|
|
|
|
উদাসীন রাজ্য |
চাকরিপ্রার্থীদের স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি রাজভবনে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাবা-মা নেই। গ্লুকোমায় দু’টো চোখই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। ছোট একটা পানের দোকান থেকে যৎসামান্য রোজগার। বীরভূমের সন্দীপ চক্রবর্তী শুক্রবার রাজভবনে গিয়ে জমা দিয়ে এলেন নিজের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনপত্র!
সন্দীপ একা নন। তাঁর মতোই ৩৯০ জনের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনপত্র এ দিন জমা পড়েছে রাজভবনে। চাকরির পরীক্ষায় পাশ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) প্যানেলে নাম উঠেছিল এঁদের। বর্তমান রাজ্য সরকার তাদের দু’বছরের জমানায় এঁদের কাউকে নিয়োগ করেনি। প্যানেলভুক্তদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁদের অবিলম্বে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসনিক আদালত স্যাট (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল)। তার পরেও কয়েক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। চাকরির ডাক আর আসেনি। হতাশায় সন্দীপ, অভিজিৎ কোলে, তীর্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু দাস, গণেশ মণ্ডল, অরূপ দেবরা অগত্যা স্বেছামৃত্যুর আর্জি নিয়ে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের দ্বারস্থ হয়েছেন। রাজ্যের সাম্প্রতিক কালের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন! |
|
অধিকার রক্ষা মঞ্চের ছয় প্রতিনিধি। রাজভবনের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক |
স্বাস্থ্য-সহ কয়েকটি সরকারি দফতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের জন্য পিএসসি-র পরীক্ষা হয়েছিল বাম আমলে। তার পরে বিধানসভার নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তাঁদের নিয়োগের দায়িত্ব বর্তেছিল নতুন সরকারের উপরে। পিএসসি নামের প্যানেল পাঠিয়েছিল তাদের কাছেই। নিয়োগ হচ্ছে না দেখে পিএসসি-র প্যানেলভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা ‘অধিকার মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। কলকাতার রাস্তায় অবস্থান করেছেন, প্রতীকী অনশন করেছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন ইতিমধ্যে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছেন। স্যাটের রায়ের পরেও রাজ্য সরকারের টনক নড়ছে না দেখে বাকিদেরও এখন সেই পথে হাঁটতে হল বলে সন্দীপ, তীর্থ, অভিজিতেরা জানাচ্ছেন। পিএসসি-র প্যানেলভুক্তদের নিয়োগ করা হবে বলে বেশ কয়েক মাস আগে বিধানসভায় প্রশ্নের জবাবে আশ্বাস দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এখন চাকরিপ্রার্থীরা স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনে চলে যাওয়ার পরে চেষ্টা করেও অমিতবাবুর বক্তব্য জানা যায়নি। এসএমএসেও সাড়া মেলেনি।
ভারত সভা হলে এ দিন সভা করে ‘অধিকার মঞ্চ’ স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনকারীর তালিকা তৈরি করে। তারা ঘোষণা করেছে, প্রশাসনের অনুমতির জন্য ২০ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। প্রশাসন জবাব না-দিলে তার পরে তারা ‘মহাকরণ অভিযান’ করবে। ভারত সভা হল থেকে ৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের ওএসডি-র হাতে আবেদনপত্রগুলি তুলে দিয়ে এসেছে। রাজভবন থেকে ফিরে তীর্থ বলেন, “সাংবিধানিক প্রধানের দফতর থেকে আমাদের অনুরোধ করা হয়েছে এই পথ বেছে না নিতে। রাজ্যপাল তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে যা করার করবেন বলে ওএসডি আশ্বাস দিয়েছেন।” ‘অধিকার মঞ্চে’র আন্দোলনে সাহায্য করে আসছে ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগ।
কিন্তু স্বেচ্ছামৃত্যুর প্ররোচণাও তো অন্যায়? যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরীর বক্তব্য, “লড়াই করেই অধিকার আদায় করতে হয়। আমরা চাই, পিএসসি-র প্যানেলভুক্তরাও লড়াই চালিয়ে যান। মৃত্যু কোনও সমাধান নয়। রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, তিনি সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারকে জানান। কারণ এখানে কোনও সরকার নয়, সার্কাস চলছে!” |
|
|
|
|
|