|
|
|
|
হারানো যাবে না ভি এস-কে, বলছেন ছায়াসঙ্গীরা
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
এক জন তাঁর লাঠি। আর এক জন তাঁর কণ্ঠ। দলের এক ঘায়ে জীবন সায়াহ্নে এসে দুই-ই হারিয়েছেন ভেলিক্কাত্থু শঙ্করন অচ্যুতানন্দন! ঠিক করেছেন, আপাতত একাই চলবেন।
এবং এই বিচ্ছেদ মুহূর্তে সম্ভবত ভি এসের চেয়েও বেশি বিমর্ষ তাঁর যষ্টি এবং কণ্ঠ! সমস্বরে তাঁরা দাবি করছেন, দলে তাঁদের ঠিক বিচার
হল না। কিন্তু ভি এসের সম্মানের
কথা মাথায় রেখেই তাঁরা আর
তিক্ততা বাড়াতে চাইছেন না। সরেই দাঁড়াচ্ছেন আপাতত।
কেরলের বিরোধী দলনেতার ব্যক্তিগত সহকারী এ সুরেশ, প্রেস সচিব কে বালকৃষ্ণন এবং অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব ভি কে শশীধরনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সদ্য সিলমোহর দিয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। দলে বিস্তর লড়াই চালিয়েও ভি এস তাঁদের শাস্তি ঠেকাতে পারেননি। ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল তাড়িয়ে দিলেও তিন জনকে নিজের দফতরে নিজের দায়িত্বে রেখে দেবেন!
কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট বলে দিয়েছেন, তা আবার হয় নাকি?
দল যাঁদের নিয়োগ করেছিল, দলের সিদ্ধান্তে তাঁদের অপসৃত হতেই হবে। অগত্যা তিরুঅনন্তপুরম থেকে বালকৃষ্ণন আনন্দবাজারকে জানাচ্ছেন, দায়িত্ব থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আনুষ্ঠানিক আর্জি জানিয়ে রাজ্য সরকারি দফতরে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। ভি এসের সঙ্গে তাঁদের ইনিংসের মেয়াদ আর বড় জোর দু-তিন দিন। |
এখন বিতাড়িত। অচ্যুতানন্দনের দুই ছায়াসঙ্গী সুরেশ ও বালকৃষ্ণন।
|
শাস্তিপ্রাপ্ত ত্রয়ীর মধ্যে সুরেশ ছিলেন ভি এসের ছায়াসঙ্গী। গাড়িতে-সিঁড়িতে উঠতে, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে নবতিপর নেতার পাশে সর্বক্ষণ সুরেশের সাহায্যের হাত। বালকৃষ্ণন আবার ভি এসের সঙ্গে যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক সেতু। মুখ্যমন্ত্রী থাকুন বা বিরোধী দলনেতা, তাঁর বক্তব্য জনসমক্ষে পৌঁছে দেওয়া বা প্রশ্নের জবাব জোগাড় করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল বালকৃষ্ণনেরই। তাঁদেরই এখন দলের গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার দায়ে শূলে চড়িয়েছেন পিনারাই বিজয়নেরা। ভি এস অভিযোগ করেছেন, ভাইকম বিশ্বমের নেতৃত্বে কেরল রাজ্য কমিটির তদন্ত কমিশন তাঁর সঙ্গীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগই দেয়নি। একই কথা বলছেন সুরেশরা। অভিমানে এবং ক্ষোভে এ-ও জানাচ্ছেন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোর কোনও ইচ্ছা এখন নেই। সুরেশের কথায়, “আমি ১৩ বছর ভি এসের সঙ্গে আছি ছায়ার মতো। আর থাকতে পারব না, ভেবে কষ্ট হচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগছে, দু-দু’টো কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমাদের তাড়ানো নিয়েই এত আলোচনা!” শাস্তিটা কি শুধু তাঁদের জন্য? না আসলে ভি এসের জন্য বার্তা? সুরেশ বলছেন, “যদি এঁরা (বিজয়নেরা) মনে করে থাকেন, এই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে ভি এস-কে বাগে আনতে পারবেন, ওঁদের জন্য শুভকামনা থাকল! মানুষ জানে, ভি এস কী!”
বালকৃষ্ণন আবার জানেন না, তাঁর অপরাধটা কী! তাঁর প্রশ্ন, “আমি তো প্রেস সচিব। ভি এস কী বলছেন, সেটা মিডিয়াকে জানানোই আমার কাজ। আমার নিজের তো কোনও ভূমিকাই নেই। যা দায়িত্ব ছিল, তার বাইরে কিছু করিওনি। করতাম সরকারি কাজ। সংগঠনের নয়।”
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েছিলেন? আবার আবেদন করবেন? “নাহ্! ও সব কথা আর আলোচনা করতে চাই না। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোনও আবেদন করছি না। তবে পার্টি যে নতুন কমিশন করেছে, তারা ডাকলে যাব।
সরকারের কাছে ভি এসের দফতরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি।”
বস্তুত, ভি এস-ও আর সুরেশ বা বালকৃষ্ণনদের সঙ্গে রাখছেন না। দিল্লির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক পর্যন্ত সুরেশ অবশ্য সঙ্গী ছিলেন। ভি এসের যুক্তি, তখনও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়নি। চার মাসের বিরামে ইতি টেনে মঙ্গলবার থেকে তিরুঅনন্তপুরমে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ফের যোগ দিয়েছেন ভি এস। সঙ্গে শুধুই নিরাপত্তা কর্মী। বৈঠকে আছেন স্বয়ং কারাট এবং পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য এস আর পিল্লাই। যাঁরা দু’জনেই ভি এস-কাণ্ডে দলের ৬ পলিটব্যুরো সদস্যকে নিয়ে গঠিত কমিশনের (সিপিএমের ইতিহাসে বেনজির) সদস্য। গোটা কমিশনই কি তদন্তের কাজে কেরল যাবে? কমিশনের এক সদস্য বলছেন, “এখনও ঠিক হয়নি। দেখা যাক!”
খোদ ভি এস কী বলছেন? নিরাপত্তা অফিসারের মাধ্যমে যোগাযোগ করা গেলেও এই মুহূর্তে মুখ খুলতে তিনি নারাজ। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, “কমিশন যখন একটা হয়েছে, সেখানেই বলার সুযোগ পাব আশা করি।” লাভালিন এবং টি পি চন্দ্রশেখরন হত্যা-মামলা নিয়ে নতুন করে সব তথ্য কমিশনে জমা
দিতে চান, দলের ঘনিষ্ঠ মহলে তা-ও জানিয়ে রেখেছেন।
লাঠি গিয়েছে। কণ্ঠ গিয়েছে। তবু বোঝা যাচ্ছে, ভি এস আছেন ভি এসেই!
|
পুরনো খবর: ভর্ৎসনা, ফের শাস্তি ভিএস-কে |
|
|
|
|
|