ধ্বংসস্তূপে ১৭ দিন
পরিবারের কথা মনে পড়ছিল, হাসপাতালে বললেন রেশমা
“স্বপ্নেও ভাবিনি, পৃথিবীর আলো আবার দেখতে পাবো,” হাসপাতালের বিছানা থেকেই সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এ কথা জানালেন রেশমা বেগম। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবেই কাল রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে জীবিত উদ্ধার হয়েছেন তিনি। টানা ২৪ ঘণ্টা সাভারের সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের কড়া নজরদারিতে থাকার পর অবশেষে শনিবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার অনুমতি পান রেশমা। খুলে বললেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কাটানো ১৭ দিনের অভিজ্ঞতার কথা।
রেশমা জানান, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল, সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ওই বহুতল যখন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে, আর পাঁচ জনের মতোই তখন ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনিও। ভয়, আতঙ্কে সবাই যখন ছুটোছুটি করছে চারধারে, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে রানা প্লাজার বেসমেন্টে এসে পৌঁছন রেশমা। সঙ্গে ছিলেন আরও দু’-তিন জন। কী ভাবে বেরিয়ে আসা যায় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে, সেই অদম্য ইচ্ছেই সম্পূর্ণ অচেনা মানুষগুলিকে করে তুলেছিল পরস্পরের খুব চেনা।
কিন্তু রেশমার মতো মনোবল হয়তো ছিল না তাঁদের। জল, ও শুকনো খাবারের কিছুটা জোগান থাকলেও অন্ধকার ওই বদ্ধ পরিবেশে, প্রচণ্ড গরমে ভয়, আতঙ্কে একে একে মারা যান তাঁরা সকলেই।
হাসপাতালে রেশমা। শনিবার। ছবি: এপি
চোখের সামনে নতুন বন্ধুদের মৃত্যুর ঘটনায় কিছুটা ভেঙে পড়লেও বেঁচে থাকার আশা ছাড়েননি রেশমা। “পরিবারের সকলের কথা খুব মনে পড়ছিল তখন,” এই কথা বলতে বলতেই চোখে জল গড়িয়ে এল তাঁর।
সাংবাদিকদের রেশমা বললেন, যখনই উদ্ধারকর্মীদের গলার আওয়াজ পেতেন তখনই চেঁচিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এ দিকে বন্ধুদের মৃতদেহে তখন পচন ধরতে শুরু করেছে। বেসমেন্টের নমাজ পড়ার ওই জায়গাটা তখন ক্রমশই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। যে করেই হোক ধ্বংসস্তূপ ঠেলে বেরিয়ে আসতে তখন বদ্ধপরিকর রেশমা। কেউ তাঁর আর্তি ঠিক শুনবেন এই আশায় গত তিন-চার দিন যাবৎ বেসমেন্টের দেওয়ালে স্টিলের পাইপের সাহায্যে জোড়ে জোড়ে আওয়াজও করছিলেন তিনি।
সেই শব্দই হয়তো কানে গিয়েছিল স্কুলপড়ুয়া এক স্বেচ্ছাসেবকের। বিন্দুমাত্র দেরি না করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত উদ্ধারকর্মীদের কাছে গিয়ে সে জানায়, নীচের তলায় কেউ আটকে রয়েছে। ওই ছেলেটির কথা মনে রেখেই বেসমেন্টের স্ল্যাবগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগে উদ্ধারকর্মীরা জানতে চান, “কেউ কি আছেন?” বেসমেন্টের কাছেই উদ্ধরকর্মীদের গলার আওয়াজ পেয়ে রেশমা বলতে থাকেন “আমাকে বাঁচান।” শেষমেশ অক্ষত অবস্থাতেই উদ্ধার হন রেশমা।
শনিবার বিকেলে সাভারের ওই সামরিক হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রেশমা এখন পুরোপুরি সুস্থ। হাসপাতালের উপসহকারী পরিচালক মেজর ফখরুল আলম জানিয়েছেন, “আজ সকাল থেকে স্বাভাবিক খাবার খেতে শুরু করেছেন রেশমা। তাঁর হার্ট ও কিডনি সচল রয়েছে। রক্তচাপও স্বাভাবিক। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরও কিছু দিন হাসপাতালেই থাকতে হবে তাঁকে।” এ দিন রেশমার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁর মা, বোন। সাংবাদিকদের তাঁরা জানান, “মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। উদ্ধারকর্মীদের ধন্যবাদ।” রেশমার খোঁজ নিতে গত কালের মতোই এ দিনও হাসপাতালে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেশমার সঙ্গে কথা হয় তাঁর। কাঁদতে কাঁদতেই প্রধানমন্ত্রীকে রেশমা জানান, “আমি ভাল আছি। আমার জন্য প্রার্থনা করুন।”
এ দিকে রানা প্লাজা ভেঙে পড়ার ঘটনায় আরও ৬০-৭০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০৫।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.