শিরোনামে এক বছর আঠারোর বঙ্গসন্তান। যাঁর বিরল কৃতিত্বে মুগ্ধ বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবড় বিজ্ঞানীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বলছে, গত এক শতকের মধ্যে এত কম বয়সে এই প্রথম কেউ স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেল। কলকাতার প্রাক্তন বাসিন্দা ঋতঙ্কর দাসকে দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই যে সম্প্রতি বার্কলের ‘ইউনিভার্সিটি মেডেলিস্ট’-এর সম্মান পেয়েছেন তিনি। তাঁর চোখে এখন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। তবে একা নয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় উৎসাহী মেধাবী দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ করে দিতেও সমান তৎপর
|
ঋতঙ্কর দাস |
তিনি।
আর তাই বোধহয় বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এবং কেমিক্যাল বায়োলজি মেজরের এই প্রতিভাবান ছাত্রটিতে মগ্ন তাঁর শিক্ষকেরা। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইজ কমিটিকে লেখা চিঠিতে ঋতঙ্করের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন ‘কলেজ অফ কেমিস্ট্রির’ স্নাতক স্তরের ডিন, প্রফেসর মারসিন মাজদা। কলেজ অফ কেমিস্ট্রির গত ৫৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কেউ ইউনিভার্সিটি মেডেলিস্ট হল।
তবে ঋতঙ্করের শিক্ষকরাই জানাচ্ছেন, এই পুরস্কার প্রত্যাশিতই। কেন? এক বার ঋতঙ্করের সাফল্যের খতিয়ানে চোখ বোলালেই মিলবে উত্তর। মাত্র তেরো বছর বয়স থেকে মিলওয়াউকি-র ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে গবেষণায় যোগ দেন ঋতঙ্কর। সেই শুরু। তার পর একাধিক সংস্থায় করেছেন গবেষণা। এমনকী গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন তিন মহাদেশ জুড়ে। পেয়েছেন সাফল্যের স্বীকৃতিও। সব মিলিয়ে দেশ বিদেশের ৪০টি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি।
লেখাপড়ার সঙ্গে সমান ভাবে চালিয়ে গিয়েছেন সামাজিক গঠনমূলক কাজও। তৈরি করেছেন ‘সি ইউর ফিউচর’ নামে সংস্থা। যার কাজ সমাজের পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি এবং গণিতের গবেষণায় উৎসাহিত করা। তবে বিজ্ঞানের এই কৃতী ছাত্রটির দ্বিতীয় ভালোবাসা কবিতা। এমনকী, কাব্যসাহিত্য পড়ানোরও নজির রয়েছে এই বঙ্গতরুণের ঝুলিতে।
ঋতঙ্করের নিজের মতে, সব সাফল্যের পিছনেই তাঁর বাবা-মা এবং শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম। আসলে, কলকাতা ছেড়ে যখন আমেরিকায় পাড়ি জমায় ঋতঙ্করের পরিবার, তখন তাঁর বয়স সাত। সেই কচি বয়সেই তাঁকে মাইলের পর মাইল পেরিয়ে যেতে হত স্কুলে। আর্থিক দুরবস্থা ছিল নিত্যসঙ্গী। আর সেই কঠিন দিনগুলিতে সমর্থন জুগিয়েছিল তার বাবা-মা আর শিক্ষকরাই। তাই বিরল সম্মান পেয়েও তাঁদের কথা ভুলতে পারেন না ঋতঙ্কর।
১৮ মে পুরস্কারটি হাতে পাবেন এই বঙ্গসন্তান। পরের লক্ষ্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা। এমআইটি থেকে পিএইডি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়াটাও শুধুই সময়ের অপেক্ষা। নিরন্তর এগিয়ে যাওয়াকেই যে ‘পাখির চোখ’ করেছেন এই বঙ্গসন্তান। |