|
|
|
|
লাদাখে স্বস্তি |
চিন-ভারত বৈঠকে কথা হবে সীমান্ত সমস্যা নিয়েই
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বাঘের ঘাড়ের উপর থেকে ড্রাগনের নিঃশ্বাস আপাতত সরেছে। টানা কুড়ি দিন লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকার পরে অবশেষে পিছু হটেছে চিন। লাদাখে এখন স্বস্তির হাওয়া। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, সে জন্য আসন্ন ভারত-চিন শীর্ষ বৈঠকে সরব হবে নয়াদিল্লি।
ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনার ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকার বিষয়টি নিয়ে ঘরে-বাইরে যথেষ্ট বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে সাউথ ব্লককে। এক দিকে বিজেপি ভারতের ‘নরম কূটনীতির’ প্রশ্ন তুলে মনমোহন সিংহের সরকারকে ক্রমাগত আক্রমণ করেছে। অন্য দিকে কংগ্রেসের একটি বড় অংশ কেন্দ্রকে চাপ দিয়েছে, যাতে এই পরিস্থিতিতে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ চিন সফরে না যান।
দীর্ঘ স্নায়ুযুদ্ধের পর রক্তপাতহীন ভাবে সীমান্ত নিয়ে টানাপোড়েন শেষ হওয়ায় অবশ্যই কিছুটা স্বস্তিতে ভারত। চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক দৌত্যও সফল বলেই দাবি সরকারের। ফলে সংশয়মুক্ত হয়েছে সলমন খুরশিদের বেজিং এবং চিনা প্রধানমন্ত্রী লে কেকিয়াং-এর নয়াদিল্লি সফর (যথাক্রমে ৯ এবং ২০ মে)। কিন্তু এর ফলে চিনের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে প্রথম শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অন্য সব কিছু ছাপিয়ে সীমান্ত সমস্যাই অগ্রাধিকার পেতে চলেছে। |
|
ভারতীয় ভূখণ্ডে গড়ে তোলা এই ছাউনিগুলিই সরিয়ে নিয়েছে
অনুপ্রবেশকারী চিনা সৈন্যরা। ৫ মে-র তোলা ছবি। ছবি: পিটিআই |
গোটা ঘটনাটিকে কী ভাবে দেখছে ভারত? সরকারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “ভারত এবং চিন এ ভাবেই থাকবে। কিছু বিষয়ে বন্ধুত্ব থাকবে, কিছু বিষয়ে শত্রুতা। তবে এটা ঘটনা, ভারত এবং চিন পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার মতো জায়গায় নেই। দু’দেশের মধ্যে আসন্ন বৈঠকগুলিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা এলএসি নির্ধারণ করার জন্য নতুন ভাবনাচিন্তা এবং ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।”
বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, চিনা সেনার পিছু হটার পিছনে কোনও ‘কুইড প্রো কো’ বা বিনিময় চুক্তি হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বিনা আশ্বাসে ফেরেনি চিনা সেনা। এলএসি বরাবর রণকৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলির মধ্যে কয়েকটি তৈরির কাজ সাময়িক ভাবে হলেও বন্ধ রাখার আশ্বাস দিয়েছে নয়াদিল্লি।
গত ১৬ মার্চ চিনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার পর ১৮, ২৩ এবং ৩০ মার্চ পরপর তিনটি ফ্ল্যাগ মিটিং হয় দু’দেশের মধ্যে। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি। চিনের দাবি ছিল, পূর্ব লাদাখের চুমার এলাকায় তৈরি হওয়া ভারতের সেনাঘাঁটি বন্ধ করতে হবে, কারণ এই সেনা ঘাঁটি থেকে সরাসরি চিনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বিশেষত ওয়েস্টার্ন হাইওয়ের উপর নজরদারি করা সম্ভব। এ ছাড়াও দৌলত বেগ, ওল্ডি ফুচকে, নায়োমা ইত্যাদি জায়গায় গত কয়েক বছর ধরে ভারত যে সব সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করেছে, সেগুলিও বন্ধের দাবি জানায় চিন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, চিনের দাবি পুরোপুরি না মানলেও আপাতত আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো তৈরি ও উন্নয়নের কাজ বন্ধ রাখার কথা বিবেচনা করা হবে। তবে সরকারেরই অন্য একটি সূত্রের বক্তব্য, চিনা সেনা সরানোর পরে এ বার ওই এলাকায়, বিশেষত চুমারে সামরিক পরিকাঠামো গড়ার কাজে গতি বাড়াবে ভারত। ওই সব অঞ্চলে ভারতীয় সেনার সংখ্যা এবং নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে দিল্লির। অবশ্য একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টিই আলোচনা সাপেক্ষ এবং খুরশিদের চিন সফর ও লে কেকিয়াং-এর ভারত সফরে এ নিয়ে আলোচনা হবে।
বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ নতুন নয়। জট ছাড়ানোর জন্য দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধিদের (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের) নিয়ে একটি মেকানিজম তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই সমস্যাটিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কেন্দ্রে এনে সমস্ত আদানপ্রদান বন্ধ করে দিতে চায় না ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “পারস্পরিক বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতার রাস্তায় হাঁটাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।”
চিনের নতুন প্রধানমন্ত্রীও তাঁর প্রথম বিদেশ সফর ভারতে করার কথা ঘোষণা করে এই বার্তা দিয়েছেন যে, নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে বেজিং আগ্রহী। আজ সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনিং তাঁর বিবৃতিতে বলেন, “চিন এবং ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বৃহত্তর স্বার্থ রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই সমন্বয় এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সীমান্ত সম্পর্কে পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
তবে সেনা সরানো এবং শীর্ষ বৈঠকের জন্য প্রস্তুতি শুরু করার পাশাপাশি পারস্পরিক চাপের কূটনীতিতে চিন এবং ভারত দু’পক্ষই সমান সক্রিয়। এ মাসের শেষে মনমোহন সিংহের জাপান সফরের নির্ধারিত সময়সূচি পরিবর্তন করে এক দিন বাড়ানো হয়েছে। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, ওই বাড়তি দিনটিতে জাপানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, চিনকে কড়া বার্তা দিতেই জাপান সফরের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে চিন এবং জাপানের মধ্যে সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে জানিয়েছেন, এই দ্বীপটি জাপানেরই সম্পত্তি এবং সেখানে চিন ঘাঁটি গাড়তে গেলে সামরিক ভাবে তার মোকাবিলা করা হবে। এই পরিস্থিতির মধ্যে মনমোহনের দীর্ঘায়িত টোকিও সফর বেজিংকে কিছুটা চাপে রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্য দিকে ভারতীয় ভূখণ্ডে সেনা পাঠিয়ে উত্তেজনা তৈরির পাশাপাশি বেজিং অন্যান্য কূটনৈতিক পদ্ধতিতেও নয়াদিল্লি সম্পর্কে কড়া অবস্থান নিচ্ছে। প্রথম বিদেশ সফরে নয়াদিল্লি এলেও লে কেকিয়াং-এর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে রাশিয়া এমনকী জাপানের প্রতিনিধিরা থাকলেও ডাক পাননি কোনও ভারতীয় সাংবাদিক!
এই পরিস্থিতিতে আসন্ন ভারত-চিন শীর্ষ বৈঠক তাই দু’দেশের কাছেই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। |
পুরনো খবর: চিনা সেনা সরে গেল, স্বস্তিতে নয়াদিল্লি |
|
|
|
|
|