ভোট যত এগোচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি।
পবন বনশল ও অশ্বিনী কুমারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে সংসদের গোটা অধিবেশনটিই স্তব্ধ রাখল বিজেপি। এখন সোহরাবুদ্দিন মামলায় সিবিআই যখন ধীরে ধীরে নরেন্দ্র মোদী-বসুন্ধরা রাজের দিকে এগোচ্ছে, সেই সময় কংগ্রেসও পাল্টা অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ না হলেও ভোট-বছরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না কংগ্রেস। আবার মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় যুব কংগ্রেসও বিজেপি দফতরের সামনে ‘আইনা দিখাও’ আন্দোলন শুরু করেছে। এত দিন প্রধানমন্ত্রী ও বনশলের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল বিজেপি।
মনমোহন সরকারের দুই মন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে যে বিজেপি এত দিন সরব ছিল, আজ তাদের বিরুদ্ধেই একাধিক অভিযোগ ওঠায় কিছুটা ব্যাকফুটে দল। গত কালই রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা গুলাবচাঁদ কাটারিয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় চার্জশিট দেওয়ায় আজ দিল্লি ছুটে আসেন বসুন্ধরা রাজে। রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য যাত্রায় বেরিয়েছেন বসুন্ধরা। একদা তাঁর কট্টর বিরোধী কাটারিয়া বসুন্ধরা সরকারেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। বসুন্ধরাও গুজরাতের দায়িত্বে ছিলেন। বিজেপির আশঙ্কা, প্রথমে মোদীর প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও এখন রাজস্থানের নেতা কাটারিয়াকে সিবিআই যে ভাবে জড়াচ্ছে, অচিরেই তার আঁচ পড়বে স্বয়ং মোদীর উপরে। সে কারণে আজ সকালেই রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি ও বসুন্ধরা মিলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। বিপাকে পড়ে দলে নিজের প্রতিপক্ষেরও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বসুন্ধরা। বিজেপির আশঙ্কা, ললিত মোদীর দুর্নীতির প্রশ্নেও ভবিষ্যতে বসুন্ধরাকে জড়ানো হতে পারে।
এ দিন জেটলি সিবিআইয়ের নথি ঘেঁটে বলেন, অমিত শাহকে গ্রেফতারে উদ্দেশ্য ছিল মোদীকে ছোঁয়া। সেটি মিথ্যা মামলা ছিল বলেই আজ অমিতকে জামিন দিতে হয়েছে। কাটারিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিটও রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বসুন্ধরাকে বিপাকে ফেলার চক্রান্ত। একই ভাবে অন্য একটি ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় রাজস্থানের অন্য এক বিজেপি নেতা রাজেন্দ্র রাঠৌরকেও ফাঁসানো হয়েছে। যেখানে খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল লিখিত ভাবে বলেছেন, রাঠৌরকে অভিযুক্ত করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে নেই। বিজেপির বিরুদ্ধে এই ধারাবাহিক অভিযোগের মোড় ঘোরাতে দলের নেতৃত্ব সিবিআইকেই আক্রমণ করেছেন। আর তাতে হাতিয়ার করেছেন সিবিআই-প্রধান রঞ্জিৎ সিন্হার মন্তব্যকে।
কাল রঞ্জিৎ সিন্হা বলেছেন, পবন বনশলের বিরুদ্ধে রেল-দুর্নীতি মামলায় কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। জেটলির বক্তব্য, “বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ না থাকলেও গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে উঠেছে সিবিআই। অথচ বনশলকে জেরা না করেই সিবিআই-প্রধান বলে দিলেন, তাঁর কোনও দোষ নেই। যদিও বনশলের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে।” আক্রমণের তির বিজেপির দিকে ঘুরে যাওয়ায় এখন কংগ্রেসও পাল্টা হানার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। দলের মুখপাত্র শাকিল অহমেদ বলেন, “যখন পবন বনশলের ভাগ্নের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল, তখন সিবিআই ঠিক। আর এখন বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই সিবিআই ভুল হয়ে গেল!”
নির্বাচন এগিয়ে এলেই দুর্নীতি নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বাড়ে। বোফর্স থেকে হর্ষদ মেটা, তারই প্রমাণ। পশ্চিমবঙ্গেও এখন অর্থলগ্নি সংস্থার সংস্রব নিয়ে সিপিএম ও তৃণমূল পারস্পরিক দোষারোপ করে চলেছে। অতীতে লালু-মুলায়ম-মায়াবতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকেও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকরের দাবি, “মনমোহন সিংহ সরকারের মতো এত দুর্নীতি আর কোনও সরকারে হয়নি।” কংগ্রেসের নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “প্রমোদ মহাজন যখন টেলিকম মন্ত্রী ছিলেন, তখনও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অনন্ত কুমার থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা বাজপেয়ী নেননি। জর্জ ফার্নান্ডেজের বিরুদ্ধে কফিন কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেও না।”
কিন্তু অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনী প্রচারে দুর্নীতিকে হাতিয়ার করা হলেও আমাদের দেশে এ’টি আম জনতার বিষয় হয় না। মানুষের কাছে দুর্নীতির বিষয়টি অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে।
|