতরে পাঠানোর পরে তা অনুমোদিত হলে তবেই পুলিশ ও প্রশাসনকে যৌথ ভাবে কাজ করার জন্য সে টাকা দেওয়া হবে।
পরিবহণ দফতরের এক অফিসার বলেন, “জেলার পরিবহণ খাতে টাকা জোগাড় করার পদ্ধতি ছিল খুব জটিল। এখন অর্থ দফতর অনুমতি দিয়েছে, জেলা থেকে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য টাকা খরচে ভাল প্রস্তাব এলে, রাজ্য পরিবহণ দফতর তার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করবে। কাজ দ্রুত এগোবে।”
পরিবহণ দফতর বলছে, প্রি-পেড বুথ নিয়ে সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ট্যাক্সি কর্মচারী সংগঠন ও অন্যান্য সংগঠন এত দিন এই বুথগুলি নিয়ন্ত্রণ করত। টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও উঠত। এ জন্য গত সেপ্টেম্বরে রেল-পুলিশের হাত থেকে নিয়ে হাওড়া পুলিশের হাতে দেওয়া হয় হাওড়া স্টেশন চত্বর। পরে প্রি-পেড বুথের দায়িত্বও দেওয়া হয় হাওড়া সিটি পুলিশের হাতে। এতে সুফল মেলায় এ বার রাজ্য চাইছে প্রি-পেড বুথ থেকে আয় হওয়া টাকা সরকারি নিয়ন্ত্রণেই আলাদা ভাবে রেখে তা ট্যাক্সি পরিষেবা উন্নয়নের কাজে লাগাতে। আটটি নতুন প্রি-পেড বুথ চালু করতেও কমিশনারেটগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “প্রি-পেড বুথ চালাতে গেলে অর্থের প্রয়োজন। তাই সামান্য সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়। আমরা এখন চাইছি যাত্রীদের ওই টাকাতেই স্থানীয় ট্যাক্সি-পরিষেবার ও পরিবহণ পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ করতে। প্রি-পেড বুথের সংখ্যাও বাড়াতে চাইছি।”
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ রয়েছে পাঁচটি। হাওড়া, কলকাতা, বিধাননগর ও শিলিগুড়ি এই চারটি কমিশনারেট এলাকার শিয়ালদহ স্টেশন, হাওড়া স্টেশন, কলকাতা বিমানবন্দর, বাগডোগরা বিমানবন্দর ও বিধাননগর সিটি সেন্টারে রয়েছে সেই বুথ। শীঘ্রই কলকাতা স্টেশন, নিউটাউন-রাজারহাট, সল্টলেক সেক্টর ৩, সেক্টর ৫, টেকনোপলিস, সাঁতরাগাছি স্টেশন, শালিমার স্টেশন এবং নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে আরও আটটি প্রি-পেড বুথ গড়তে চায় রাজ্য। পরিবহণমন্ত্রী জানান, জেলাগুলিতে ওই সমিতি হলেই বুথগুলিতে স্মার্ট কার্ড-সহ সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।
|