|
|
|
|
|
দিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট, কর্নাটকে
ঝুলছে অশ্বিনী-পবনের ভাগ্য
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
রাত পোহালে দুই রায়!
কর্নাটকে জনতা জনার্দন কী রায় দিল, তা জানা যাবে আগামিকাল। পাশাপাশি, কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গে আগামিকালই চূড়ান্ত রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। লোকসভা ভোটের আগে এই দুই রায়ের উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ। ফলে ‘বড়দিন’-এর আগে স্বাভাবিক ভাবেই রণকৌশল তৈরির কাজে ব্যস্ত শাসক-বিরোধী দুই শিবির।
তবে মাথাব্যথা অবশ্য কংগ্রেসেরই বেশি। কারণ, গত কালই শীর্ষ আদালতে হলফনামা দিয়ে সিবিআই জানিয়েছে, কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে তাদের খসড়া তদন্ত রিপোর্ট যে শুধু আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারকে দেখানোই হয়েছে তা নয়, তাঁর নির্দেশে রিপোর্টে পরিবর্তনও করা হয়েছে। সিবিআইয়ের এই হলফনামার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করলে তাঁর ইস্তফা নিয়ে চাপ বাড়বে। তা ছাড়া, দুর্নীতির দায়ে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পবন বনশলের ইস্তফার দাবিও ক্রমশই জোরালো হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কর্নাটকের রায় তাদের খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে বলে আশা করছে কংগ্রেস। দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সে রাজ্যে দল যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তা হলে কাল বা পরশুই পবন বনশলকে ইস্তফা দিতে বলা হতে পারে। কংগ্রেসের রণকৌশল হল, দুর্নীতির প্রশ্নে প্রচারের হাওয়াটা বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে দেওয়া। দল তখন বলবে, কর্নাটকে দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি সরকারকে মানুষ ছুড়ে ফেলেছে। কংগ্রেস কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেয়নি।
দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতা জানান, গত পরশু কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকেই মোটামুটি এই কৌশল স্থির হয়েছিল। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপি-র চাপের কাছে নতিস্বীকার করে পবনকে সরানো হবে না। যদি সেটা করা হয়, তা হলে তা হবে কংগ্রেসের নিজের সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ওই বৈঠকের পরে সিবিআই তদন্তে পবনের বিরুদ্ধে যে সব তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে, তাতে তাঁকে আর মন্ত্রী রাখা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। |
|
সুপ্রিম কোর্টের রায় কি তাঁর বিপদ আরও বাড়াবে? মঙ্গলবার সংসদে আইনমন্ত্রী। ছবি: পি টি আই। |
কিন্তু অশ্বিনী কুমারকে নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতান্তর রয়েছে বলেও কংগ্রেসের একটা অংশের মত। দলের কোর গ্রুপের বৈঠকে অশ্বিনীর ভূমিকা নিয়ে সনিয়া গাঁধী আজও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে খবর। এই অবস্থায় শীর্ষ আদালত যদি অশ্বিনীর সমালোচনা করে, তবে তাঁর বিদায় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান, কর্নাটকের ফল প্রকাশের পর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সংগঠনে বড় রদবদল হবে। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভার রদবদলও করে ফেলতে পারেন সনিয়া, মনমোহন, রাহুল। শীর্ষ আদালতের রায় অশ্বিনীর বিরুদ্ধে গেলে তখন তাঁঁকে ছেঁটে ফেলা হবে।
সরকারের অবশ্য আশা যে, সরাসরি অশ্বিনীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট কিছু বলবে না। এক মন্ত্রীর যুক্তি, ফৌজদারি কার্যবিধি মোতাবেক তদন্তকারী অফিসার তাঁর তদন্ত রিপোর্ট একমাত্র আদালত ছাড়া অন্য কাউকে দেখাতে বাধ্য নন। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই ডিরেক্টরকে প্রশ্ন করতে পারে, তা হলে তিনি রিপোর্ট সরকারের কর্তাব্যক্তিদের দেখাতে গেলেন কেন? আইনমন্ত্রীর নির্দেশ তিনি প্রত্যাখ্যান করতেই পারতেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই যে ভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার কথা বলেছে, তাতে এই যুক্তি তারা কতটা মানবে, তা নিয়ে সরকারেরই একটা অংশ সংশয়ী।
কংগ্রেস যখন দুর্নীতির প্রশ্নেই বিজেপি-কে পাল্টা কোণঠাসা করার কৌশল নিচ্ছে, তখন পাল্টা ঘর গোছাচ্ছে প্রধান বিরোধী দলও। তাদের মতে, কর্নাটকে দল পর্যুদস্ত হলেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অস্ত্র কোনও ভাবেই ভোঁতা হবে না। এমনকী, পবন বনশলকে সরিয়েও সেই অভিযোগ থেকে রেহাই পাবে না কংগ্রেস। বরং বিজেপি নেতৃত্বের মতে, দুর্নীতি নিয়ে দেশ জুড়ে এমন
স্পর্শকাতরতা তৈরি হয়েছে যে আগামি লোকসভা ভোটে সেটাই নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে। এই আশা থেকেই অশ্বিনী ও পবনের ইস্তফার দাবিতে সংসদ অচল করে রেখেছে বিজেপি। এই দাবি মানা না-হলে খাদ্য সুরক্ষা এবং জমি বিল পাশ করাতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিয়েছে তারা।
আজ সকালে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এ ভাবে সংসদ অচল থাকলে অধিবেশন মুলতবি করে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তার পরেই কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে সনিয়া জানান, তার প্রশ্নই ওঠে না। সংসদ চলার কথা ১০ মে পর্যন্ত। ওই দিন পর্যন্ত সরকার খাদ্য বিল পাশ করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে। বিজেপি তাতে লাগাতার বাধা দিয়ে গেলে সেটাই হবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অস্ত্র। কংগ্রেস তখন বলতে পারবে, মানুষের খাদ্যের অধিকারটুকু সুনিশ্চিত করতে দিল না বিজেপি। কংগ্রেসের এই রাজনীতি বিজেপি-কেও কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সূত্রের খবর, দু’পক্ষে রফার একটা চেষ্টাও শুরু হয়েছে তলে তলে। আজ সংসদের সেন্ট্রাল হলে সনিয়ার সঙ্গে বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের অনেকক্ষণ কথা হয়। তাঁরা পরস্পরকে আলিঙ্গনও করেন। পরে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেন, কংগ্রেস ইঙ্গিত দিয়েছে যে, পবন বনশলকে সরানো হবে। তার বদলে খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করতে দেওয়া হোক। যদিও এ ব্যাপারেও চূড়ান্ত কিছু এখনও হয়নি। সবটাই নির্ভর করছে আগামিকালের জোড়া রায়ের উপর।
|
পুরনো খবর: বুথ-ফেরত সমীক্ষায় কংগ্রেসের পাল্লা ভারী
সিবিআইয়ের হলফনামায় বিপাকে অশ্বিনী |
|
|
|
|
|