সারদা-কাণ্ডে নিজেকে কার্যত নির্দোষ বলে দাবি করে দেবযানী মুখোপাধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাকে নির্জলা সত্যি বলে মানতে রাজি নন তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা। বরং সুদীপ্ত সেনের ঘনিষ্ঠ অন্যান্য মহিলা কর্মচারীদের জেরা করে পুলিশ ইতিমধ্যেই জেনেছে, সারদার কর্মকাণ্ডের খুঁটিনাটি সুদীপ্তবাবু ছাড়া জানা রয়েছে কেবল দেবযানীরই।
এই কারণেই কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার পরেও সারদা মালিক কেবল দেবযানীকেই ডেকে পাঠিয়েছিলেন বলে পুলিশের ধারণা। দেবযানী গ্রেফতার হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সারদা সাম্রাজ্যের যা কিছু তথ্য মিলেছে তার অনেকটাই তাঁর কাছ থেকে, সাধারণ কর্মী হলে যা জানা সম্ভব ছিল না। পাশাপাশি পুলিশের অনুমান, সুদীপ্ত সেনের আরও কিছু গোপন সম্পত্তির হদিশ দেবযানীই দিতে পারেন। পুলিশের জাবি, সুদীপ্তবাবু জেরায় জানিয়েছেন, মিডিয়া ব্যবসা তিনি দেখতেন না। তাই কুণাল ঘোষকে এগজিকিটিভ ডিরেক্টর করেছিলেন। একই ভাবে সারদার টাকা তোলার কারবারে দেবযানীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই তাঁকে দু’নম্বর স্থানে (এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর) তুলে নিয়ে আসেন তিনি।
পুলিশ জানাচ্ছে, বিবৃতি দিয়ে এখন দায় এড়ানো কঠিন দেবযানীর পক্ষে। কারণ, লক্ষ লক্ষ আমানতকারীর সঞ্চয় লোপাটের ক্ষেত্রে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে তাঁরও দায় রয়েছে। পুলিশের দাবি, এর যথেষ্ট প্রমাণ ইতিমধ্যেই তাদের হাতে এসেছে। সারদা কর্ণধার টাকা তোলার কারবারে নামার আগে জমি কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। পরবর্তী কালেও এই জমি ব্যবসা তিনি নিজেই দেখতেন। জমি কেনার পর প্রতিটি দলিলের প্রতিলিপি আসত দেবযানীর কাছে। তিনিই সেগুলি রাখতেন। দেবযানী ভালই জানতেন, যে আমানতকারীদের টাকাতেই ওই সম্পত্তি কেনা হচ্ছে।
বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ বলেন, “সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠির ব্যাপারে আমরা যে অবস্থান নিয়েছিলাম দেবযানীর বিবৃতির ক্ষেত্রেও তাই হবে। উনি যা লিখেছেন, তা সঠিক কি না খতিয়ে দেখা হবে।” কিন্তু পুলিশি হেফাজতে থাকার সময় কী করে এই বিবৃতি দেওয়া দেবযানীর পক্ষে সম্ভব হল? অর্ণববাবুর ব্যাখ্যা, “বিবৃতিটি সম্ভবত আগেই লেখা হয়েছিল। ওঁর আইনজীবীরা জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে তা কাজে লাগিয়েছেন।”
বিবৃতিতে দেবযানী দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে সুদীপ্তবাবুর অন্য কোনও সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু সারদা কর্মীদের জেরা করে যে সব তথ্য মিলেছে, তা এই দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই দাবি পুলিশের। এই কর্মীরা অনেক সফরেই সুদীপ্ত-দেবযানীর সঙ্গী ছিলেন। পুলিশ আরও জেনেছে, দেবযানীর হাতেই ছিল প্রতিদিনের টাকা জমা-খরচের হিসাব। কোন শাখা থেকে কত টাকা আসছে, কোথায় কত টাকা রাখা হবে, তা তিনিই ঠিক করতেন। শাখাগুলিকে মাসের প্রথমে টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করে দিতেন দেবযানী। সারদার কর্মীরাই সে কথা পুলিশকে জানিয়েছে। ম্যাডাম এখন অন্য কথা বলতে শুরু করায় তাঁরাও বিস্মিত। |