|
|
|
|
দুর্নীতির দুষ্টচক্রে আত্মীয় থেকে আমলা, আরও জড়াচ্ছেন বনশল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রেল-দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের জাল যত ছড়াচ্ছে, ততই সমস্যা বাড়ছে পবন বনশলের। রেলমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে তাঁর দফতরের আমলারাও এ বার সিবিআইয়ের আতসকাচের তলায় আসতে শুরু করেছেন। রেলমন্ত্রী এখনও দাবি করছেন, ঘুষের বিনিময়ে রেলের শীর্ষ পদ পাওয়ার সঙ্গে তাঁর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু কত দিন এই যুক্তি টিকবে, সিবিআই তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ঘুষ নিতে গিয়ে সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়েছেন রেলমন্ত্রীর ভাগ্নে বিজয় সিঙ্গলা। মন্ত্রকের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলা যে নিয়মিত তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন, সিবিআই তার প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেন রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব রাহুল ভাণ্ডারী। সম্পর্কে বনশলের বোনের জামাই। বনশল যখন যে মন্ত্রকের দায়িত্বে গিয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই মন্ত্রকে কাজ করেছেন ভাণ্ডারী। সিঙ্গলার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অজয় গর্গকেও আজ গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সিঙ্গলাকে ঘুষ দিয়েই রেল বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন রেল-কর্তা মহেশ কুমার। মহেশের ঘুষের টাকা যখন চণ্ডীগড়ে সিঙ্গলার কাছে পৌঁছয়, অজয় গর্গ তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গর্গ নিজেও রেলের ঠিকাদার। রেলকে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম সরবরাহের কারবার করেন তিনি। গর্গকে জেরা করে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলেও মনে করছে সিবিআই। অন্য দিকে আজ মুম্বইয়ে মহেশের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর বেআইনি সম্পত্তি, নগদ টাকা ও অলঙ্কারের সন্ধান পেয়েছে সিবিআই। তল্লাশির ঠিক আগেই মহেশের স্ত্রী আরপিএফের এক ইনস্পেক্টরকে দু’টি ব্যাগ দিয়ে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে বলেন। ওই ইনস্পেক্টরের কাছ থেকে ব্যাগ দু’টি উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার বহু নথি এবং ২ লক্ষ টাকার ‘গিফ্ট ভাউচার’ মিলেছে।
সব দেখেশুনে সিবিআই অফিসাররা মনে করছেন, রেল মন্ত্রক আক্ষরিক অর্থেই দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। এক দিকে রেলের শীর্ষকর্তারা লোভনীয় পদ পাওয়ার জন্য রেলমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিচ্ছেন। সেই ঘুষের টাকা আবার জোগাড় করা হচ্ছে রেলের ঠিকাদারদের কাছ থেকে। তার বদলে ওই ঠিকাদারদের ভবিষ্যতে বড় অঙ্কের বরাত পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ রেলের নিয়োগ, বদলি, ঠিকা থেকে শুরু করে বরাত, সব কিছুর পিছনে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে বহু দিন ধরেই। মহেশ-সিঙ্গলারা ধরা পড়ায় সেটাই এ বার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তাঁদের জেরা করতে গিয়ে রেলের নিরাপত্তা বাহিনী আরপিএফ-এ নিয়োগের ক্ষেত্রেও বড়সড় দুর্নীতির হদিস পেয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের দাবি, আরপিএফ-এর অফিসারদের সংগঠন ও দালালদের যোগসাজশে একটি চক্র গড়ে উঠেছিল। এই চক্রটি টাকার বিনিময়ে আরপিএফে চাকরির বন্দোবস্ত করে দিত। অজয় গর্গের মতো ঠিকাদাররাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন। সিঙ্গলা ও অন্যদের জেরা করে এই চক্রের সন্ধান পাওয়ার পরেই অজয় গর্গের খোঁজ শুরু করে সিবিআই। গর্গ আজ দিল্লি আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
মুম্বইয়ে এ দিন রেলকর্তা মহেশ কুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কার্যত তাজ্জব বনে যান সিবিআই অফিসাররা। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন অর্থ, হিরে, গয়না, কিষাণ বিকাশ পত্রের হদিস মেলে। তার সঙ্গে ছিল বহু বেনামি সম্পত্তির নথি। ওই সব সম্পত্তি আবার রেলের বিভিন্ন অফিসারদের নামে কেনা হয়েছিল। পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার হওয়ার সুবাদে আরপিএফের এক ইনস্পেক্টরের কাছেও প্রচুর নথি লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তারও হদিস মিলেছে। সাম্প্রতিক কালে রেল এবং আরপিএফে যাবতীয় উচ্চপদে নিয়োগ, বদলি ও ঠিকা সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে সিবিআই। এই সব বদলি ও ঠিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বনশলের আত্মীয়স্বজনদের কী ভূমিকা ছিল, তা বুঝতে চাইছে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রের খবর, গত দেড় মাস ধরেই মহেশ ও সিঙ্গলার গতিবিধির উপরে নজর রাখছিলেন গোয়েন্দারা। মহেশের হিসেব ছিল, জুন মাসে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল অবসর নিলে বর্তমান সদস্য (ইলেকট্রিক্যাল) কুলভূষণ ওই পদে বসবেন। সে সময় তিনি ওই পদটি পেতে পারেন। সেই অনুযায়ীই রেলমন্ত্রীর ভাগ্নেকে দু’কোটি টাকা ঘুষ দিতে রাজি হয়ে যান তিনি। এই দর কষাকষিতে সাহায্য করেন রেলের আরেক ঠিকাদার সন্দীপ গোয়েল। যাঁকে আগেই গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সিঙ্গলা, গর্গ ও রেলের আর এক ঠিকাদার সন্দীপ গোয়েলের চণ্ডীগড়, পঞ্জাব, হরিয়ানার গুড়গাঁও, দিল্লি এবং জম্মুতে কোটি কোটি টাকার নির্মাণ ব্যবসা রয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁরা রেলের বদলি ও ঠিকা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ চক্রও ফেঁদে বসেন। প্রশ্ন হল, এই কোটি কোটি টাকা ঘুষের কতটা রেলমন্ত্রীর পকেটে যেত? নানা সূত্র ধরে তারই হদিস পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সিবিআই।
|
পুরনো খবর: ঘুষ-কাণ্ডে ইস্তফার খাঁড়া বনশলের মাথায় |
|
|
|
|
|