বিজ্ঞান আর কলার দেওয়াল ভাঙবে প্রেসিডেন্সির পাঠ্যক্রম
ক বছর পড়াশোনা করে দু’টি সেমেস্টার পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কোনও ছাত্র বা ছাত্রী হয়তো রসায়নবিদ্যা পড়ছিলেন। কিন্তু এক বছর পরে তাঁর মনে হয়েছে, ইতিহাস পড়লেই ভাল হতো। এত দিন অবধি যা ব্যবস্থা ছিল, তাতে ওই ছাত্র বা ছাত্রীকে আবার নতুন করে প্রথম বর্ষ থেকে পড়াশোনা শুরু করতে হতো। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা তা-ও কলাবিভাগে পড়ার সুযোগ পেতেন। কলাবিভাগের পড়ুয়া বিজ্ঞানে ঘেঁষতে পারতেন না।
চিরাচরিত এই ব্যবস্থাকে এ বার আমূল বদলে দিতে চলেছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। সারা বিশ্বে আধুনিক পাঠ্যক্রমে যে ভাবে আন্তঃবিভাগীয় (ইন্টারডিসিপ্লিনারি) পড়াশোনার ওপরে জোর দেওয়া হচ্ছে, কলা ও বিজ্ঞানের মধ্যেকার পুরনো দেওয়াল ভেঙে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্রেসিডেন্সিতে বড়সড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হয়েছে।
আগামী জুলাইয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে যে নতুন ব্যবস্থা শুরু হচ্ছে, তাতে প্রথম বছরে দু’টো সেমেস্টার দেওয়ার পরেও চাইলে দ্বিতীয় বর্ষে অনার্সের বিষয় বদলাতে পারবেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এ জন্য ওই পড়ুয়ার বছর নষ্ট হবে না। আগের সেমেস্টারের পরীক্ষায় যে নম্বর পেয়েছেন, সেই নম্বরই নতুন বিষয়ের নম্বরের সঙ্গে যুক্ত হবে। নতুন যে বিষয়টি পড়ুয়া পড়বেন, তাঁর ডিগ্রিতে সেই বিষয়েরই উল্লেখ থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে। শনিবার প্রেসিডেন্সি কাউন্সিলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সেই সঙ্গে অনার্সের সঙ্গে দু’টি সহযোগী (পাস) বিষয় পড়ার পুরনো প্রথা ভেঙে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আদলে মোট ১০টি সাধারণপত্র (কমন পেপার) নিয়ে পড়াশোনার নিয়ম চালু হচ্ছে প্রেসিডেন্সিতে। বিভিন্ন বিষয়ের সম্মিলনে তৈরি হচ্ছে পেপারগুলি। যেমন, পলিটিক্যাল সোশিওলজি মিলিত ভাবে পড়াবেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের শিক্ষকরা। স্পেস, টাইম অ্যান্ড ইউনিভার্স পড়াবেন অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এবং ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষকরা। মেন্টর গ্রুপের সুপারিশ মেনে এই ভাবেই বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের প্রভেদ ঘুচে যাচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হচ্ছে এই আন্তঃবিভাগীয় পাঠ্যক্রম। পাঠ্যক্রম পুনর্বিন্যাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান সোমক রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটি গড়া হয়েছিল। পঠনপাঠনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন সেই কমিটিই সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশগুলিই শনিবারের বৈঠকে গৃহীত হয়েছে।
প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা কাউন্সিল-সদস্য সুগত বসু এ দিন জানান, ১০টি সাধারণপত্রের মধ্যে কিছু থাকবে আবশ্যিক, কিছু ঐচ্ছিক। ঐচ্ছিকের মধ্যে কলা বিভাগের কোনও বিষয়ে অনার্স নেওয়া পড়ুয়াকেও বিজ্ঞান-গণিত বিষয়ক অন্তত দু’টি পেপার পড়তে হবে। একই ভাবে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের পড়তে হবে অন্তত দু’টি কলা-সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক পেপার। পেপার বাছাইয়ের জন্যও ছাত্রছাত্রীদের বেশ কিছুটা সময় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সুগতবাবু। তিনি জানান, ভর্তি হওয়ার পরে দু’সপ্তাহ বিভিন্ন পেপারের ক্লাসে বসে সেখানকার পড়া শুনতে পারবেন পড়ুয়ারা। তার পরে তাঁরা নিজেদের পছন্দের পত্র বেছে নিতে পারবেন। সব সাধারণপত্রের পরীক্ষা সেমেস্টারের শেষে হবে না। কয়েকটির মূল্যায়ন হবে গোটা সেমেস্টার জুড়েই।
