|
|
|
|
হলদিয়া মেডিক্যাল |
এমসিআই কি কলেজ পরিদর্শনে
যায়, প্রশ্ন তুলেই বিঁধল হাইকোর্ট
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
|
|
কোনও মেডিক্যাল কলেজকে অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এমসিআই কতটা কী পরিদর্শন করে, তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। তাদের প্রশ্ন, এমসিআইয়ের পরিদর্শকেরা আদৌ মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে যান, নাকি তাঁরা ঘরে বসেই রিপোর্ট লিখে দেন?
শুক্রবার হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি মিশ্র এমসিআইয়ের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, এমসিআই-প্রতিনিধিরা কখনও হলদিয়ার ওই মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করেছেন কি না। এমসিআইয়ের আইনজীবী অভিযোগ করেন, পরিদর্শনের সময় কলেজ-কর্তৃপক্ষ অনেক কিছুই দেখান না।
প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “একটা মেডিক্যাল কলেজে দেখানোর কী আছে? পরিদর্শকেরা কলেজে ঘুরলেই দেখতে পাবেন, সেখানে গবেষণাগার আছে কি না, অপারেশন থিয়েটার রয়েছে কি না, ঘরবাড়ি বা যন্ত্রপাতি আছে কি না। ও-সব তো আর লুকিয়ে রাখা যায় না!” এর পরেই এমসিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “পরিদর্শকেরা পরিদর্শনে যান, নাকি ঘরে বসেই রিপোর্ট লিখে দেন?” ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এমসিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “মেডিক্যাল পাঠ্যক্রম পাঁচ বছরের। যাঁরা ভর্তি হলেন, তাঁরা পাঁচ বছর ধরে পড়বেন। এমসিআই-কর্তৃপক্ষ কি এটাও জানেন না?” প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, মেডিক্যাল কলেজ কি কেউ এক বছরের জন্য তৈরি করে! এমসিআইয়ের কার্যকলাপ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই।
বিচারপতি বাগচী বলেন, যদি ছোটখাটো ত্রুটি থেকেও থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে দিলে কলেজ-কর্তৃপক্ষ ঠিক করে নিতে পারেন। হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের অন্যতম আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, এমসিআই যে-সব পরামর্শ দিয়েছিল, কলেজ-কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেনে নিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ওই কলেজ পরিদর্শন করা হয়নি।
এমসিআই কবে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে যাবে এবং কবে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট দেবে, তা শুক্রবারেই হাইকোর্টে জানাতে বলেছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু এমসিআইয়ের আইনজীবী এ দিন সে-কথা আদালতে জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে এমসিআইয়ের কাছ থেকে কোনও নির্দেশ তাঁর কাছে আসেনি। তাই তিনি কিছু জানাতে পারছেন না। এই জবাব শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি এমসিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন, “মন্টেসরি স্কুল আর মেডিক্যাল কলেজের তফাত কী, সেটা আপনি বোঝেন?” তার পরেই প্রধান বিচারপতি জানান, তিনি এমসিআইয়ের কোনও অজুহাত বা যুক্তি শুনতে চান না। কবে হলদিয়া মেডিক্যাল পরিদর্শন হবে এবং কবে ওই কলেজকে অনুমোদন দেওয়া হবে, তা অবিলম্বে জানাতে হবে হাইকোর্টে। ১৬ মে তিনি চূড়ান্ত রায় দেবেন।
হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হল কেন? রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূল সরকার হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করে। তার পরে প্রথমে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে এমসিআইও ওই কলেজের অনুমোদন বাতিল করে। অথৈ জলে পড়েন প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা। কলেজ-কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকার, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ও এমসিআইয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। রাজ্য সরকার, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমসিআইয়ের যোগসাজশে পর্যায়ক্রমে কলেজের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে ওই তিন সংস্থার সব নির্দেশ খারিজ করে দেন বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত। তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল, পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকের প্রচণ্ড অভাব। এই পরিস্থিতিতে একটি চালু মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার বিলাসিতা সাজে না। হলদিয়ার ওই মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রতি বছর ২০০ জন চিকিৎসক পাবে রাজ্য। তাই কোনও মতেই তাদের অনুমোদন বাতিল করা বরদাস্ত করা যায় না।
বিচারপতি গুপ্তের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে এমসিআই। এ দিন তারই শুনানি ছিল। কলেজ-কর্তৃপক্ষের হয়ে বিকাশবাবু ছাড়াও সমরাদিত্য পাল এবং এস কে কপূর সওয়াল করেন। |
|
|
|
|
|