পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে দু’টি অটো। কিন্তু তাদের নম্বর খতিয়ে দেখে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার জোগাড় পুলিশের। কারণ, ওই দু’টো অটোর নম্বরে ফারাকটা শুধুই ভাষার। সম্প্রতি মুরারিপুকুর থেকে বেআইনি অটো পাকড়াও করতে গিয়েই এমন তথ্য উঠে এসেছে। কী রকম?
পুলিশ সূত্রের খবর, মুরারিপুকুর এলাকার গলিঘুঁজি দিয়ে বেশ কিছু অটোর যাতায়াতের খবর মিলেছিল। এর পরেই তা পাকড়াও করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন থানার অফিসারেরা। ওই এলাকায় বেশ কয়েক জন সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়। তাঁরা নজরদারি চালাতে গিয়ে দেখেন, শুধু বেআইনি রুটেই নয়, রীতিমতো নম্বর জাল করে চলছে অটোগুলি। এর পরেই অভিযান চালিয়ে পাঁচটি অটোকে পাকড়াও করা হয়। এক পুলিশকর্তা জানান, আটক করা পাঁচটি অটোর মধ্যে চারটির নম্বরই জাল। সেগুলির মধ্যে ফারাকটা শুধুই ভাষার। অর্থাৎ, একটি অটোয় বাংলায় লেখা রয়েছে ডব্লিউ বি ২৫ সি ৩৩৩৫। তার পাশের অটোটিতেও ওই নম্বরই লেখা! শুধু ভাষাটা ইংরেজি। জালিয়াতির গল্পটা এখানেই শেষ হচ্ছে না। পুলিশ অফিসারেরা জানান, আটক করার পরে ওই অটোগুলির কোনও কাগজপত্র মেলেনি। ফরেন্সিক পরীক্ষা করিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই চারটি অটোর ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বরগুলিও জাল। |
তবে এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, অটোগুলি রাতে বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসা হয়েছে। চালকদের খোঁজ চলছে। আটক করার পর থেকে অটোগুলির কোনও দাবিদারেরও খোঁজ মেলেনি। ট্রাফিক বিভাগের অফিসারেরা বলছেন, নম্বরের এমন কায়দার জালিয়াতি সাম্প্রতিক কালে খুব একটা ধরা পড়েনি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। ট্রাফিক বিভাগের অফিসারেরা মনে করছেন, উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ শহরতলির গলিঘুঁজিতে নজরদারি চালালে নম্বর জালিয়াতির আরও অনেক ঘটনা উঠে আসবে। তা হলে সেগুলি ধরা হচ্ছে না কেন? পুলিশ সূত্রের খবর, এই অটোগুলি বেশির ভাগ সময়েই গলিঘুঁজি দিয়ে যাতায়াত করে। বড় রাস্তায় নজরদারি থাকলেও গলিতে তেমন পুলিশ থাকে না। অনেক সময়েই এই ধরনের অটো ধরতে ‘সোর্স’ নেটওয়ার্কের উপরে নির্ভর করতে হয়। যেমনটা হয়েছে মানিকতলা থানার ক্ষেত্রে। তবে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “এই ধরনের অটো ধরতে নিয়মিত তল্লাশি-অভিযান চালানো হয়। ধরা পড়লে ব্যবস্থাও নিই আমরা।” কিন্তু তা হলে এ ভাবে অটো চলছে কী করে?
পুলিশ এবং পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, মহানগর ও তার সংলগ্ন এলাকায় যে সব অটো চলে, তার অধিকাংশরই কাগজপত্র নেই। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও পরিস্থিতি তেমন বদলায়নি। অটো নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য না থাকার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের কর্তারা। লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট তথ্য না থাকার ফলেই এই ধরনের জালিয়াতি হচ্ছে। কারণ, কে কোনও নম্বর লাগাচ্ছে, তা দেখার মতো কেউ নেই। বালাই নেই কাগজপত্রেরও। তবে মানিকতলার ঘটনায় ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর কী ভাবে জাল হল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, এর আগে বেশ কয়েকটি ভুয়ো নম্বরপ্লেট লাগানো ট্যাক্সি ধরা পড়েছে। তবে সেই সংখ্যাটা সীমিত। এক ট্রাফিককর্তা মনে করেন, ভুয়ো নম্বর প্লেট লাগানো অটো ধরতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। |