সুগতবাবু বলেন, “প্রথম বর্ষে অনার্সের পাশাপাশি ছ’টি সাধারণপত্র পড়বে ছাত্রছাত্রীরা। তাই অনেকগুলি বিষয় তারা জানার সুযোগ পাবে। তার পরে যদি কারও মনে হয় অনার্সের বিষয় বদলাবে, তা হলে সে সেটা করতেই পারে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এক বছর পরে অন্য বিষয়ে অনার্স পড়তে শুরু করলে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হবে না? তা ছাড়া, বিজ্ঞানের কোনও পড়ুয়ার আগ্রহ থাকলে তিনি কলা বিষয়ে অনার্স পড়তে পারেন। কিন্তু কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে উল্টোটা করা বেশ কঠিন। বিজ্ঞানের সূত্র, পরীক্ষাগারের কাজ ইত্যাদি জানা না থাকলে সমস্যা হবে। এ ব্যাপারে কী ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? প্রেসিডেন্সির উপাচার্য মালবিকা সরকার বলেন, “হাতেগোনা কিছু ছেলেমেয়েই এই সুযোগ নিতে চাইবে বলে মনে হয়। তা ছাড়া, পড়ুয়া যে বিষয়ে অনার্স পড়তে চায়, সেই বিভাগ নিজস্ব পদ্ধতিতে তাকে যাচাই করে তবেই অনার্স পড়ার সুযোগ দেবে। আশা করি, সমস্যা হবে না।” এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা হবে। প্রয়োজনে একসঙ্গে দু’টি বিষয়ে অনার্স পড়ার পদ্ধতি চালুর ব্যাপারেও কাউন্সিলের নীতিগত সম্মতি রয়েছে বলে এ দিন জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্সির পাঠ্যক্রমে এই সংস্কারকে স্বাগত জানাচ্ছেন শিক্ষাবিদদের বড় অংশই। অর্থনীতির অধ্যাপক অনুপ সিংহ বললেন, “সংবাদমাধ্যমে যতটা শুনলাম, তাতে মনে হচ্ছে, ওঁরা পড়ুয়াদের একটু বেশি স্বাধীনতা দিতে চাইছেন। এটা ভাল পদক্ষেপ।” ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের মতে, অনার্স বদলানোর জন্য এক বছর সময় দেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত। “আমেরিকার বহু বড় বিশ্ববিদ্যালয়েই এই সুযোগ থাকে।
তাতে অনেক ছাত্রছাত্রীই উপকৃত হন।” সার্বিক ভাবে প্রেসিডেন্সির সংস্কারকে এ দেশের নিরিখে সুচিন্তিত এবং বৈপ্লবিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন তিনি।
পাঠ্যক্রম ও পঠনপাঠন পদ্ধতির সংস্কারের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে গবেষণাধর্মী কাজের অভিজ্ঞতাও পাবেন প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা। স্নাতক স্তরের পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমেস্টারে থাকবে গবেষণাধর্মী কাজ। স্নাতকোত্তরে বেশ কিছু গবেষণার পাশাপাশি ছোটখাটো গবেষণাপত্রও তৈরি করতে হবে পড়ুয়াদের। গবেষণাপত্র লিখতে শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেকের সামনে কথা বলা, যে কোনও সমস্যা সমাধানের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। উপাচার্য জানান, তিন বছরের স্নাতক ও দু’বছরের স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট দশ সেমেস্টারের পাঠ্যক্রমে একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে। কিন্তু একে ঠিক ইন্টিগ্রেটেড পাঠ্যক্রম বলা যাবে না। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্সির সব ছেলেমেয়েই তো স্নাতকোত্তরে ভর্তির সুযোগ পাবে না। তাদের স্নাতক স্তরের নম্বর থেকে ভর্তি করা হবে।” তিনি জানান, দিল্লি, পুণে, বেঙ্গালুরু-সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্নাতকোত্তরে ভর্তির ইচ্ছা প্রকাশ করছেন ছাত্রছাত্রীরা। এ বছর তাই স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষার কেন্দ্র হবে দিল্লিতেও।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.