|
|
|
|
আলাপুঝায় সম্মেলন |
তেপান্তর পেরিয়ে যাচ্ছেন মানিক, ব্রাত্য ভি এস |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
তিন রাজ্যের তিনটি শহর ছুঁয়ে দু’বার বিমান বদলে প্রায় সাড়ে বাইশশো কিলোমিটার উড়ান-দূরত্ব পেরিয়ে আসবেন প্রধান অতিথি। কিন্তু ঘরের মানুষ ব্রাত্য থাকবেন!
এমন আজব ঘটনাই ঘটতে চলেছে সিপিএমে!
সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের কেরল রাজ্য সম্মেলনের আসর এ বার বসতে চলেছে আলাপুঝায়। প্রধান অতিথি হিসাবে সেখানে আমন্ত্রিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরো
সদস্য মানিক সরকার। তিনি যাবেন বলে সম্মতিও জানিয়ে দিয়েছেন।
অথচ আমন্ত্রণ পৌঁছয়নি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের কাছে! আলাপুঝা যাঁর জন্মস্থান! এখনও যেখানে সিপিএমের নিচু তলার কর্মীরা ভি এস-কে ভগবানের মতোই মানেন!
পিনারাই বিজয়নদের সঙ্গে বিরোধের জেরে দলে এখন কোণঠাসা সিপিএমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভি এস। তাঁর তিন ব্যক্তিগত সঙ্গীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সদ্যই সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। খোদ ভি এস-কে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানোর সুপারিশ পলিটব্যুরোর গঠিত ৬ সদস্যের কমিশনের বিচারাধীন। এমতাবস্থায় নিজের জেলায় যুব সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে তাঁর ডাক না-পাওয়ার নেপথ্যে দলের গোষ্ঠী-রাজনীতির সমীকরণই দায়ী বলে মনে করছেন ভি এস-অনুগামীরা। এবং কেরলের বাইরেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি বড় অংশ গোটা ঘটনাপ্রবাহে বিস্মিত!
সিপিএম সূত্রের খবর, আলাপুঝায় আগামী ২১ থেকে ২৩ মে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলনে মানিকবাবু ছাড়াও দলের পলিটব্যুরো ও রাজ্য নেতৃত্বের তরফে আরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। ২৩ তারিখ ইএমএস স্টেডিয়ামে সমাবেশে প্রধান অতিথি মানিকবাবুই। শুধু ভি এসের নাম এখনও তালিকায় নেই! বিতর্ক এড়িয়ে সম্মেলনের আয়োজক কমিটির সভাপতি জি সুধাকরন শুধু বলছেন, “যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা সেইমতো
আয়োজন করছি। ভি এস-ই তো সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।” ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেরলের সাংসদ এম বি রাজেশও মন্তব্য এড়িয়ে যাচ্ছেন।
বিতর্কে যাচ্ছেন না মানিকবাবুও। আগরতলা থেকে শুক্রবার তিনি বলেছেন, “আমাদের এখান থেকে অনেকটা পথ। কিন্তু কেরল রাজ্যটা
খুব সুন্দর! যেতে ভাল লাগে। ২৩ তারিখের সমাবেশের পরেই আবার রওনা দেব আগরতলার উদ্দেশে।” বস্তুত, কেরলে গিয়ে একই সঙ্গে নিজের এক টুকরো অতীতও ঝালিয়ে নেবেন সিপিএমের প্রাক্তন ছাত্র-নেতা মানিকবাবু। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এসএফআইয়ের প্রথম সর্বভারতীয় সভাপতি সি ভাস্করন মারা গিয়েছেন বছর দু’য়েক আগে। ওঁর ছেলে প্রয়াত বাবার স্মরণে একটা অনুষ্ঠান করছেন কোচিতে। ২২ তারিখ সেখানে আমি যাব।” কোচি থেকেই যাবেন আলাপুঝা। ডিওয়াইএফআইয়ের এই সম্মেলন অবশ্য আরও আগেই হওয়ার কথা ছিল। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠক এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় সম্মেলনও পিছিয়েছে।
ভি এসের প্রতি শীতল বার্তায় সিপিএমে তাঁর অনুগামীরা অবশ্যই ব্যথিত। তবে ভি এস নিজেই কোণঠাসা থাকায় কেউ এখনও বিশেষ গলা চড়াচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, আলাপুঝা জেলার পান্নপ্রা-ভায়লার আন্দোলন কমিউনিস্ট ইতিহাসে বহুচর্চিত। সেই আন্দোলনে যোগ-দেওয়া এক ছাত্রই আজকের ভি এস। যাঁর আদি বাড়ি পান্নপ্রাতেই! সেই প্রবীণ নেতাকে নিজ ভূমে ব্রাত্য রাখায় স্বভাবতই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
ভি এস-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য কমিটির বৈঠকে এসে স্বয়ং প্রকাশ কারাট নির্দেশ দিয়েছেন, নেতা-কর্মীরা কেউই এমন কোনও কাজ করবেন না, যাতে দলের ঐক্যে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ পার্টির এ-ই কি নমুনা?”
সিপিএম সূত্রেই আরও ইঙ্গিত, এ বারের সম্মেলন থেকে যুব সংগঠনের সম্ভাব্য রাজ্য সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক এম স্বরাজ। দলে যাঁর উত্থানের একমাত্র সিঁড়ি ছিল প্রবল ভি এস-বিরোধিতা! তা-ও এতটাই যে, সিপিএমের বিগত রাজ্য সম্মেলনে দল-বিরোধী কাজের দায়ে ভি এসের ‘প্রাণদণ্ড’ দাবি করে বসেছিলেন! ভি এস-অনুগামীরা বলছেন, স্বরাজদের হাতে সংগঠনের ভার থাকলে তাঁরা যে দলের জনপ্রিয়তম নেতার কাছে মাথা নিচু করবেন না, তাতে অবশ্য বিরাট বিস্ময়ের কিছু নেই!
|
পুরনো খবর: হারানো যাবে না ভি এস-কে, বলছেন ছায়াসঙ্গীরা |
|
|
|
|
|