|
|
|
|
৩০ লাখ মুক্তিপণ চেয়ে এসেছিল ফোন |
আইপিএল বাজি হেরে টাকার জন্য ভাইকেই খুন
নিজস্ব প্রতিবেদন |
খেলা থেকে খুন।
আইপিএল-এ বাজি ধরে দশ লাখ টাকা হেরে গিয়েছিল যুবকটি। শোধ তুলতে সে অপহরণ করল নিকট সম্পর্কের ভাইকে। শেষে ধরা পড়ার ভয়ে নৃশংস ভাবে খুনও করল তাকে।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা জিতেন্দ্র রাঙ্খা পেশায় হিরের ব্যবসায়ী। সোমবার দুপুরে হঠাৎই একটা ফোন পান তিনি। “আপনার ছেলে আদিত্যকে অপহরণ করা হয়েছে। ফেরত পেতে হলে ৩০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।” কেউ মজা করছে ভেবে তিনি বলেন, “তুমি কে? কেন এ রকম বাজে রসিকতা করছ?” গলাটা জানায়, তার নাম রাকেশ।
এই অবধি শুনেই রেগেমেগে ফোন রেখে দিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। বাড়ির বাইরে ছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে স্ত্রীকে ফোন করে জানতে চান, ছেলে কোথায়। স্ত্রী জানান, জিতেন্দ্রর বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে একটু আগেই একটা ফোন এসেছিল। ফোনে বলা হয়েছে, জিতেন্দ্র তার হাত দিয়ে একটি চাবি পাঠিয়েছেন। জিতেন্দ্রর স্ত্রী সেই চাবি আনতে আদিত্যকে পাঠিয়েছেন।
আর দেরি করেননি জিতেন্দ্র। তাঁর ১৩ বছরের ছেলের অপহরণের ঘটনা ডায়েরি করাতে ছুটে যান ভিপি রোড থানায়। সঙ্গে নিয়ে যান, আদিত্যর নিকট সম্পর্কের দাদা হিমাংশু রাঙ্খাকে। জিতেন্দ্র তখনও জানতেন না নাটের গুরু হিমাংশুই।
সন্দেহ জাগতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। বাড়ি আসার কিছু ক্ষণ পরে জিতেন্দ্রকে ফের থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এ বার অন্য একটি গাড়ি নিয়ে বেরোচ্ছিলেন তিনি। জিতেন্দ্রর চোখ গিয়েছিল, গাড়িতে পড়ে থাকা আদিত্যর এক পাটি চটির দিকে। জিতেন্দ্র পুলিশকে জানান, গাড়িটি সম্প্রতি এক বন্ধুর থেকে ভাড়া নিয়েছিল হিমাংশু। তখনই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ঢুকে যায় সে।
পুরো ঘটনাটা সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছে আজ। এ দিনই পুলিশ হিমাংশু এবং তার সহকারী ব্রিজেশ সিঙ্ঘভিকে আদালতে হাজির করে। জানা গিয়েছে, ২৮ বছর বয়সী হিমাংশু এমবিএ গ্র্যাজুয়েট। ব্রিজেশের সঙ্গে সে ব্যবসা করে। পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেছে, আইপিএল-এ বাজি ধরে ১০ লক্ষ টাকা হেরে গিয়েছিল। তার পর এক সপ্তাহ ধরে ছক কষে দুই বন্ধু। ঠিক করে, কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা আদায় করা হবে। এ সময়ই তাদের কানে আসে, জিতেন্দ্র খুব শিগগিরি ৩০ লাখ টাকা হাতে পাবেন। অতএব কাকে অপহরণ করা হবে, সে নিয়ে আর চিন্তা-ভাবনা করতে হয়নি তাদের।
সোমবার প্রথমে পাবলিক বুথ থেকে ব্রিজেশ চাবির কথা বলে ফোন করেছিল আদিত্যদের বাড়িতে। হিমাংশু ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে আনে। প্রথমে তারা আদিত্যকে সিয়ন এলাকায় রেখেছিল। পরে ধরা পড়ার ভয়ে তারা আদিত্যকে রায়গড় জেলায় সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারেনি হিমাংশু। জিতেন্দ্র যে তার বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক করেছে, সে কথা জানা মাত্র ভাইকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। সেই মোতাবেক অস্ত্রও জোগাড় করা হয়।
মুম্বই পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণ প্রকাশ জানিয়েছেন, প্রথমে ভাইকে বেধড়ক মারধর করে হিমাংশু। তার পর আদিত্যর কব্জি কেটে দেয় ব্রিজেশ। কিন্তু তখনও আদিত্য বেঁচে রয়েছে দেখে মুম্বইয়ের এক প্রান্তে পানভেলের একটি জনমানবশূন্য এলাকায় তাকে নিয়ে যায় হিমাংশুরা। ঘাসের উপর ফেলে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয় তাকে। পানভেলের ওই এলাকা থেকে আদিত্যর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রকাশ বলেন, “দু’জনেই অপরাধ স্বীকার করেছে। তাদের বয়ানের উপর ভিত্তি করেই গ্রেফতার করা হয়েছে দুই যুবককে।” |
|
|
|
|
|