|
|
|
|
বাংলা থেকেই ঝাড়খণ্ডে ব্যবসা চালাচ্ছিল সারদা |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
পশ্চিমবঙ্গে বসেই সারদা গোষ্ঠী মাকড়সার মতো জাল বিস্তার করেছিল ঝাড়খণ্ডে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের নানা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছিল সারদা। আর তার জেরেই ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনার আদিবাসীদের একাংশ কার্যত পথে বসেছেন। টাকা তুলে এবং নিজেরাও টাকা লগ্নি করে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পরগনার সারদা গোষ্টীর এজেন্টরাও।
পুলিশ জানাচ্ছে, সাঁওতাল পরগনার দুমকা, পাকুড়, কিংবা জামতারার মতো জেলাগুলি পশ্চিমবঙ্গের সিউড়ি, ফারাক্কা, আসানসোলের নিকটবর্তী। প্রশাসনিক চাপ থাকায় সারদা গোষ্ঠী সাঁওতাল পরগনার কোথাও অফিস খুলতে পারেনি। কিন্তু এখান থেকে টাকা তুলে তা পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল, সিউড়ি, মুরারই কিংবা ফারাক্কার অফিসে জমা করতেন স্থানীয় এজেন্টরা। পশ্চিমবঙ্গের পারমিট দেখিয়েই চলত ব্যবসা।
সাঁওতাল পরগনারই সাহেবগঞ্জ জেলার রাজমহল ব্লক ছিল ব্যতিক্রম। সেখানে সারদা কর্তৃপক্ষ অফিস ভাড়া নিয়েছিল। তবে সেখানে নগদ টাকা জমা পড়ত না। এজেন্টরা টাকা তুলে ডিমান্ড ড্রাফট কেটে রাজমহল অফিসে জমা দিতেন। সেই ডিমান্ড ড্রাফট পাঠিয়ে দেওয়া হত কলকাতায়।
ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার কথায়, ঝাড়খণ্ড সরকার রাজ্যে চিটফান্ড বা এই ধরনের লগ্নিকারী সংস্থার ব্যবসা চলতে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিল না। তা সত্ত্বেও সব ক্ষেত্রে যে তাদের ঠেকানো যায়নি, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন মুন্ডা। তিনি বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় অনেকগুলি সংস্থার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। মামলাও করা হয়েছিল কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও তারা চোরাগোপ্তা ব্যবসা করেছে। মানুষও লোভে পা দিয়ে সমস্যায় পড়েছে।”
সাঁওতাল পরগনার বিজেপি নেতা শিবলাল ঘোষের কথায়, “যে কোনও দলের কাছেই সাঁওতাল পরগনার ভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার অধিকাংশ মানুষই গরিব আদিবাসী। ফলে তাঁরা যাতে প্রতারিত না হন তাই সরকার চিটফান্ড বা এই ধরনের সংস্থা সম্পর্কে খুব কঠিন মনোভাব নিয়েছিল। ফলে এখানে সারদা গোষ্ঠী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেছে। এখান থেকে সারদার বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে ঝাড়খণ্ড সরকারের কোনও উপায় ছিল না।”
বছর তিনেক ধরে ঝাড়খণ্ডে ব্যবসা শুরু করেছিল সারদা। সারদা গোষ্ঠীর দুমকা জেলার এজেন্ট প্রাণেশ্বর মুর্মু এখন লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে নিজেও টাকা লগ্নি করে ডুবেছেন। সাঁওতাল পরগনার বহু এজেন্টেরই এখন তাঁর মতো অবস্থা। প্রাণেশ্বরের কথায়, পাকুড় জেলার মহেশপুর ব্লক থেকে আট কিলোমিটার দূরে বীরভূমের মুরারই। কিংবা দুমকা জেলার শিকারিপাড়া, রানিশ্বর ব্লক থেকে সিউড়ির দূরত্ব পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার। আবার দুমকার মসলিয়া থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে আসানসোল। জামতারা জেলার মিহিজাম আসানসোলের একেবারেই গা ঘেঁষে। ফলে এজেন্টরা পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে দিনের দিনই ফেরত আসতেন। সাঁওতাল পরগনার গোড্ডা জেলার এজেন্টরা দুমকার এজেন্টদের মাধ্যমে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গে টাকা পাঠাতেন।
আর সারদার এই কৌশলেই অথৈ জলে পড়েছেন সাঁওতাল পরগনার বাসিন্দারা। এলাকায় অফিস নেই। কোথায় গেলে টাকা পাওয়া যাবে তাও তাঁরা জানেন না। বেপাত্তা এজেন্টরা। ফলে সাধারণ লগ্নিকারীরা বিভ্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গের মতো এই সব জায়গায় গোলমাল শুরু হয়নি। পূর্ব সিংভূম জেলায় শোরগোল শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর লাগোয়া বহোরাগোড়া, ঘাটশিলায় রোজ ভ্যালী-সহ অন্যান্য সংস্থার অফিসে লোকজন হাজির হচ্ছেন সঞ্চিত টাকা উদ্ধারের চেষ্টায়। ঘাটশিলায় সারদাল অফিসের জন্য জায়গা নিলেও ভাল করে চালু হওয়ার আগেই তা বন্ধ হয়েছে। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছরে পুর্ব সিংভূম থেকে সারদার এজেন্টরা ৫০ লক্ষ টাকা তুলেছে। পাশাপাশি সিসোর, ইকুইনক্স, মঙ্গলম ও জিএনটি অ্যাগ্রো নামে ঘাটশিলায় চলা চারটি সংস্থার অফিসে হানা দেন জেলার অতিরিক্ত এসপি চন্দন ঝা ও মহকুমা শাসক অমিত কুমার। |
|
|
|
|
|