|
|
|
|
কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে টানাটানিতে আশঙ্কা রাহুলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কর্নাটকে কংগ্রেসের নজরকাড়া সাফল্যে তিনি খুশি ঠিকই। কিন্তু দলের এই দাক্ষিণাত্য বিজয়ের রেশ লোকসভা ভোট পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে কি না, সেটাই এখন বড় মাথাব্যথা রাহুল গাঁধীর। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, মূলত সেই চিন্তা থেকেই কংগ্রেসের কর্নাটকের নেতাদের আজ রীতিমতো সতর্ক করে দিয়েছেন সনিয়া-রাহুল। বিশেষত মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে থাকা নেতাদের অন্যতম সীড্ডরামাইয়াকে। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কোনও রেষারেষি বরদাস্ত করবে না হাইকম্যান্ড। এমনকী আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিষদীয় দলের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মনোনয়নের আগে দিল্লি এসে দরবার করাও চলবে না।
কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে বিজেপিকে কার্যত কোণঠাসা করে দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে, তাতে বিস্মিত কংগ্রেসের অনেক নেতাই ঠিকই। কর্নাটকে ভোটের প্রচারে যাওয়া কংগ্রেসের অনেক নেতাই স্বীকার করছেন যে, দলের এতটা সাফল্য তাঁরা আশা করেননি। তাঁদের মতে, ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি বিজেপির অন্তর্কলহ, সর্বোপরি ইয়েদুরাপ্পা এই তিনটি ফ্যাক্টর একযোগে কাজ করেছে কংগ্রেসের হয়ে। অস্থিরতা কাটিয়ে স্থায়ী সরকারের পক্ষে রায় দিতে গিয়ে কংগ্রেসকেই বেছে নিয়েছেন রাজ্যের সিংহভাগ মানুষ। আরও স্পষ্ট করে বললে, রাজ্যের মানুষ এ বারে বিজেপিকেই হারাতে চেয়ে ভোট দিয়েছেন কংগ্রেসকে। |
|
কর্নাটক জয় উপলক্ষে কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পথে। ছবি: পিটিআই |
রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, সমস্যা শুরুও এখান থেকেই। কেন না প্রথমত, কংগ্রেস শুধু মাত্র নিজ কৃতিত্বে জেতেনি। তার ওপর কর্নাটকে কংগ্রেসের এমন কোনও নেতা নেই, গোটা রাজ্যে যাঁর প্রভাব রয়েছে। এবং যাঁর একার দাপটে কংগ্রেস ভোট বৈতরণী পার হয়েছে। উল্টে কর্নাটকে কংগ্রেসের ‘অনেক নেতা’।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, বিরোধী দলনেতা সীড্ডারামাইয়া, কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি-সহ তালিকাটা দীর্ঘ। ফলে ভোটে জেতার পর এখন এঁরা প্রত্যেকেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য ঘরোয়া ভাবে দৌত্য শুরু করেছেন। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রাহুল। তিনি আশঙ্কা করছেন, প্রথম দিন থেকেই যদি এ ভাবে রেষারেষি শুরু হয়ে যায়, তা হলে বিধানসভা ভোটের সাফল্য লোকসভা ভোট পর্যন্ত ধরে রাখা মুশকিল। বরং কোনও একজনকে মুখ্যমন্ত্রী করার পর দল যদি ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতে পারে, তাহলে আগামী লোকসভা ভোটে প্রতিবেশী অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেসের যা ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে, তা পূরণ হতে পারে। কর্নাটকের মোট ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে এখন কংগ্রেসের দখলে মাত্র সাতটি। বিজেপির দখলে ১৮টি। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, বিধানসভা ভোটের ধারা বজায় রাখতে পারলে লোকসভা ভোটে কর্নাটকে ১৮-২০টি আসন দখলে নিতে পারে কংগ্রেস।
শেষ পর্যন্ত কাকে মুখ্যমন্ত্রী করবেন সনিয়া-রাহুল?
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সূত্রে বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত দু’টি নাম এই পদের জন্য উঠে আসছে। প্রথম জন, কংগ্রেসের ওবিসি নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সীড্ডারামাইয়া। আর দ্বিতীয় জন হলেন, কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে। দাঁড়িপাল্লায় এঁদের দু’জনকে রেখেই বিচার করা হচ্ছে। খার্গের সুবিধা, তিনি দলিত নেতা। বিধায়কদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। কিন্তু তিনি গত পাঁচ বছর ধরে রাজ্যের থেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে। বিপরীতে সীড্ডারামাইয়া বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা। কিন্তু তাঁর সমস্যা হল, তিনি বহিরাগত। দেবগৌড়ার ধর্মনিরপেক্ষ জনতা দল ছেড়ে মাত্র ছ’বছর আগে কংগ্রেসের যোগ দিয়েছেন। ফলে তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের কিছু নেতা-কর্মীর গোড়া থেকেই দূরত্ব রয়েছে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান,শেষ বিচারে সীড্ডারামাইয়ার পাল্লা ভারী। হাইকম্যান্ডের আশঙ্কা, মুখ্যমন্ত্রী না করলে সীড্ডারামাইয়া দলে ভাঙন ধরাতে পারেন।
হাইকম্যান্ডের তরফে বর্ষীয়ান নেতা তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি ও ক্রীড়ামন্ত্রী তথা রাহুল ঘনিষ্ঠ নেতা জীতেন্দ্র সিংহকে কর্নাটকে পর্যবেক্ষক হিসাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাল অথবা পরশু তাঁদের উপস্থিতিতে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক হবে। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবে কংগ্রেস। তবে এ ভাবে দলের মধ্যে রেষারেষি বন্ধ করতে রাহুল সফল হবেন কি না, তা সময়ই বলবে।
|
পুরনো খবর: ঠেকে পরস্পরের কদর মালুম বিজেপি-ইয়েদুরাপ্পার |
|
|
|
|
|