পাথর বোঝাই করা নিয়ে শ্রমিক-মালিক বিরোধের জেরে এখনও অচলাবস্থা কাটেনি নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে। কুড়ি দিনেরও বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নিযুক্ত প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক বিপাকে পড়েছেন। সম্প্রতি প্রশাসনিক স্তরে শ্রমিক ও মালিক পক্ষকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হলেও এই শিল্পঞ্চল নিয়ে অচলাবস্থা কাটেনি।
নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলের এই সমস্যা কেবলমাত্র ১২০টি ক্রাশারে। দীর্ঘদিন থেকে ওই ক্রাশারগুলিতে যে সমস্ত ট্রাক বা গাড়ি আসে সেখানে পাথর বোঝাই করার জন্য আইএনটিউসি ও টিইউসিসি শ্রমিক সংগঠনের শ্রমিকেরা কাজ করেন। উভয় সংগঠনের দাবি, ৩৬০ জন করে মোট ৭২০ জন শ্রমিককে ওই ১২০টি ক্রাশারে কাজ দেওয়ার জন্য ১৯৯৯ সালে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু মালিক পক্ষ ক্রাশার চালু অবস্থায় ওই বছর থেকে কাজ দেয়নি। রামপুরহাট মহকুমা শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১২টি ক্রাশারে ৬ জন করে মোট ৬৭২ জন শ্রমিককে কাজ দিতে পেরেছিল। বাকি ৪৮ জন শ্রমিককে কাজ দিতে পারেনি মালিক পক্ষ। এই নিয়ে মাঝে মধ্যে এই পাথর শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। নলহাটি স্টোন মাইনস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপসকুমার যাদব বলেন, “বর্তমানে অনেক ক্রাশার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ ক্রাশারগুলি চালু না হওয়া পর্যন্ত ওই সমস্ত কারখানায় নতুন করে কাজ দেওয়া যায়নি।” তাঁর দাবি, “ক্রাশার যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছে তেমনি কিছু শ্রমিক বয়সের কারণে বা অন্য কোনও কারণে কাজ করছেন না। তাঁদের এককালীন টাকা দিতে চাইলেও শ্রমিক পক্ষ রাজি হচ্ছে না। তা ছাড়া, ২০১০ সালে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মালিক পক্ষ মেনে চলছে। কিন্তু শ্রমিক পক্ষ তা মানছে না।”
টিইউসিসি-র পক্ষে আকবর শেখের পাল্টা অভিযোগ, “কাগজে কলমে চুক্তির পরে ১১২টি ক্রাশারে কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ৮৪টি ক্রাশারে কাজ দিয়েছিল। পরে আন্দোলনের জেরে ১০১টি ক্রাশারে কাজ দেয়। আমরা চাই ১২০টি ক্রাশারে কাজ দেওয়া হোক।” চেষ্টা করেও অপর শ্রমিক সংগঠন আইএনটিউসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার (রামপুরহাট) অসিতবরণ রায় বলেন, “বুধবার পুলিশপ্রশাসন-সহ সব পক্ষকে নিয়ে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে পাথর শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থা রেখে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শ্রমিক পক্ষ তাতে রাজি না হওয়া জট কাটছে না।” ফের আলোচনার মাধ্যমে জট কাটানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায়।
|
