|
|
|
|
রোজ ভ্যালির ডিরেক্টর ধৃত, থানায় চড়াও এজেন্টরা |
আশিস বসু • আগরতলা |
গত কাল পর্যন্ত যে সব আমানতের মেয়াদ সম্পূর্ণ হয়েছে, সেই সব আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে! যাঁরা লগ্নিকৃত টাকার ‘প্রি-ম্যাচিওরিটি’ দাবি করছে, তাঁদেরও টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে! তার পরেও কী কারণে সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান, সেটা বুঝতে পারছেন না ত্রিপুরায় রোজ ভ্যালির এজেন্টরা। রাজ্যে সংস্থার কর্তাদের ধরপাকড়ের ফলে কোনও টাকাই যে আমানতকারীরা ফেরত পাবেন না, এই যুক্তিতে রোজভ্যালির এজেন্টরা থানায় চড়াও হলেন। থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে পুলিশের লাঠির সামনেও পড়লেন। শেষ পর্যন্ত নিজেদের পিঠ বাঁচাতে এবং লগ্নিকারীদের স্বার্থেই এজেন্টরা ‘অনশন’-এর হুমকিও দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের সামলাতে গত কাল রাত থেকে শহরের কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে।
ত্রিপুরায় বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির কার্যকলাপের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের জেরে জোরদার প্রশাসনিক অভিযান শুরু হয়েছে। গত কাল এ রাজ্যে ‘রোজ ভ্যালি’ সংস্থার প্রধান এবং সংস্থার ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স’-এর অন্যতম সদস্য অশোক সাহাকে গ্রেফতার করা হয়। |
|
থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অশোক সাহা এবং অনুপম ভট্টাচার্যকে। —নিজস্ব চিত্র |
ধরা পড়েছেন ওই সংস্থার আগরতলা শাখার ম্যানেজার অনুপম ভট্টাচার্যও। আজ তাঁদের আদালতে তোলা হয়। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মানিকলাল দাস জানান, ধৃতদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রেখেই জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়েছে। সংস্থার প্রধান কার্যালয় থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। অন্য একটি সংস্থা ‘হিমাঙ্গিনী ইনফ্রাকন’-এর দুই কর্তাকেও পুলিশ আটক করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “আরবিআই বা সেবি-র অনুমতি ছাড়াই এ রাজ্যে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছে রোজ ভ্যালি। কীসের ভিত্তিতে তা করা হয়েছে সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি ওই সংস্থার কর্তারা।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিপুরায় ‘রোজ ভ্যালি’-ই সবচেয়ে বড় আমানত সংগ্রহকারী সংস্থা হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ইতিমধ্যেই ওই সংস্থা কয়েকশো কোটি টাকা এই রাজ্য থেকে সংগ্রহ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সংস্থার বিরুদ্ধে আমানতকারীদের তরফে কোনও অভিযোগ থানায় বা প্রশাসনের কাছে জমা পড়েনি।
গত কাল এবং আজ ‘রোজ ভ্যালি’র সদর দফতরে পুলিশি অভিযান চলাকালীন সংস্থার এজেন্ট এবং অফিসকর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দুই কর্তাকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদ জানান এজেন্টরা। তাঁদের মুক্তির দাবিতে কয়েকশো এজেন্ট পূর্ব থানায় বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইট, বোতলের আঘাতে দু’জন পুলিশকর্মী জখম হন। এজেন্টদের একাংশের বক্তব্য, গত কালও আমানতকারীদের কয়েকজনের লগ্নির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা লগ্নিকৃত টাকার ‘প্রি-ম্যাচিওরিটি’ দাবি করছে, তাঁদেরও টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এর পরও সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান হওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁদের অনেকেই। তাঁরা মনে করছেন, এই ঘটনায় আসলে লগ্নিকারীদেরই বিপদে ফেলছে সরকার। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কথায়, “পুলিশ আইনের নির্দেশেই কাজ করছে।” তাঁর কথায়, “এ সব সংস্থা টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেলে প্রশাসনের কিছুই করার থাকবে না। তা-ই আগে থেকেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” এ ব্যাপারে রোজভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিবময় দত্ত এ দিন জানিয়েছেন, এখনও ত্রিপুরায় পুলিশ তাঁদের কোনও অফিস বন্ধ (সিল) করে দেয়নি। সব ক’টি শাখাতেই কাজ চলছে। শুক্রবার রাতে অনুসন্ধানের সময় সংস্থার দুই কর্তাকে আটক করা হয়। এ নিয়ে আজ আমানতকারীরা বিক্ষোভও দেখান। শিবময়বাবু বলেন, “এই বিক্ষোভ সংস্থার প্রতি বিশ্বাসের প্রতীক। আমানতকারীদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।” তিনি আরও জানান, ধৃত দুই কর্তার জন্য জামিনের আর্জি জানানো হয়েছে। সোমবার আদালত তা মঞ্জুর করবে বলে শিবময়বাবু আশা করছেন। |
পুরনো খবর: নানা অভিযোগের জবাবে রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু |
|
|
|
|
|