|
|
|
|
দিনভর ঘরবন্দি বনশল, চাপ বাড়ছে অশ্বিনীর মন্ত্রক বদলেরও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তাঁদের দু’জনকেই সরানোর দাবি উঠেছে দলের অন্দরে। এক জনের বিদায় নিশ্চিত বলেই কংগ্রেসের একাংশের দাবি। তিনি, পবনকুমার বনশল, আজ দিনভর নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখলেন। অন্য জন, অশ্বিনী কুমারকে প্রধানমন্ত্রী সরাবেন কি না, সে ব্যাপারে অবশ্য কংগ্রেস নেতারা নিশ্চিত নন। গত কাল সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কারের পরে আজ নিজের দফতরে, এমনকী মন্ত্রিসভার বৈঠকেও গিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। তবে কংগ্রেস সূত্রই বলছে, অন্তত আইন মন্ত্রক থেকে অশ্বিনীকে সরানোর জন্য চাপ ক্রমেই বাড়ছে মনমোহন সিংহের উপরে।
বস্তুত, কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই এমন দাবি ওঠায় রীতিমতো তৎপর হতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়কে। গত কাল অশ্বিনীর পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেল গুলাম বাহনবতীরও সমালোচনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ সাতসকালে প্রথমে গুলামকে ডেকে পাঠান মনমোহন। তার পরেই ডেকে পাঠানো হয় আইনমন্ত্রীকে। দু’জনের সঙ্গে কথা বলার পরে রাইসিনা হিলে গিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মনমোহন।
ঘটনার এমন ঘনঘটা সত্ত্বেও অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে অশ্বিনী কুমারের ইস্তফার সম্ভাবনা নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত আজ পাওয়া যায়নি। বরং অশ্বিনী যে ভাবে নিয়মমাফিক দফতরে গিয়েছেন, সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে (যে বৈঠকে বনশল গরহাজির ছিলেন) গিয়ে একটি বিল নিয়ে রীতিমতো তর্ক করেছেন, তাতে অনেকেই একমত যে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের হাত রয়েছে আইনমন্ত্রীর মাথায়। আজ লালকৃষ্ণ আডবাণী সরাসরি ব্লগে লিখেছেন, “মনমোহনই অশ্বিনীকে সরাতে চান না। তা হলে তাঁর রক্ষাকবচ সরে যাবে।”
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা এই অভিযোগ মেনেও নিচ্ছেন। তিনি জানান, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ চাইলেও অশ্বিনীর ইস্তফায় এখনও রাজি নন মনমোহন। কারণ, সে ক্ষেত্রে কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্কট বৃদ্ধিরই আশঙ্কা রয়েছে। সিবিআই তদন্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ শুধু অশ্বিনীর বিরুদ্ধেই ওঠেনি, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের যুগ্মসচিব শত্রুঘ্ন সিন্হাও তাদের খসড়া রিপোর্ট দেখেছেন বলেও হলফনামায় জানিয়েছে সিবিআই। কাজেই মনমোহন সচিবালয়ের তরফে কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, অশ্বিনীর বিরুদ্ধে বনশলের মতো কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই (বনশলকে সিবিআই জেরা করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁর ভাগ্নে-সহ দুর্নীতি মামলার পাঁচ অভিযুক্তকে আজ ২০ মে পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে)। তিনি সিবিআই রিপোর্ট দেখে অনিয়ম করে থাকতে পারেন, কিন্তু দুর্নীতি করেননি। ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য ফাঁসির সাজা হতে পারে না। তা ছাড়া অশ্বিনীর বিরুদ্ধে আদালত যে সরাসরি কোনও রায় দেননি, সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের একটি সূত্র বলছে, অশ্বিনীর ইস্তফা না চাইলেও শেষমেশ তাঁকে অন্য মন্ত্রকে সরিয়ে দিতে পারেন মনমোহন। কেননা শুধু রাজনৈতিক চাপ নয়, এর পর আইনমন্ত্রী পদে থেকে সিবিআইয়ের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করাতেও অসুবিধেয় পড়বেন অশ্বিনী।
কংগ্রেস নেতাদের গরিষ্ঠ অংশের বক্তব্য, অশ্বিনীকে অন্য মন্ত্রকে সরালে তা হবে ন্যূনতম শাস্তি। কিন্তু অন্তত সেটুকু ব্যবস্থা নিতেই হবে প্রধানমন্ত্রীকে। দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে রাজস্থান, দিল্লি, ছত্তীসগড় ও মধ্যপ্রদেশের নেতাদের তরফে সবথেকে বেশি চাপ রয়েছে। এঁদের বক্তব্য, কর্নাটকে জয়ের পর কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরিসর বেড়েছে। এখনই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করতে পারলে দেশে ইতিবাচক বার্তা যাবে। উপর্যুপরি দুর্নীতির অভিযোগে কংগ্রেস সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাসে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা মেরামত হবে। এর প্রভাব পড়বে চার রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটে।
ওই চার রাজ্যের ভোট নিয়েই কংগ্রেসকে আজ সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন শরিক নেতা তথা কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারও। তাঁর কথায়, “কর্নাটকের জয়ে আনন্দে আত্মহারা হওয়ার কিছু হয়নি। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের আসল পরীক্ষা বাকি রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে এ বছরের শেষে বিধানসভা ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পওয়ারের কোনও মন্তব্য নিয়ে এই প্রথম নীরব কংগ্রেস। কারণ, কংগ্রেসের নেতারাও বুঝতে পারছেন, ভুল বলেননি মরাঠা নেতা। বরং যা বলেছেন, তা অধিকাংশ কংগ্রেসিরই মনের কথা।
তবে শেষমেষ প্রশ্ন হল, বনশলের ইস্তফা কবে হবে? অশ্বিনীকেই বা আইন মন্ত্রক থেকে কবে সরানো হবে? জবাবে দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানালেন, ২২ মে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে। কংগ্রেস সংগঠন থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার রদবদল তার মধ্যেই সাঙ্গ হওয়ার কথা। সম্ভবত সেই দিনক্ষণ নিয়েই আজ মনমোহন-প্রণব বৈঠক হয়েছে। কাল রাষ্ট্রপতি উত্তরপ্রদেশ সফরে যাচ্ছেন। আবার ১৫ মে অসম সফরে গিয়ে রাজ্যসভা নির্বাচনের মনোনয়ন পেশ করার কথা মনমোহনের। এ সবেরই ফাঁকে উপযুক্ত সময়ে তিনি ও সনিয়া গাঁধী রদবদল সেরে ফেলবেন। ইতিমধ্যে মুখপাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বিরোধীদের আক্রমণের আগ্রাসী মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল গাঁধী।
|
পুরনো খবর: দিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট, কর্নাটকে ঝুলছে অশ্বিনী-পবনের ভাগ্য |
|
|
|
|
|