|
|
|
|
নীতীশের প্রতি দরাজ দিল্লি, পটনা মাত লালুর
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও পটনা |
বিহার রাজনীতিতে চির প্রতিদ্বন্দ্বী লালুপ্রসাদ আজ যখন পটনায় নীতীশের অপশাসনের বিরুদ্ধে সরব, তখন দিল্লিতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে নীতীশকে পাশে পেতে সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপাল কংগ্রেস নেতৃত্ব।
চলতি বাজেটে বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদার দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তার পরে জেডিইউ-কংগ্রেস দূরত্ব কমতে শুরু করেছে। আজ পিছিয়ে পড়া রাজ্যের মাপকাঠি কী হবে, তা ঠিক করতে রঘুরাম রাজনের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। যাকে কার্যত নীতীশের জয় বলেই মনে করছেন জেডিইউ নেতৃত্ব।
বিহারের জন্য বিশেষ মর্যাদার দাবিতে গত আট বছর ধরে তৎপর নীতীশ। চলতি বাজেটে সেই দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন চিদম্বরম। পটনায় নীতীশকে পাশে বসিয়ে কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করে চিদম্বরম আশা প্রকাশ করেছিলেন, “বিহার সেই মাপকাঠি পূরণ করতে পারবে বলেই আমার আশা।” আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা রঘুরাম রাজনের নেতৃত্বে ছ’সদস্যের কমিটি গঠনের ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রক জানিয়ে দেয়, কোন কোন শর্তের ভিত্তিতে কোনও রাজ্য পিছিয়ে পড়ার তকমা পাবে, কমিটি তা আগামী দু’মাসের মধ্যে ঠিক করবে। এতে ঘনিষ্ঠ মহলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নীতীশ।
রাজ্যের বার্ষিক যোজনার আয়তন ঠিক করতে এক দিনের সফরে আজ দিল্লি এসেছিলেন নীতীশ। যোজনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের যোজনা আয়তন প্রায় ৩৪% বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র (পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যা ১৭%)। পাশাপাশি নীতীশের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিহারকে গ্রামোন্নয়নের একাধিক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাহায্যের আশ্বাস
দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির একটি বড় অংশ নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে চাইলেও জেডিইউ তীব্র আপত্তি জানিয়ে রেখেছেন। এমনকী, এনডিএ ছাড়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এই ফাটলকে কাজে লাগাতে কংগ্রেস তৎপর। এ হেন পরিস্থিতিতে আজ নীতীশের প্রায় সব দাবি মানায় দু’দলের সম্পর্ক আরও মজবুত হল বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। যদিও কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদের কথায়, “বিহারে জোট করে ভোট লড়ার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সময় এলে সিদ্ধান্ত হবে।”
তবে নীতীশ যখন দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে দর কষাকষিতে ব্যস্ত, তখন পটনায় কার্যত বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন ইউপিএ-র এত দিনের সঙ্গী লালুপ্রসাদ। আজ ছিল লালুর ‘পরিবর্তন যাত্রা’র সমাপ্তি সভা। ভিড় যদি মাপকাঠি হয়, তবে বলতেই হবে লালুর সভায় জনসমুদ্রের খবরে দিল্লিতে বসেও নীতীশের ভ্রু-কুঞ্চনের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আজ সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষের গন্তব্য ছিল পটনার গাঁধী ময়দান। ভিড় ময়দান ছাপিয়ে ছড়িয়ে যায় শহরের সর্বত্র। ফলে কার্যত বন্ধের চেহারা নেয় পটনা। আজকের দিনটিকে জেডিইউ নীতীশের ‘সাফল্যের দিন’ বলে চিহ্নিত করলেও এই অপ্রত্যাশিত ভিড় দেখে স্বভাবতই উৎফুল্ল লালুপ্রসাদ ঘোষণা করেন, “আজ থেকেই নীতীশ জমানার পতন শুরু হয়ে গেল।” পথন না উত্থান, তা অবশ্য ভবিষ্যত বলবে। কিন্তু যোজনা কমিশন আজ বিহারের ৩৪ হাজার কোটি টাকার যোজনা আয়তন মঞ্জুর করে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৪.৪ শতাংশ বেশি। গতবার যোজনা আয়তনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ছাব্বিশ হাজারের কাছাকাছি। আজ বৈঠক শেষে পরিকল্পনা রূপায়ণে বিহার সরকারের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিহারের উল্লেখজনক বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সাহায্যের পরিমাণ কমেছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ওই রাজ্যের অর্থনীতি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। গোটা দেশের তুলনায় কৃষি ক্ষেত্রে বিহারের বৃদ্ধি আশাজনক। সামাজিক পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রেও তুলনায় বিহারের ফল ভাল।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সম্প্রতি বিহারের জন্য পিছিয়ে পড়া এলাকা-উন্নয়ন তহবিল থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত নেয়। দাবির থেকে আট হাজার কোটি টাকা কম পেলেও মোটের উপর ওই মঞ্জুরিতে নীতীশ যে সন্তুষ্ট তা আজ বুঝিয়ে দেন তিনি। নীতীশ বলেন, “যে অর্থ পেয়েছি তা কোন খাতে খরচ করা হবে তা দেখতে হবে। তবে রাজ্য সরকার বিদ্যুতের পরিকাঠামো ও সড়ক নির্মাণে ওই অর্থ ব্যবহার করার কথা ভেবে রেখেছে।” বিহারের সড়ক নির্মাণ খাতেও বাড়তি অর্থ মঞ্জুর করার ইঙ্গিত দেন জয়রাম। চলতি আর্থিক বছরে বিহার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা যোজনায় ছ’হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে কেন্দ্রকে। আজ তা বাড়িয়ে ছয়ের পরিবর্তে দশ হাজার কিলোমিটার সড়ক তৈরির প্রস্তাব দেন নীতীশ। প্রাথমিক ভাবে তাতে সম্মতি জানিয়েছেন জয়রামও।
|
পুরনো খবর: জখম লালুকে ফোন করে নীতীশকে বার্তা মোদীর |
|
|
|
|
|