|
|
|
|
নাগাল্যান্ডের ‘তোলা’ শিল্প |
জঙ্গি-করে উত্যক্ত রাজ্যের মানুষ, সরকার নীরব দর্শক |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
দর কষাকষি করে কোনও লাভ নেই। অনুরোধেও কাজ হবে না। শিক্ষক-সহ সব সরকারি কর্মচারীদেরই বেতনের একটি অংশ নাগাল্যান্ডের ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য’ দান করতে হবে। এই কথা সাফ জানিয়ে দিল নাগা জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন (খাপলাং)। সম্প্রতি নাগা জঙ্গিদের চাহিদা মতো বেতনের ২৪% চাঁদা জঙ্গিদের হাতে তুলে না দেওয়ায় ওখার দুই শিক্ষক অপহৃত হন। নাগাল্যান্ড শিক্ষক সংগঠন প্রতিবাদে বন্ধ ডাকে। শিক্ষক সংগঠনের তরফে ঘোষণা করা হয়, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের জঙ্গি করের আওতা থেকে বাদ রাখা নিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষ না হওয়া অবধি কোনও শিক্ষক যেন কর না দেন। কিন্তু তার পরেই জঙ্গিরা ঘোষণা করে, কোনও সরকারি কর্মী, বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরতদের কোনও মতেই কর ছাড় দেওয়া হবে না। জঙ্গিদের বক্তব্য, “বিপ্লবী সরকার চালাবার জন্য ও নাগাদের জন্য স্বাধীনতা-লড়াই চালাতে ন্যূনতম কর ধার্য্য করা হয়েছে। যতদিন না ভারতীয় দখলদার বাহিনীর হাত থেকে নাগারা স্বাধীনতা হবে, তত দিন লড়াইয়ের স্বার্থে কর আদায় চলবে।’’ ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের’ জন্য আদায় করা করের টাকায় ডিমাপুর, কোহিমা ও নাগাল্যান্ডের অন্যান্য শহরে, যুদ্ধবিরতিতে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলির বড়-মেজো-সেজো পর্যায়ের নেতারা প্রাসাদোপম বাড়ি বানাচ্ছেন। বিঘার পর বিঘা জমি কিনছেন। চড়ছেন বিলাসবহুল গাড়িতে। বিদেশ থেকে আসছে অস্ত্র। জনতা চোখের সামনে নিজেদের বেতনের টাকার এই ব্যবহার দেখেও প্রাণভয়ে চুপ। চুপ সরকারও। কারণ নাগা জঙ্গিদের বিরোধিতা করা দূরে থাক, নেফিয়ু রিও সরকারের মন্ত্রী-বিধায়করা অনেকেই জঙ্গি নেতাদের সাহায্য নিয়ে যে ভোটে জেতেন। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইমকং ইমচেন, ভোটের আগে জঙ্গিদের কাছ থেকে নেওয়া পাঁচটি পিস্তল, ২টি ৭.৬৫ মিলিমিটার রাইফেল, ২ টি .৩০৩ রাইফেল, ১০০ রাউন্ড .৩০৩ বোরের কার্তুজ ও ১১ বোতল মদ-সহ ধরা পড়েছিলেন। তার পরেও ভোটে জিতে তিনিই ফের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! এমনকী নাগাল্যান্ড বিধানসভায় গত বছরই শাসক ও বিরোধীপক্ষ একজোট হয়ে ‘নাগাল্যান্ডের স্বার্থে লড়াই চালানো’ জঙ্গিদের অবদানকে স্বীকার করে তাদের সম্মান জানিয়েছে। উল্লেখ্য, কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি অনুযায়ী জঙ্গিদের তোলাবাজি কিন্তু নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারি কর্মীদের বেতনের অংশ আদায় বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ঘটনাকে ‘তোলা’ নয়, ‘নাগাভূমির জন্য স্বেচ্ছায় দান’ হিসেবে দেখানো হয়।
পুলিশের হিসেবে, নাগাল্যান্ডে বর্তমানে এনএসসিএন-এর তিনটি গোষ্ঠী, এনএনসি-র তিনটি গোষ্ঠী ও এফজিএন সংগঠন কর আদায় করে। করের হার কেমন? নিজের বাড়ি হলে বাড়ি প্রতি বছরে ১০০ টাকা। ব্যবসায়ী, গাড়ি মালিক, সরকারী কর্মী হলে আয় বুঝে করের মাত্রা ২০ থেকে ৩৫%। ভাড়ায় গাড়ি খাটালে বছরে দিতে হয় ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে টোল কর, প্রবেশ কর, ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতি প্রকল্পপিছু মুনাফার ভাগ। গ্রামোন্নয়ন বোর্ড ও গ্রাম পরিষদের টাকার ভাগও জঙ্গিদের পকেটে যায়। এমনকী গির্জাও বাদ যায় না। জঙ্গি দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছর নাগাল্যান্ডের চার জেলার সংযোগকারী ১২৯৬ কোটি টাকার দুই লেনের সড়ক প্রকল্পটি ঠিকাদাররা মাঝপথে বন্ধ করে দেন। রাজ্যের বিনিয়োগ প্রকল্পগুলিও প্রভাবিত। বেতনের ২৪% থেকে ৩০% জঙ্গি-কর দিতে ব্যয় হলে বিমা, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে যেমন টাকা রাখা সম্ভব হয় না, তেমনই ঋণ নিয়ে ইএমআই দেওয়াও সম্ভব নয়। ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী ৫ বছরে নাগাল্যান্ড ছেড়েছেন। সকলেরই মত, রাজ্য ও কেন্দ্রের জঙ্গি তোষণ নীতির কারণেই তোলাবাজি সব চেয়ে বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে। ফলে অন্য সব শিল্পের সম্ভাবনা প্রায় শেষ। |
|
|
|
|
|