সুদীপ্তকে নিয়েই এ বার তল্লাশিতে নামছে পুলিশ
নরোষের ভয়ে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে নিয়ে এত দিন তল্লাশি চালাতে দ্বিধায় ছিল পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় ফের ন’দিন নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পরে সেই কাজটাই এ বার সেরে নিতে চাইছেন তদন্তকারীরা। বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় ওই সংস্থার যত অফিস আছে, মূলত সেগুলিতেই তল্লাশি চালাব আমরা। সুদীপ্তকে নিয়ে গেলে অনেক গোপন তথ্য মিলতে পারে বলে আমাদের আশা।”
ইতিমধ্যে ওই সংস্থার অন্যতম অধিকর্তা দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে এক দফা তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, সে দিন অফিসের পাঁচ তলার একটি গোপন কুঠুরি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল মিলেছিল। দেবযানীই পুলিশকে তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই ফাইলগুলিতে জমি কেনাবেচার হিসেব-নিকেশ ছিল। সেখান থেকেই সুদীপ্ত সেন ও সারদার নামে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কেনা জমির পরিমাণ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাই।”
সুদীপ্ত নিজেও যে জমির বিষয়টি ভাল বুঝতেন, পুলিশও বুঝেছে সে কথা। তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ বলছেন, “অর্থ লগ্নি সংস্থা গড়ে মানি মার্কেটিংয়ের ব্যবসায় আসার আগে জমি কেনাবেচারই ব্যবসা করতেন সুদীপ্ত। এবং সেই জমির পিছনে লগ্নি করে তাতে আবাসন তৈরির নামে মোটা টাকা বাজার থেকে তুলেছিলেন তিনি। বিষ্ণুপুরের সারদা গার্ডেন তারই প্রমাণ।” এ থেকে পুলিশের অনুমান, বেশ কিছু স্থাবর সম্পত্তি আছে সুদীপ্তর। তারই খোঁজে আছেন তদন্তকারীরা।
যেটুকু জমির হদিস মিলেছে তার বর্তমান মূল্য জানতে রাজ্যের ভূমি সংস্কার দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ। শনিবার বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানান, বিষ্ণুপুরে সারদার হাতে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি আছে। তার বাজারদর বিঘাপিছু এক কোটি টাকা। সেই হিসেবে ওই জমির মোট মূল্য ৫০০ কোটি টাকার মতো। তবে, সারদার নামে থাকা সব জমিরই যে সরকার দখল নিতে পারবে, এমনটা মনে করছেন না তদন্তকারীরা। কারণ, বহু জমির দখলদারি সংক্রান্ত বিষয় আদালতে বিচারাধীন। সেই সমস্যার সমাধানেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি সংস্কার) নেতৃত্বে একটি দল তৈরি করেছে সরকার। জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “জমিগুলি কী অবস্থায় রয়েছে তার মূল্যায়নের জন্যই ওই দল গড়া হয়েছে।”
পুলিশ জেনেছে, ২০১০-এ সারদার মিডল্যান্ড পার্ক ও শেক্সপিয়র সরণির অফিসে দু’বার অভিযান চালিয়েছিল আয়কর দফতর। কিন্তু তার পরে আর কোনও দিন ওই অফিসে পা রাখেনি তারা। ব্যবসার স্বার্থে কোনও আয়কর অফিসারের সঙ্গে সুদীপ্তর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সুদীপ্ত তদন্তকারীদের বলেছেন, ক’বছর আগেও তাঁর অফিসে প্রতি দিন তিন কোটি টাকা জমা পড়ত। কিন্তু এই বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে তা তলানিতে ঠেকে। তাঁর ৮০-১০০ জন প্রধান এজেন্টের জন্যই তিনি বড় ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে পড়েন বলে সুদীপ্তর অভিযোগ।
