রেলে সংস্কারের সাহস দেখিয়েও জুটল কলঙ্কই |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
কম-বেশি মাত্র ছয় মাস। এই ছোট্ট সময়েই ভারতের রেল-ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ছবি তৈরি করে গেলেন পবনকুমার বনশল।
এক দশকের জরা কাটিয়ে রেলকে সংস্কারের লাইনে তুলতে পেরেছিলেন তিনি। সব শ্রেণির যাত্রিভাড়া বাড়ানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাহবা কুড়িয়েছিলেন বনশল, জনমোহিনী রাজনীতির চাপে যা গত দশ বছর ধরে করতে সাহস পাননি লালুপ্রসাদ থেকে মমতা। আবার তিনিই প্রথম রেলমন্ত্রী, যিনি দুর্নীতির দায়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন। নৈতিক কারণে এর আগে ইস্তফা দিয়েছেন রেলমন্ত্রীরা। কিন্তু স্বজনপোষণ বা ঘুষ কাণ্ডে যে ভাবে বনশল জড়িয়ে পড়লেন, তাতে গোটা মন্ত্রকই কলঙ্কিত হল বলে মত সাধারণ কর্মী থেকে শীর্ষ রেল কর্তাদের।
অথচ, ইনিংসের শুরুটা মসৃণ ভাবেই করেছিলেন বনশল। তৃণমূল মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাওয়ার পর আপাত নিষ্কলঙ্ক ভাবমূর্তির অধিকারী বনশলের হাতেই দায়িত্ব তুলে দেন সনিয়া-মনমোহন। দায়িত্ব পেয়েই তাঁর চার পূর্বসূরি যা করতে পারেননি, তা করে দেখানোর সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। সংস্কারের অভিমুখে পা ফেলে সব শ্রেণিতে রেল ভাড়া বাড়ানোর ব্যতিক্রমী সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। যে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় সব মহলই। রেলের টানাটানির সংসারে তাঁর পেশ করা বাস্তবমুখী বাজেটও সমাদৃত হয়। কিন্তু ভাগ্নে বিজয় সিঙ্গলার নাম ঘুষ কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় শেষ রক্ষা করতে পারলেন না তিনি। শেষ চেষ্টা হিসেবে কাল নিজের বাসভবনে যাগযজ্ঞ করেছিলেন তিনি। কিন্তু দলের নির্দেশে কাল রাতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন বনশল। |
|
নিজের বাড়িতে পবন বনশল। শনিবার। ছবি: পি টি আই |
রেল মন্ত্রীদের ইস্তফা দেওয়ার ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৫২ সালে ভারতের তৃতীয় রেলমন্ত্রীর পদে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন জওহরলাল নেহরু। সাড়ে চার বছরের মাথায় অন্ধ্রপ্রদেশের মেহবুবনগরে রেল দুর্ঘটনায় ১১২ জন যাত্রীর মৃত্যু হলে ইস্তফা দেন শাস্ত্রী। যদিও ওই ঘটনার তিন মাস পরে তামিলনাড়ুর আরিয়ালুরের রেল দুর্ঘটনায় ১১৪ জন যাত্রীর মৃত্যুর পরেই সেই ইস্তফা গ্রহণ করেন নেহরু। তার পরেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব ছেড়েছেন রেলমন্ত্রীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এনডিএ বা ইউপি মন্ত্রিসভায় থাকাকালীন রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মমতা ও তাঁর দলের নেতারা। কিন্তু বনশলের মতো দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্ত্রীকে সরে যেতে হয়নি।
পবন বনশলের ইস্তফার পর আজ সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সঙ্গেই রেল মন্ত্রকও দেখার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সি পি জোশীকে। তৃণমূল ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার পরেও একপ্রস্ত অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জোশীকে। রাহুল ঘনিষ্ঠ ওই নেতা তখন ধরেই নিয়েছিলেন মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে তাঁকেই রেলের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে দায়িত্ব পান প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বনশল। এখন ফের অস্থায়ী দায়িত্ব পেয়েছেন জোশী। তবে যে ভাবে আজ জোশীকে দ্বিতীয় বারের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাতে আগামী দিনে তাঁর রেলমন্ত্রী হওয়া নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। তার উপরে এ বছরেই রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন। তাই জোশীকে রেলমন্ত্রী করা হলে রাজস্থানের মানুষকে বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে বলেও মত অনেকের। |
পুরনো খবর: দিনভর ঘরবন্দি বনশল, চাপ বাড়ছে অশ্বিনীর মন্ত্রক বদলেরও |
|