|
|
|
|
মনমোহনের পাশেই দল |
পদত্যাগের পরে মুখ খুলে অস্বস্তি বাড়ালেন দুই মন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
চাপের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন বটে। কিন্তু বিদায়লগ্নেও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের অস্বস্তি বাড়িয়েই গেলেন সদ্য প্রাক্তন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
গত কাল প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফাপত্র দিয়ে সেই চিঠি সংবাদমাধ্যমে ফাঁসও করে দেন রেলমন্ত্রী পবন কুমার বনশল। সেই চিঠিতে পবন প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, “আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম, আমাকে অব্যাহতি দিন।” পরে ঘরোয়া মহলে পবন বলেন, ঘুষ-কাণ্ড ফাঁস হওয়ার পরেই তিনি ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীই সে দিন তাঁকে ইস্তফা দিতে মানা করেছিলেন। পবনকে নিয়ে অস্বস্তি কাটার আগেই আজ রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করেন আর এক সদ্য প্রাক্তন। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার। তিনি বলেন, “বিবেকের কাছে আমি পরিষ্কার। ইস্তফা দিয়েছি মানে এই নয় যে, কোনও অন্যায় করেছি। রাজনৈতিক কারণেই আমাকে ইস্তফা দিতে হয়েছে।”
রাজনীতির কারবারিদের মতে, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যথেষ্টই অস্বস্তিকর। কারণ, পবন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীই শুরুতে তাঁকে ইস্তফা দিতে বারণ করেছিলেন। আর অশ্বিনী বুঝিয়েছেন, রাজনৈতিক চাপেই তাঁকে সরাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন অশ্বিনীকে প্রশ্ন করা হয়, ইস্তফা দিতে বলে তাঁকে কি বলির পাঁঠা করা হল? সদ্যপ্রাক্তন আইনমন্ত্রীর জবাব ছিল, “মানুষই এর বিচার করবেন।” সূত্রের খবর, অশ্বিনী কিন্তু চাপের মুখেও ইস্তফা দিতে নারাজ ছিলেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি যুক্তি দেন যে, যে হেতু তিনি কোনও রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তাই তাঁর ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে তাঁকে সরতে হলেও নিজের অসন্তোষ গোপন রাখেননি অশ্বিনী। মজার বিষয় হল, অশ্বিনী ও পবন দু’জনেই পঞ্জাবের নেতা। এঁদের আইন ও রেল মন্ত্রী করার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন মনমোহন। অশ্বিনী আবার দিল্লির রাজনীতিতে মনমোহনের ‘কিচেন ক্যাবিনেটের’ সদস্য বলেও পরিচিত।
বস্তুত আইনমন্ত্রীর পদ থেকে অশ্বিনীকে সরানোর পরে প্রধানমন্ত্রীর সমস্যা বেড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, কয়লা খনি বণ্টন কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআইয়ের খসড়া রিপোর্ট আইনমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের দুই কর্তাকেও দেখানো হয়েছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া হলফনামায় জানিয়েছে সিবিআই। ফলে অশ্বিনীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর পর প্রধানমন্ত্রীর সামনে আর কোনও ঢাল রইল না বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী আক্রমণ থেকে বাঁচাতে সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হবে। কারণ, ২০১৪ পর্যন্ত মনমোহন সিংহই প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন। তাই তাঁকে বাঁচানোর দায় কংগ্রেসেরও। বস্তুত অশ্বিনীকে আড়াল করার জন্য কংগ্রেসের কিছু নেতা ঘরোয়া আলোচনায় মনমোহনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশও করেন। তবে একই সঙ্গে তাঁরা এটাও বলছেন যে, বিপত্তির মূল সদ্যপ্রাক্তন আইনমন্ত্রী নিজেই। এই নেতাদের মতে, সিবিআইয়ের খসড়া রিপোর্ট সব সরকারের আমলেই এ ভাবে দেখা হয়েছে। কিন্তু অশ্বিনী তা নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। আর সমস্যা হয়েছে তাতেই। এই অবস্থায় কংগ্রেসের একাংশের তরফে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও হচ্ছে যে, অশ্বিনীকে ওই খসড়া রিপোর্ট দেখার নির্দেশ মনমোহন দেননি।
এই বিতর্কের মধ্যেও একটা বিষয়ে কিছুটা স্বস্তিতে কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, যে হেতু সংসদের অধিবেশন চলছে না এবং দুই মন্ত্রীই ইস্তফা দিয়েছেন, তাই বিতর্ক এ বার লঘু হতে শুরু করবে। তা ছাড়া সনিয়া গাঁধী তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে এ-ও পরামর্শ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন সরকারের বর্ষপূর্তির আগে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। যাতে তার মাধ্যমে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে গোটা দেশকে বার্তা দিতে পারেন তিনি। |
|
|
|
|
|