সেই ক্ষতি সামাল দিতেই কলকাতা ছাড়ার আগে তাঁর নিউ টাউনের অফিসে বেশ কয়েক জন বড় এজেন্টের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন সুদীপ্ত। পুলিশ জেনেছে, এজেন্টদের তিনি বলেছিলেন, সংস্থা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই চেষ্টা করতে হবে, আমানতকারীরা যাতে আরও ছ’মাস টাকা রাখেন। তা হলেই সংস্থা পুরো টাকা ফেরত দিতে পারবে। কিন্তু খুব বেশি এজেন্ট আর ওই রাস্তায় হাঁটেননি বলেই পুলিশ জানাচ্ছে।
পুলিশকে সুদীপ্ত বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় কেবল বেতন খাতেই পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে গিয়েছিল। সেই দাবিতে কর্মীরা মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে সংস্থার পদস্থ কর্তাদের ঘেরাও করে রাখলে সুদীপ্ত কলকাতা ছাড়ার পরেও ১৫ এপ্রিল ঘেরাওকারীদের এক জনকে ফোন করে বিক্ষোভ গুটিয়ে নিতে বলেন। সারদা-মালিক পুলিশকে বলেছেন, দেশের অন্যত্র নতুন করে ব্যবসা শুরু করে ওই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার বাসনা ছিল তাঁর। কিন্তু তাঁর কথা কানে তোলেননি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
পুলিশ বলছে, জেরায় সুদীপ্ত আক্ষেপ করেছেন, ব্যবসা বেড়ে ওঠার কারণে বিজ্ঞাপন দিয়ে বেশ কিছু ‘শিক্ষিত’ ছেলেকে সারদায় চাকরি দিয়েছিলেন তিনি। এখন বিপদের দিনে তাঁরাই বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। পুলিশও জানিয়েছে, নানা জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জমি-বাড়ি ও টাকার হিসেব পেতে সারদা কর্মীদেরই একাংশ তদন্তকারীদের সাহায্য করছেন। সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার বারাসত থেকে ওই সংস্থার দু’টি গাড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার দিনভর জেরা চলেছে সুদীপ্তর। পুলিশ জানাচ্ছে, জেরায় সারদা মালিক বলেছেন, পন্জি স্কিমে বাজার থেকে টাকা তোলার ব্যবসায় তাঁর হাতেখড়ি শিবনারায়ণ দাস নামে এক ব্যক্তির কাছে। তাঁর পরামর্শেই তিনি অন্য সব ব্যবসায় গুরুত্ব কমিয়ে মানি মার্কেটিংয়ে মনোযোগ দেন। পুলিশ জেনেছে, শিবনারায়ণেরও অর্থ লগ্নি সংস্থা ছিল। ওই ব্যবসায় লাভের পরিমাণ দেখেই তিনি ২০০৮-এ কলকাতার শেক্সপিয়র সরণিতে অফিস খুলে পন্জি স্কিমে নেমে পড়েন। সারদা মালিক তদন্তকারীদের বলেছেন, আমানতকারীদের কাছ থেকে তোলা টাকা সেই সময় বাক্সে ভরে ওই অফিসে নিয়ে আসা হত। শিবনারায়ণ বাক্সপিছু পাঁচ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন সুদীপ্তর কাছে। তাতে তিনি রাজি না হওয়ায় পরের বছরেই দু’জনে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে সারদা মালিক পুলিশকে জানিয়েছেন।
ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত ও ডুবে যাওয়ার অনেক কথা সুদীপ্ত পুলিশকে জানালেও নিজের পরিবার সম্পর্কে একটা কথাও বলেননি তিনি। কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, “তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেই তিনি হাতজোড় করে অনুরোধ করছেন, ‘পরিবার নিয়ে কোনও প্রশ্ন করে আমাকে বিব্রত করবেন না।’
এমনকী, তাঁর ছোটবেলা কোথায় কী ভাবে কেটেছে, সে সব নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন সুদীপ্ত।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.