প্রশ্নের মুখে রেল বোর্ডে নিয়োগ
মমতা-জমানায় রেলে নিয়োগ নিয়েও তদন্ত করবে সিবিআই
তিনি না চাইলে কী হবে, সিবিআইকে এড়াতে পারছেন না তৃণমূল নেত্রী। মামার রেলে ভাগ্নের ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্তে জড়িয়ে গেল রেল মন্ত্রকের তৃণমূল জমানার নিয়োগও।
বিজয় সিঙ্গলা মুখ পুড়িয়েছেন মামা পবন বনশলের। তার তদন্তে নেমে গত পাঁচ বছরে রেল বোর্ডের শীর্ষ পদে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না সিবিআই তা তদন্ত করে দেখছে। যার অর্থ, শুধু বনশল নয়, লালু প্রসাদ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রেল মন্ত্রক থাকাকালীন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী এখন প্রায় নিয়ম করে প্রতিটি সভায় বলছেন, সিবিআইয়ের নাম করে তাঁকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। রাজ্যে অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণা নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিও মানতে রাজি নন তিনি। যদিও কংগ্রেস-শাসিত অসম ও বামফ্রন্ট-শাসিত ত্রিপ্ুরা সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের উপরে ভরসা রেখে রাজনৈতিক ভাবে চাপে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের উপরে। সেই চাপ আরও বাড়াল রেলে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্ত। রেল বোর্ডের বর্তমান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা-ও রয়েছে তাদের তদন্তের আওতায়। ওই দুই ব্যক্তিরই নিয়োগ হয়েছিল রেল তৃণমূলের হাতে থাকার সময়। তদন্ত হবে লালু জমানার শেষ পর্যায়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে এস এস খুরানার নিয়োগ নিয়েও। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের একটি দল গত কালই রেল মন্ত্রকে গিয়ে এ সব নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে গিয়েছে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সাসপেন্ড হওয়া বোর্ড সদস্য মহেশ কুমার ইতিমধ্যেই কবুল করেছেন, রেল বোর্ডে নিয়োগের পিছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে স্বজনপোষণ বা আর্থিক লেনদেন। প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে রেল। মমতার সময়ে রেলে শীর্ষকর্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। মমতার আমলেই চেয়ারম্যান পদে বিবেক সহায়ের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সহায়ের বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সদস্য (ট্রাফিক) থেকে চেয়ারম্যান পদে উন্নীত করা হয়। পরের কয়েক মাস তিনি ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ পদের যৌথ দায়িত্বে ছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এমন যৌথ দায়িত্ব দিয়ে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, তখন কুলুপ এঁটে ছিলেন রেল-কর্তারা।
অভিযোগ উঠেছে বর্তমান চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তলের নিয়োগ নিয়েও। বিবেক সহায় অবসর নেওয়ার পর আনা হয় তাঁকে। অভিজ্ঞতা ও বয়সে তরুণ মিত্তল তখন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার, বোর্ডের সদস্যও নন। অভিযোগ ওঠে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দায়িত্বে থাকায় মিত্তলের সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। একাধিক ব্যক্তিকে টপকে তাঁকে মন্ত্রকের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে রেল বোর্ডে যত সদস্য নিয়োগ হয়েছে তারও বিস্তারিত বিবরণ দেখার পরিকল্পনা নিয়েছে সিবিআই। কী কারণে, কীসের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখবে তারা। আগামী দিনে রেলের ১৭টি জোনের জেনারেল ম্যানেজার নিয়োগের প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছে সিবিআই।
ফেডারেশন অফ রেল অফিসার্স’ অ্যাসোসিয়েশন-এর কর্তা শুভ্রাংশু এ দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব পুলক চট্টোপাধায় ও ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠকে পাঠানো চিঠিতে রেলে দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই রকম দুর্নীতির ফলে অনেক অফিসার মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। প্রশ্ন উঠছে, নিয়োগ-দুর্নীতির প্রশ্নে এখন কেন এতটা সক্রিয় হয়ে উঠল সিবিআই। মহেশই বা কেন নিশানা তাদের? রেল মন্ত্রকের একাংশের বক্তব্য, সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিন্হার সঙ্গে পুরোনো বিরোধের জেরেই বিপাকে পড়েছেন মহেশ। মমতার আমলে রঞ্জিত সিন্হা আরপিএফ-এর ডিজি ছিলেন। সে সময় মহেশের সঙ্গে তাঁর বিরোধ গড়ায় তৃণমূল নেতৃত্ব পর্যন্ত। সিবিআই গত কাল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.