|
|
|
|
সস্ত্রীক গ্রেফতার ‘জীবন সুরক্ষা’র কর্ণধার |
৮ মাস ধরে পালিয়ে, নাম ভাঁড়িয়ে বারাসতে ঘর ভাড়া নেন চন্দন
নিজস্ব সংবাদদাতা • বারাসত ও গুয়াহাটি |
পালিয়ে পালিয়ে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেন না চন্দন দাস। গত রাতে বারাসত থানার পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালিয়ে বারাসত থেকে ‘জীবন সুরক্ষা’ গোষ্ঠীর প্রধানকে সস্ত্রীক গ্রেফতার করল অসম সিআইডি।
প্রায় আট মাস পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিলেন ওই দম্পতি। ওঁরা গ্রেফতার হওয়ায় অসমে ১৫০০ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে পাঁচ প্রধান অভিযুক্তকেই হাতে পেল পুলিশ।
অসম সিআইডি সূত্রে খবর, চন্দন এবং তাঁর দুই ভাই উত্তম ও আরজুর সঙ্গে এনএসসিএন (আই এম) বাহিনীর কয়েক জন বড় নেতার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্রেই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা খোলেন চন্দনরা। অভিযোগ, আমানতকারীদের টাকার অনেকটাই ক্যাম্প হেব্রন-এ আইএমের সদর দফতরে পৌঁছত। সিআইডির এক তদন্তকারী অফিসার জানান, আমানতকারীদের টাকায় বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এর প্রমাণ মেলেনি। তদন্তকারীরা জানান, চন্দন প্রথমে ডিমাপুরের নাগারজান রোডে থাকতেন। পরে লামডিং কলেজ রোডে নতুন বাড়ি করে চলে আসেন। অর্থলগ্নি সংস্থার পাশাপাশি চন্দন পশুখামার তৈরি করেছিলেন। আবাসন ব্যবসাতেও নামেন।
২০১০ থেকে ‘জীবন সুরক্ষা’র বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ প্রকাশ পেতে থাকে। নিজেদের জমানো টাকা ফেরত চাইতে শুরু করেন আমানতকারীরা। অভিযোগ, ওই সংস্থা তা ফেরত দিতে পারেনি। শুরু হয় বিক্ষোভ। সংস্থার চার অধিকর্তা চন্দন, উত্তম আচার্য, আরজু আচার্য ও অশোক চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়ে চার জনই গা-ঢাকা দেন। তার পর থেকে অসমের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতারণার অভিযোগ আসতে থাকে। গত বছর ‘জীবন সুরক্ষা’র বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন তরুণ গগৈ। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ৫২টি মামলা দায়ের হয়। গত বছরই দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ধরা পড়েন উত্তম, অশোক ও আরজু। কিন্তু ধরা দেননি চন্দন এবং সংস্থার আরও এক অধিকর্তা, চন্দনের স্ত্রী সঙ্গীতাদেবী। ‘জীবন সুরক্ষা’ গোষ্ঠীর কর্মীকল্যাণ সমিতিও এর পর চন্দনের সন্ধান শুরু করে। পাঁচ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
গত কয়েক মাসে অসমে ‘জীবন সুরক্ষা’র বহু অফিস ‘সিল’ করেছে পুলিশ। সংস্থার কম্পিউটার ঘেঁটে বার করেছে অজস্র তথ্য। ‘জীবন সুরক্ষা’র ৩০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ‘সিল’ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও চন্দন-সঙ্গীতা-উত্তম-অশোক-আরজুর অ্যাকাউন্ট এবং যাবতীয় সম্পত্তি ‘সিল’ করতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছিল অসম পুলিশ।
সম্প্রতি সিআইডি খবর পায়, চন্দনবাবুরা বারাসতে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। কাল রাত পৌনে ২টো নাগাদ বারাসাত পুলিশ ও অসম সিআইডি যৌথ ভাবে ন’পাড়ায় মঞ্জুলা দে’র বাড়িতে হানা দেয়। নাম ধরে ডাকার পর চন্দনবাবুই দরজা খোলেন। ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেও। সিআইডির এক অফিসার জানান, তল্লাশি চালিয়ে ওই ঘর থেকে প্রায় সওয়া ৪ লক্ষ টাকা, দুটি ল্যাপটপ, কয়েকটি মোবাইল ও একটি চেকবই পাওয়া যায়। দীপক দাস নামে ওই ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন চন্দনবাবু। তাঁর কাছে দীপক দাসের নামে একটি প্যান কার্ডও মিলেছে। সঙ্গীতাদেবীর কাছ থেকেও দুটি প্যান কার্ড উদ্ধার হয়। তার একটিতে নাম ছিল রূপা দাস। বাড়ির মালিক মঞ্জুলা দেবী জানান, পাড়ায় তাঁর পরিচিত কিশলয় অনাথ আশ্রমের কর্মী রত্না চক্রবর্তী কয়েক মাস আগে দাস দম্পতিকে নিয়ে ঘর ভাড়া চাইতে এসেছিলেন। আগে রত্নাদেবীর বাড়িতে থাকতেন চন্দনবাবুরা। চন্দনবাবু ১০ হাজার টাকা আগাম দেন।
আজ বারাসতের আদালত থেকে তিন দিনের ‘ট্রানজিট রিম্যান্ড’ নিয়ে সন্ধ্যায় চন্দন-সঙ্গীতাকে নিয়ে গুয়াহাটি পৌঁছন সিআইডি অফিসাররা। চন্দনবাবুর দুই ছেলেকেও অসমে নিয়ে গিয়ে সঙ্গীতাদেবীর ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চন্দনবাবুকে সস্ত্রীক উলুবাড়িতে সিআইডি-র সদর দফতরে রাখা হয়েছে। কর্মীকল্যাণ সমিতির সভাপতি রঞ্জিৎ মুশাহারি বলেন, “সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা চূড়ান্ত অপমান, হুমকির মধ্যে বেঁচে আছি। অসমের দেড় কোটি আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই কোনও উপায় খোঁজা হবে।” সমিতির আইনি উপদেষ্টা গৌতম পাটোয়ারি জানান, চন্দনবাবুর সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁর কাছে চন্দনবাবু দাবি করেছেন, অসমে সংস্থার ম্যানেজাররা প্রতারণা করাতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জমি ও সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ইচ্ছুক। |
|
|
|
|
|