সীমান্ত সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের পাঠানো প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য নয়াদিল্লিকে চাপ দিতেই অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে চিন। লাদাখ থেকে চিনা সেনা সরে যাওয়ার ৩৬ ঘণ্টা কাটার পর ময়নাতদন্তে এমন সম্ভাবনাই উঠে আসছে। কেন্দ্রের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতেও ফের ঘটতে পারে এমন ঘটনা।
ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা মেটাতে একটি নতুন মেকানিজমের (‘বর্ডার ডিফেন্স কো-অপরেশন প্রপোজাল’ বা সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রস্তাব) প্রস্তাব লিখিত ভাবে দু’মাস আগেই নয়াদিল্লির হাতে তুলে দিয়েছিলেন চিনের নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ দেখায়নি বিদেশ মন্ত্রক। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখছে। চিনের প্রধানমন্ত্রী লে কেকিয়াং-এর আসন্ন ভারত সফরের আগে বিষয়টিকে আলোচ্যসূচির সামনে নিয়ে আসতে তাই মরিয়া বেজিং। এবং বেজিংয়ের অনুপ্রবেশ কৌশলের পরে পরিস্থিতিও এখন এমনই, যে আলোচনায় বাণিজ্য-সহ অন্য সব বিষয় ছাপিয়ে সীমান্ত সমস্যাই অগ্রাধিকার পেতে চলেছে।
চিনা সেনা সরে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র, বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক একযোগে ময়নাতদন্তে নেমেছে। সরকারের এক শীর্ষ কর্তা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন, “অনুপ্রবেশের একটি কারণ হতে পারে, সীমান্ত সমস্যাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসা। কিন্তু তার জন্য আরও সহজ উপায় ছিল।”
দু’মাস আগে চিনের পক্ষ থেকে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য যে নতুন সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছে, সে’টি নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। বিশদে না জানালেও এটুকু বলা হয়েছে, বেজিং চাইছে, ভারত এবং চিনের মধ্যে যে দেশ যখন সীমান্তে টহল দেবে, অন্য দেশকে আগাম জানাতে হবে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মনে করছে, এর ফলে টহলদারির ‘চমকটা’ চলে যাবে। তা ছাড়া এখন এলএসি-র পুর্নবিন্যাসের বিষয়টি নতুন করে কাটাছেঁড়া করতে চাইছে না কেন্দ্র। তাদের বক্তব্য, ২০০৫-এর প্রোটোকল অনুযায়ী ভারত-চিন নিয়ন্ত্রণরেখা এখন অনেকটাই শান্ত। বিচ্ছিন্ন কিছু অনুপ্রবেশের ঘটনা ছাড়া বড় হিংসার ঘটনা নেই। যে মেকানিজম চালু আছে, তার মাধ্যমে ধীরেসুস্থে আলোচনা চালিয়ে যেতেই চায় ভারত। নয়াদিল্লির কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ চিনের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে সে দেশে ভারতীয় বিনিয়োগ এবং রফতানির পরিমাণ অন্তত দ্বিগুণ করা। লাদাখের ঘটনাটি দেখে নয়াদিল্লির ধারণা, এই অনুপ্রবেশের মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, সীমান্ত থেকে ভারতের দিকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার ভিতরে এসে তাঁবু গেড়েছিল চিনা সেনারা। টানা ২০ দিন তারা ওই মারাত্মক ঠান্ডার মধ্যে বসে ছিল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মূল ভূখণ্ড থেকে কোনও খাদ্য, অস্ত্র বা অন্যান্য আবশ্যিক দ্রব্য ওই তাঁবুগুলিতে সরবরাহ হয়নি। এর থেকেই অনুমান করা হচ্ছে যে তারা পুর্বপরিকল্পিত ভাবেই কিছু দিনের জন্য এই ঘাঁটি গেড়েছিল। পুরোদস্তুর সংঘর্ষে যাওয়ার কোনও উদ্দেশ্য তাদের ছিল না।
|