|
|
|
|
নেই বৃষ্টির জন্য দায়ী তাপমাত্রার ভারসাম্যের অভাবই |
কুন্তক চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
বায়ুমণ্ডলের দুই স্তরে তাপমাত্রার ফারাক না থাকাটাই কাল হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের!
বৈশাখের শেষে মিলছে না তীব্র রোদের দহন। বরং প্যাচপ্যাচে গরমে নাজেহাল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দারা। ভরদুপুরে বাইরে বেরোলেই জামা ঘামে ভিজে যাচ্ছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই কাহিল হয়ে পড়ছেন মানুষ। চলতে ফিরতে বার বার গলা ভিজিয়ে নিতে হচ্ছে। রাতে ফ্যান চালিয়েও মিলছে না আরাম। অফিসপাড়া বা ফেসবুক আলোচনা চলছে শুধুই বৃষ্টি নিয়ে। কবে মিলবে স্বস্তির বর্ষণ, তারই হা-হুতাশ মুখে মুখে।
সেই হা-হুতাশে বৃষ্টির জল ঢালার তেমন আশা দিতে পারছেন না আবহবিদেরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ অবশ্য বলছেন, “বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।” রবিবার নাগাদ কলকাতায় হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে বলে মত আবহবিদদের।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে, ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প বয়ে আসছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আকাশে। তা ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি হবে এবং তার থেকেই বৃষ্টি হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। যদিও আবহবিদদের একাংশ বলছেন, মেঘ তো গত কয়েক দিন ধরেই তৈরি হচ্ছে। বিকেলের দিকে আকাশে মেঘ দেখে বৃষ্টির আশাও জেগেছিল মানুষের মনে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। |
 |
গরম থেকে বাঁচতে। রামপুরহাটে। —নিজস্ব চিত্র |
কেন? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বায়ুমণ্ডলের নীচে ও উপরের স্তরে তাপমাত্রার যথেষ্ট হেরফের না হওয়ার ফলেই মেঘ থেকে বৃষ্টি হতে পারেনি। এক আবহবিদ বলছেন, “বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তর গরম এবং উপরের স্তর যথেষ্ট ঠান্ডা না হলে মেঘ ঘনীভূত হতে পারে না। আকাশে সব সময় হাল্কা মেঘ থাকায় গত কয়েক দিন ধরে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছিল। ফলে জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হতে পারেনি। দেখা মেলেনি বৃষ্টিরও।”
এই ভারসাম্যের অভাবেই অস্বস্তিকর গরমের হাতে পড়ছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশ। আবহবিদদের ব্যাখ্যা, নিম্নচাপ অক্ষরেখার ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢোকার ফলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণত, জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ এবং তা থেকে বৃষ্টি হলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ফের কমে যায়। ফলে কমে যায় আদ্রর্তাও। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে সে ভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় প্যাচপ্যাচে গরম সইতে হচ্ছে। দিন কয়েকের মধ্যে এই পরিস্থিতির বদল ঘটতে পারে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন।
আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, এ বার গরমের চরিত্রে একটা বদল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি মরসুমে এপ্রিলের গোড়ায় এক বার তাপপ্রবাহের দাপট দেখিয়েও ফের গুটিয়ে গিয়েছিল গরম। বদলে হাজির হয়েছিল ছদ্ম বসন্ত। সেই ছদ্মবেশ থেকে বেরিয়ে এসেও পুরোপুরি নিজের ছন্দে ফিরতে পারেনি সে।
মৌসম ভবনের এক আবহবিদের ব্যাখ্যা, সমুদ্র থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প পরিমণ্ডলে ঢোকার ফলে গ্রীষ্মকালে উপকূলীয় এলাকায় এমন আর্দ্রতাজনিত পরিস্থিতি খুব অস্বাভাবিক নয়। সাগরের কাছাকাছি হওয়ার ফলে কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গে প্যাচপ্যাচে গরম বেশি মালুম হচ্ছে বলে ওই আবহবিদের দাবি।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এই মাত্রাতিরিক্ত ঘাম শরীরের ক্ষতি করতে পারে। কারণ, এতে যেমন শরীর থেকে অতিরিক্ত নুন-জল বেরিয়ে যায়, তেমনই পরিষ্কার না থাকলে ত্বকের রোগও দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, অসুস্থতা এড়াতে নুন-চিনির জল খান। দিনে অন্তত দু’বার স্নান করারও পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। |
|
|
 |
|
|